এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় নতুন প্রস্তাব দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। আমিরাত সরকার চায় লন্ডনের পথে দীর্ঘ বিমান যাত্রার ধকল কমাতে অসুস্থ খালেদা জিয়া যেন আবুধাবিতে যাত্রাবিরতি করেন। মাত্র চার ঘণ্টার ফ্লাইটে তাঁকে আবুধাবিতে নেওয়া সম্ভব। যা তাঁর বর্তমান শারীরিক অবস্থার জন্য তুলনামূলক নিরাপদ হবে।
আবুধাবিতে বিশ্বখ্যাত সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল আছে। সেখানে তাঁকে প্রয়োজনীয় বিশ্রামে রেখে এরপর যুক্তরাজ্য নেওয়ার সুযোগ থাকবে।
এদিকে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা গতকাল কিছুটা উন্নতির দিকে ছিল। তবে অত্যন্ত ধীরে সেটি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছে।
তাঁর চিকিৎসকরা বলছেন, শারীরিক অবস্থা এখনো স্থিতিশীল নয়। এ কারণে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে যেতে পারছে না মেডিকেল বোর্ড। তবে গতকাল তাঁর সিটি স্ক্যান সম্পন্ন হয়েছে এবং এর রিপোর্ট স্বাভাবিক এসেছে বলে মেডিকেল বোর্ড জানিয়েছে।
মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য জানান, বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি নির্ভর করছে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার ওপর। অর্থাৎ দীর্ঘ বিমান যাত্রার ধকল তিনি সইতে পারবেন কি না, তার ওপর। তবে তাঁকে লন্ডনে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত আছে।
দলের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বেগম খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থায় দীর্ঘ দূরত্বের ফ্লাইট তাঁর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তাঁর প্রাথমিক গন্তব্য সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) যেন হয়, সেই প্রস্তাব দিয়েছে সে দেশের সরকার। আরব আমিরাতের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী রিম বিনতে ইব্রাহিম আল হাশিমি তাঁর সরকারের পক্ষে এ সহযোগিতার প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। প্রতিমন্ত্রী রিম জানান, মাত্র চার ঘণ্টার ফ্লাইটে বেগম খালেদা জিয়াকে আবুধাবিতে নেওয়া সম্ভব।
যা তাঁর বর্তমান শারীরিক অবস্থার জন্য তুলনামূলক নিরাপদ হবে। আবুধাবিতে ‘ক্লেভেল্যান্ড ক্লিনিক’ নামের বিশ্বখ্যাত সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল আছে। সেখানে খালেদা জিয়াকে বিশ্রামে রেখে এরপর প্রয়োজনে যুক্তরাজ্য বা যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়ার সুযোগ থাকবে।
পাশাপাশি এই মেডিকেল ইভাকুয়েশনের জন্য আরব-আমিরাতের সরকার তাঁদের বৃহদাকারের বোয়িং ৭৪৭ বা সমমানের রাজকীয় বিমান পাঠাতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ ধরনের বিমানে ইন-ফ্লাইট আইসিইউ, লাইফ সাপোর্টসহ উন্নত চিকিৎসা সুবিধা রাখা যায়। যা গুরুতর রোগী পরিবহনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে স্থানান্তরের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ নির্ভর করছে খালেদা জিয়ার শারীরিক উন্নতি ও তাঁর চিকিৎসায় নিয়োজিত মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শের ওপর।
জানা যায়, বেগম খালেদা জিয়ার নানা শারীরিক জটিলতার মধ্যে ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদ্যন্ত্র ও ফুসফুসের সমস্যা ওঠানামা করছে। এর কিছু কিছু কখনো নিয়ন্ত্রণে থাকছে, আবার হঠাৎ করে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, কিডনির সমস্যার কারণে খালেদা জিয়ার শরীরে কমে যাওয়া হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বেড়েছে। কিডনির কার্যকারিতা সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে, ফুসফুসেরও উন্নতি আছে। তবে তিনি এখনো আশঙ্কা মুক্ত নন।
এভারকেয়ারে ফের ডা. জুবাইদা রহমান : রাজধানীর ধানমন্ডিতে মায়ের বাড়িতে রাতযাপন শেষে শাশুড়ি খালেদা জিয়াকে দেখতে গতকাল সকাল ১১টার দিকে বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে আসেন বড় পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন জানান, ডা. জুবাইদা রহমান শুক্রবার লন্ডন থেকে ঢাকায় এসে সরাসরি শাশুড়িকে দেখতে হাসপাতালে যান। এরপর থেকেই তিনি মায়ের বাড়ি ও হাসপাতালে যাওয়া-আসার মধ্যে রয়েছেন। রাতে তিনি মায়ের বাড়ি ধানমন্ডির মাহবুব ভবনে অবস্থান করে সিসিইউর চিকিৎসকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখেন।
গতকাল সকালে তিনি হাসপাতালে যান। চিকিৎসকদের মধ্যে সমন্বয়কারীর দায়িত্ব ছাড়াও ওই বোর্ডের একজন সদস্য হিসেবে রয়েছেন ডা. জুবাইদা রহমান।
গত ২৩ নভেম্বর রাতে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে বেগম খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অধীনে তাঁর চিকিৎসা চলছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে দোয়া মাহফিল ও নানান কর্মসূচি পালিত হয়েছে।