এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : দেশে ই-পাসপোর্টের নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বড় ধরনের প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আনছে সরকার। পাসপোর্ট ইস্যু বা রিনিউ প্রক্রিয়ায় আর পুলিশি ভেরিফিকেশন (যাচাই) প্রয়োজন হবে না। এর বদলে আবেদনকারীর এনআইডিতে সংরক্ষিত বায়োমেট্রিক তথ্য— বিশেষ করে আঙুলের ছাপ ও ছবির মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় পরিচয় যাচাই করা হবে।
সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে দ্রুত এই পদ্ধতির বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মূলত ভুয়া পাসপোর্ট তৈরি ঠেকাতে এ পদ্ধতির দিকে হাঁটছে সরকার।
যেভাবে বদলে যাচ্ছে পাসপোর্ট যাচাই প্রক্রিয়া
* ই-পাসপোর্টের এনরোলমেন্ট সেন্টারে আবেদনকারীর আঙুলের ছাপ নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা এনআইডির আঙুলের ছাপের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে।
* এনআইডিতে থাকা ছবির সঙ্গে মুখাবয়ব শনাক্তকরণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ‘ফেস ভেরিফিকেশন’ করা হবে।
* কোনো তথ্য না মিললে ‘রেড ফ্ল্যাগ’ হিসেবে চিহ্নিত করে ম্যানুয়াল যাচাইয়ে পাঠানো হবে।
* এতে জাল পরিচয়ে পাসপোর্ট নেওয়া এবং এক ব্যক্তি একাধিক নামে পাসপোর্ট তৈরির সুযোগ প্রায় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে।
কেন বন্ধ হলো পুলিশ ভেরিফিকেশন?
সরকারের পরিপত্র অনুযায়ী, অনলাইনে যাচাইকৃত এনআইডি বা জন্মসনদের তথ্যের ভিত্তিতে নতুন পাসপোর্ট ইস্যু করা হবে। ফলে স্থানীয়ভাবে পরিচয় যাচাইয়ের জন্য পুলিশের শারীরিক অনুসন্ধানের প্রয়োজন থাকবে না।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা জানান, এনআইডিতে আবেদনকালে পূর্ণাঙ্গ বায়োমেট্রিক যাচাই সম্পন্ন হয়, তাই পাসপোর্টে একই যাচাই পুনরায় করার যৌক্তিকতা নেই। এনআইডি ও পাসপোর্ট ডেটা সমন্বয় হলে অপরাধী শনাক্ত সহজ হবে এবং সরকারের ব্যয় কমবে।
নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা নিয়ে সতর্কতা
নাগরিক সংগঠনগুলো বলছে, বায়োমেট্রিক তথ্য অত্যন্ত সংবেদনশীল— তাই ডাটাবেইজ নিরাপত্তা, অপব্যবহার রোধ ও সীমিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে শক্তিশালী আইন ও প্রটোকল প্রয়োজন। তবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো জানিয়েছে, ডেটা শেয়ারিং হবে এনক্রিপশন প্রযুক্তির মাধ্যমে, কোনো তথ্য সংরক্ষণ করা হবে না।
শিশুদের ক্ষেত্রে কী হবে?
শিশুদের আঙুলের ছাপ সংরক্ষণ না করেই তাদের পরিচয় যাচাই করা হবে ডিজিটাল জন্মসনদের ১৩ বা ১৭ সংখ্যার ইউনিক নম্বর দিয়ে। এই অনলাইন যাচাই নিরাপদ পরিচয় নিশ্চিত করবে বলে জানায় মন্ত্রণালয়।
কবে থেকে চালু হতে পারে?
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রযুক্তিগত সংযোগ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। কয়েকটি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে পাইলট প্রকল্প চালুর প্রস্তাব রয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই ধাপে ধাপে নতুন বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন পদ্ধতি কার্যকর হতে পারে।
সরকারের মতে, স্বচ্ছ, দ্রুত ও নিরাপদ পাসপোর্ট ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক ভ্রমণে বাংলাদেশের গ্রহণযোগ্যতা ও আস্থা আরও বাড়াবে।