সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৫:৫৫:১৩

কঠিন পরীক্ষায় হোয়াটসঅ্যাপ

কঠিন পরীক্ষায় হোয়াটসঅ্যাপ

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : বিশ্বে হোয়াটসঅ্যাপের সবচেয়ে বড় বাজার হলো ভারত। কিন্তু এই দেশেই অ্যাপটি এখন এক কঠিন সময়ের মুখোমুখি। ভারত সরকার সম্প্রতি অ্যাপভিত্তিক যোগাযোগ সেবার ওপর নতুন কিছু নির্দেশনা জারি করেছে, যা হোয়াটসঅ্যাপের কার্যক্রমে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। এর ফলে সাধারণ ব্যবহারকারী এবং বিশেষ করে ছোট ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গত মাসের শেষে জারি হওয়া এই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজিং অ্যাকাউন্টকে সব সময় সক্রিয় সিম কার্ডের সঙ্গে যুক্ত রাখতে হবে।

এছাড়াও, ওয়েব ও ডেস্কটপ সংস্করণ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও কঠোরতা আরোপ করা হয়েছে। ব্যবহারকারীকে প্রতি ছয় ঘণ্টা পরপর লগআউট হতে হবে এবং পুনরায় ঢুকতে হলে কিউআর কোড স্ক্যান করে ডিভাইস যুক্ত করতে হবে।

সরকার জানিয়েছে, সাইবার জালিয়াতি ঠেকানোর জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালে ভারতে সাইবার প্রতারণায় প্রায় ২২৮ বিলিয়ন রুপি (প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা) ক্ষতি হয়েছিল।

টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য, সক্রিয় ও কেওয়াইসি-ভিত্তিক সিমের সঙ্গে অ্যাকাউন্ট যুক্ত থাকলে ফিশিং, ভুয়া বিনিয়োগ এবং ডিজিটাল গ্রেপ্তার কেলেঙ্কারির মতো প্রতারণা সহজে শনাক্ত করা যাবে।

তবে ডিজিটাল অধিকারকর্মী ও প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। তাদের মতে, এটি নিয়ন্ত্রণের সীমা ছাড়িয়ে গেছে এবং এর ফলে বৈধ ব্যবহারকারীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ভারতে হোয়াটসঅ্যাপ কেবল একটি যোগাযোগ অ্যাপ নয়, এটি দৈনন্দিন যোগাযোগের একটি অবকাঠামো এবং ছোট ব্যবসারও বড় ভরসা।

এই দেশে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫০ কোটিরও বেশি, যার মধ্যে ৯৪ শতাংশ প্রতিদিন অ্যাপটি ব্যবহার করেন। হোয়াটসঅ্যাপ বিজনেস ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রেও দৈনিক ব্যবহার ৬৭ শতাংশ। অনেক ছোট ব্যবসা একটি ফোনে সিম রেখে অন্য ডিভাইসে ওয়েব ভার্সন ব্যবহার করে অর্ডার নেওয়া বা গ্রাহক সাপোর্ট চালিয়ে থাকেন। নতুন নিয়মের কারণে সেই ব্যবস্থাই ভেঙে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এই কড়াকড়ি এমন এক সময়ে এলো, যখন ভারতে হোয়াটসঅ্যাপের প্রবৃদ্ধি ধীর হচ্ছে। নতুন ব্যবহারকারী কমছে এবং বিদ্যমান ব্যবহারকারী ধরে রাখাই এখন মূল লক্ষ্য।

তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে হোয়াটসঅ্যাপের মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারী বাড়লেও ডাউনলোড প্রায় ৫০ শতাংশ কমেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হোয়াটসঅ্যাপ বিজনেস অ্যাপই এখন প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি, যার ব্যবহার ২০২১ সালের তুলনায় ১৩০ শতাংশের বেশি বেড়েছে।

শিল্প সংগঠন ব্রডব্যান্ড ইন্ডিয়া ফোরাম সতর্ক করে বলেছে, এই নিয়ম বাস্তবায়ন প্রযুক্তিগতভাবে জটিল এবং এটি সাধারণ ব্যবহারকারীর ভোগান্তি বাড়াবে। 

নীতি বিশেষজ্ঞদের মতে, আইন তৈরি না করে কার্যনির্দেশনার মাধ্যমে এমন বড় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রশ্নবিদ্ধ এবং প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও আলোচনা করা হয়নি। এই পরিস্থিতিতে ভারতের বাজারে হোয়াটসঅ্যাপ এখন এক মোড়ের মুখে দাঁড়িয়ে, এবং এই নতুন নির্দেশনা অ্যাপটির ভবিষ্যৎ ব্যবহারে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে