এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার ২০ ঘণ্টার মাথায় ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি দুর্বৃত্তের গুলিতে আহত হয়েছেন। শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট সড়কে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা ও সিসিটিভির ফুটেজ দেখা গেছে, দুপুরে হাদিসহ দুই জন একটি ব্যাটারিচালিত রিকশায় যাচ্ছিলেন; তখন মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে।
চিকিৎসকরা জানান, তার শারীরিক অবস্থা ‘অত্যন্ত সংকটাপন্ন’। তাকে লাইফ সাপোর্টে রেখে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে গুলি বের করা হয়। পরে সন্ধ্যায় পরিবারের সিদ্ধান্তে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে স্থানান্তর করা হয় এভারকেয়ার হাসপাতালে। তবে কী কারণে হাদিকে গুলি করা হয়েছে- তাৎক্ষণিকভাবে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজে যাকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়, তিনি সকাল থেকেই হাদির সঙ্গে নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নেন। আজ ওই এলাকায় নির্বাচনি প্রচার চালানোর ঘোষণা আগেই দিয়েছিলেন হাদি।’
ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, ‘কী কারণে, কারা তাকে গুলি করেছে- তা জানার চেষ্টা চলছে। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনাসহ বিভিন্ন উপায়ে অপরাধীদের শনাক্তে কাজ করছি।’
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে গুলির ঘটনাটি ঘটে। এরপর দ্রুত হাদিকে ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। তার বাম কানের পাশে একটি গুলি বিদ্ধ হয়েছিল। সেটি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বের করা হয়েছে।
গুলির ঘটনাস্থল ডিআর টাওয়ারের সামনে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের একপাশে রক্তের দাগ। জায়গাটি ঘিরে রেখেছে পুলিশ। র্যাবের একটি দলও সেখানে মোতায়েন ছিল। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইমসিন ইউনিট ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছে। ঘটনাস্থলে একটি গুলির খোসা পড়ে ছিল।
ডিআর টাওয়ারের নিরাপত্তাকর্মী লুৎফর রহমান বলেন, ‘একটা শব্দ পেয়ে আমি রাস্তায় যাই। তখন দেখি, রিকশায় একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে, তার মাথা থেকে রক্ত ঝরছে। রিকশায় তার সঙ্গে থাকা আরেকটি ছেলে তাকে ধরে রেখেছে। সেইসঙ্গে চিৎকার করছে। আর একটি মোটরসাইকেলে থাকা দুই আরোহী খুব দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে চলে যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরে জানতে পারি, হেলমেট পরা ওই দু’জনের একজনই গুলি ছুড়েছে। তারা কালভার্ট রোডের পানির ট্যাংকির (বিজয়নগর) দিকে যাচ্ছিল। একইদিকে যাচ্ছিল রিকশাটি।’
একই ভবনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য ইমরান হোসেন হৃদয় জানান, তাদের দায়িত্ব ভবনের সামনের অংশের একপাশে। তিনি দায়িত্ব পালনের সময় রিকশার চাকা ফেটে যাওয়ার মতো আওয়াজ পান। কী ঘটেছে- দেখার জন্য এগিয়ে গিয়ে রিকশায় একজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখেন। ‘বাঁচাও–বাঁচাও’ চিৎকার শুনতে পান। তখন আশপাশের লোকজন বলাবলি করছিল যে, গুলি করা হয়েছে। তবে তিনি নিজে গুলি ছুড়তে দেখেননি।
ডিআর টাওয়ারের উল্টো দিকে বাইতুস সালাম জামে মসজিদ। এই সড়কের বিভিন্ন স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। সেগুলোয় গুলির ঘটনার কিছু অংশ ধরা পড়েছে। একটি ফুটেজে দেখা যায়, একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় করে যাচ্ছিলেন হাদি। তখন রিকশাটির পিছু নেয় একটি মোটরসাইকেল। রিকশাটির ডান পাশ ঘেঁষে যাওয়ার সময় মোটরসাইকেলের পেছনে বসে থাকা ব্যক্তি হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এরপর মোটরসাইকেল আরোহীরা দ্রুত পালিয়ে যায়। দুই আরোহীর মাথায় ছিল হেলমেট।
মোটরসাইকেল চালানো ব্যক্তির পরনে ছিল জিন্স প্যান্ট এবং পেছনের আসনে বসা ব্যক্তির গায়ে ছিল কালো চাদর। গুলির শব্দ পেয়ে ডিআর টাওয়ার থেকে দুজন নিরাপত্তাকর্মীকে এগিয়ে যেতেও দেখা যায়।
আরেকটি ফুটেজে দেখা যায়, গুলির পরপরই একটি মোটরসাইকেল দ্রুত চলে যাচ্ছে। আশপাশের লোকজন আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি করছেন।
গুলিবিদ্ধ হওয়ার সময় হাদির পেছনের রিকশায় ছিলেন মো. রাফি। তিনি বলেন, ‘জুমার নামাজ শেষে আমরা হাইকোর্টের দিকে আসছিলাম। আমি ভাইয়ের পেছনের রিকশায় ছিলাম। বিজয়নগর আসতেই একটা মোটরসাইকেলে করে দু’জন এসে হাদি ভাইয়ের ওপর গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়।’