এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় আবারও ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ৩ দশমিক ৬ মাত্রার এ কম্পনের উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর ঘোড়াশাল। তাৎক্ষণিকভাবে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটের দিকে হালকা মাত্রার ভূমিকম্পে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় কম্পন অনুভূত হয়। কম্পনের উৎসস্থল ছিল ঘোড়াশাল অঞ্চল, যার মাত্রা রিখটার স্কেলে ৩.৬।
এর মাত্র ছয় দিন আগে, ২১ নভেম্বর ঘটে ৫.৫ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প, যা গত দুই দশকের মধ্যে অন্যতম বলেও উল্লেখ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লেমন্ট–ডোহের্টি আর্থ অবজারভেটরি। সেই কম্পনে রাজধানীর বহু ভবন ও স্থাপনায় ফাটল দেখা দেয়; ঢাকাসহ তিন জেলায় প্রাণহানি এবং শতাধিক মানুষ আহত হন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাম্প্রতিক ঘনঘন কম্পন রাজধানী অঞ্চলের ভূমিকম্পজনিত আংশিক দুর্বলতার ইঙ্গিত দেয়। ভূতাত্ত্বিকদের আশঙ্কা, ঢাকার অদূরে মধুপুর ফল্ট জোনে যদি ৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প সংঘটিত হয়, তবে রাজধানীর বিস্তীর্ণ এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। তবে নগরীর কিছু এলাকা তুলনামূলক কম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে বলেও জানান তারা।
সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে যেসব এলাকা
বিভিন্ন গবেষণা অনুযায়ী, ঢাকার ভূমিকম্পে ভয়াবহ ক্ষতির ঝুঁকিতে থাকা ১৫টি এলাকা হলো: সবুজবাগ, কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ, কাফরুল, ইব্রাহিমপুর, কল্যাণপুর, গাবতলী, উত্তরা, সূত্রাপুর, শ্যামপুর, মানিকদী, মোহাম্মদপুর, পল্লবী, খিলগাঁও, বাড্ডা
বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরান ঢাকার মাটি তুলনামূলক শক্ত হলেও সেখানে বিপদ। এখানে অনেক ভবনই অত্যন্ত পুরোনো এবং কাঠামোগতভাবে দুর্বল, ফলে বড় কম্পনে সেগুলো ভেঙে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুবাইয়াত কবীর জানান ঢাকা শহরের ভেতরে ৮–৯ মাত্রার ভূমিকম্প ঘটার মতো বড় ফল্টলাইন নেই। কিন্তু মাত্র ৬০ কিলোমিটার দূরে মধুপুর অঞ্চলে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পের জন্য যথেষ্ট সক্রিয় ফল্ট রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এ ধরনের কম্পন হলে ঢাকার নতুন ভরাট করা অঞ্চলে বিরাট বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। হতাহতের সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে এবং শহরের ভূপ্রকৃতিই বদলে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা’র সাধারণ সম্পাদক শরিফ জামিল মনে করেন, ঢাকার চারপাশের জলাভূমি রক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করা হলেও বাস্তবে সেই এলাকাগুলোই সবচেয়ে বেশি দখল ও ভরাটের শিকার। তার মতে, বড় ভূমিকম্প হলে সবচেয়ে ভয়াবহ ক্ষতি হবে ঠিক ওইসব এলাকায় যেখানে প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে হাজার হাজার স্থাপনা দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই সম্ভাব্য বিপর্যয়ের জন্য প্রকৃতির চেয়ে মানুষের অব্যবস্থাপনাই বেশি দায়ী হবে।