এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : বাংলাদেশে জমির মালিকানা সঠিকভাবে প্রমাণ করা জমি কেনাবেচা ও আইনি জটিলতা এড়াতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জমির প্রকৃত মালিক নির্ধারণের জন্য সরকারি দলিল ও রেকর্ড থাকা অপরিহার্য।
ভূমি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জমির মালিকানা যাচাইয়ের মূল ভিত্তি হলো ‘চেইন অব টাইটেল’ বা মালিকানার ধারাবাহিকতা। অর্থাৎ, জমিটি এক মালিক থেকে অন্য মালিকের কাছে কীভাবে হস্তান্তর হয়েছে তার স্পষ্ট প্রমাণ থাকা জরুরি।
জমির মালিকানা যাচাইয়ের জন্য প্রথমেই খতিয়ানের ধারাবাহিকতা দেখা হয়। এখানে সিএস (C.S.), এসএ (S.A.), আরএস (R.S.) ও বিএস (B.S.) খতিয়ান পর্যালোচনা করা হয়, যা জমির ইতিহাস ও মালিকানার পরিবর্তন তুলে ধরে।
ক্রয়ের মাধ্যমে জমির মালিক হওয়া ব্যক্তিদের জন্য বায়া দলিল বা রেজিস্ট্রেশনকৃত ক্রয়চুক্তিপত্র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এর সঙ্গে স্ট্যাম্প ও রেজিস্ট্রেশন সনদ, নামজারি খতিয়ান এবং নামজারি ফি পরিশোধের রশিদ থাকা বাধ্যতামূলক।
অন্যদিকে, ওয়ারিশ সূত্রে জমির মালিকানা পেলে প্রয়োজন হয় ওয়ারিশান সনদ, পূর্ববর্তী মালিকের মৃত্যু সনদ ও পূর্বপুরুষদের নামে থাকা দলিল ও খতিয়ান।
মূল দলিলের পাশাপাশি কিছু সম্পূরক কাগজপত্র মালিকানা প্রমাণে সাহায্য করে, যেমন: হোল্ডিং ট্যাক্সের রসিদ, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির বিল এবং জমির ব্যবহার সংক্রান্ত তথ্য।
দলিলে উল্লেখিত জমির চারপাশের চৌহদ্দির বিবরণও জমির সঠিক অবস্থান ও সীমা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ভূমি সংক্রান্ত আইনজীবীরা জানাচ্ছেন, শুধুমাত্র দলিল থাকলেই জমির মালিকানা পুরোপুরি প্রমাণ হয় না। দলিলের পাশাপাশি সরকারি খতিয়ানে নাম থাকা এবং জমির বাস্তব দখল থাকা আবশ্যক।
তাদের মতে, দলিল, খতিয়ান ও দখল এই তিনটির সমন্বয়েই প্রকৃত মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়। এর কোনো একটি অনুপস্থিতি ভবিষ্যতে আইনি ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
জমি কেনার আগে বিশেষজ্ঞরা দলিল যাচাই, খতিয়ানের তথ্য মিলিয়ে দেখা, নামজারি নিশ্চিতকরণ ও সরেজমিন জমি পরিদর্শনের মতো ধাপ অনুসরণের পরামর্শ দেন।
আইনি জটিলতা এড়াতে অভিজ্ঞ আইনজ্ঞ বা ভূমি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ পথ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জমির মালিকানা প্রমাণে সরকারি দলিল, খতিয়ান, নামজারি এবং দখল সবার মিলিত সত্যতা যাচাই অপরিহার্য। সতর্কতা অবলম্বন করে আর অভিজ্ঞ পরামর্শ নিয়ে জমি ক্রয় করাই ভবিষ্যতে আইনি ঝুঁকি থেকে রক্ষা করবে।