বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৯:০৮:১৪

চিনি ও ভোজ্যতেল নিয়ে বড় সুখবর

চিনি ও ভোজ্যতেল নিয়ে বড় সুখবর

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ডলার সংকট ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে, একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে নিত্যপণ্যের দামও নিম্নমুখী। এই দুই ইতিবাচক প্রভাবের ফলে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এর মধ্যে চিনি ও ভোজ্যতেলের আমদানিতে সবচেয়ে বড় উল্লম্ফন দেখা গেছে।

দেশে পর্যাপ্ত উৎপাদন না থাকায় চিনি, পাম অয়েল, সয়াবিন তেল ও গমের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ব্যাপকভাবে আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) হিসাবে, দেশে বছরে প্রায় ২০ লাখ টন চিনির প্রয়োজন হয়, যার ৯৫ শতাংশেরও বেশি আসে আমদানির মাধ্যমে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মোট ৮.২৩ লাখ টন অপরিশোধিত চিনি আমদানি করেছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এই আমদানির পরিমাণ ছিল ৪.৪ লাখ টন। ফলে এক বছরে অপরিশোধিত চিনির আমদানি বেড়েছে ৮৭ শতাংশ।

মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার তাসলিম শাহরিয়ার জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম কমে যাওয়ায় এবং ডলার সংকট অনেকটাই কাটায় এখন ব্যাংকগুলো সহজেই এলসি খুলছে। ফলে চিনির আমদানি স্বাভাবিক ও সন্তোষজনক রয়েছে।

ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের কমোডিটিজ প্রাইস ডেটা অনুযায়ী, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম কমে কেজিপ্রতি ৩৬ সেন্টে নেমেছে, যা এক বছর আগে ছিল ৪৩ সেন্ট।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, ঢাকার বাজারে বর্তমানে চিনি কেজিপ্রতি ৯৫ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছরের তুলনায় ১৯ শতাংশ কম।

তাসলিম শাহরিয়ার আরও বলেন, 'এখন এলসি খোলায় আর তেমন কোনো বাধা নেই। বেশির ভাগ পণ্যের দাম কমলেও বায়োফুয়েল তৈরিতে ব্যবহারের কারণে সয়াবিন তেলের দাম এখনও তুলনামূলক বেশি।'

এদিকে, আরেকটি আমদানি-নির্ভর পণ্য পাম অয়েলের আমদানিও বেড়েছে। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে পাম অয়েলের আমদানি বছরে বছরে ৪০ শতাংশ বেড়ে ৭.৪৪ লাখ টনে পৌঁছেছে।

এর আগে এক অর্থবছরে সয়াবিন তেলের আমদানি ৪২ শতাংশ বেড়েছিল। তবে চলতি অর্থবছরে এসে এই তেলের আমদানি কিছুটা কমেছে।

বিটিটিসির তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে ভোজ্যতেলের চাহিদা প্রায় ২২ লাখ টন। তবে স্থানীয় উৎপাদকরা তেলবীজ প্রক্রিয়াজাতকরণে বেশি মনোযোগ দেওয়ায় তেলবীজ আমদানি বাড়ছে। এসব তেলবীজ থেকে একদিকে ভোজ্যতেল তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে পশুখাদ্যের জন্য সয়াবিন মিল ও সরিষার খৈলও উৎপাদন করা হচ্ছে।

২০২৪–২৫ অর্থবছরে স্থানীয় ক্রাশাররা প্রধানত সয়াবিনসহ মোট ২২.৭৯ লাখ টন তেলবীজ আমদানি করে, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১ শতাংশ বেশি। আর চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে তেলবীজ আমদানি বছরে বছরে ৫২ শতাংশ বেড়ে ৫ লাখ টনে পৌঁছেছে।

ব্যবসায়ীদের মতে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উন্নতি এবং দেশের ভেতরে চাহিদা বাড়ায় আমদানির পরিমাণও বেড়েছে।

দেশের বড় পণ্য আমদানিকারক ও প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান টিকে গ্রুপের গ্রুপ ডিরেক্টর মোহাম্মদ মোস্তফা হায়দার বলেন, গত এক বছরের বেশি সময় ধরে ডলার পরিস্থিতি ভালো থাকায় তারা কোনো বাধা ছাড়াই এলসি খুলতে পারছেন। একই সঙ্গে বাজারে চাহিদাও বেড়েছে বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে চাল, গম ও চিনিসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলার পরিমাণ বেড়েছে। একই সময়ে কাঁচা ভোজ্যতেল ও তেলবীজের মতো শিল্পকারখানার কাঁচামাল আমদানিও আগের চেয়ে বেশি হয়েছে।

মোস্তফা হায়দার জানান, ভোজ্যতেলের চাহিদা মোটামুটি একই রকম থাকলেও শিল্পকারখানা ও ঘরোয়া—দুই ক্ষেত্রেই গমের চাহিদা বেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, কারখানাগুলোতে গ্যাস সরবরাহ ভালো হওয়ায় উৎপাদন কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলছে। এতে শ্রমিকদের আয় বেড়েছে এবং তার প্রভাব খরচের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে।

গম আমদানিও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ২৯.৫৭ লাখ টন গম আমদানি হয়েছে। পুরো ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গম আমদানির পরিমাণ ছিল ৬২.৩৫ লাখ টন। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের অর্ধেক সময়েই প্রায় অর্ধেক গম আমদানি হয়ে গেছে।

সিটি গ্রুপের করপোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, রমজান মাসে চাহিদা বাড়লেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।

টিকে গ্রুপের পরিচালক মোস্তফা হায়দারের ধারণা, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতীয় নির্বাচনের আগে এবং ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝির পর শুরু হওয়া রমজানকে সামনে রেখে ভোক্তা চাহিদা আরও বাড়তে পারে।

তিনি বলেন, 'চাহিদা বাড়বে বলে আমরা মনে করছি, তবে বাস্তবে পরিস্থিতি কীভাবে গড়াবে, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।'

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে