এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : নির্বাচন বানচাল করতে ও সংবাদমাধ্যমের ওপর হামলার উসকানি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া কনটেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মেটাকে চিঠি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট হওয়া পর্যন্ত এসব কনটেন্টের ওপর বিশেষ নজরদারি রাখতেও মেটার প্রতি সরকার আহ্বান জানিয়েছে।
গতকাল শুক্রবার জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সির দেওয়া ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথে থাকা বাংলাদেশে মেটার প্ল্যাটফর্মগুলোকে সহিংসতা উসকে দিতে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা বাস্তব জীবনের সহিংসতায় রূপ নিচ্ছে। এর ফলে উত্তেজনা ভয়াবহভাবে বেড়েছে।
গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে আততায়ীর গুলিতে মাথায় গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক এবং ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র্য প্রার্থী শরীফ ওসমান বিন হাদি। সেখান থেকে গুরুতর অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও পরে এভারকেয়ারে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ১৫ ডিসেম্বর তাকে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সযোগে সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত পৌনে ১০টায় মারা যান হাদি।
হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে রাতেই প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছয়ানট ভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
মেটাকে দেওয়া চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তি ফেসবুকে প্রকাশ্যে ওসমান হাদির মৃত্যুকে সমর্থন জানিয়েছেন। অন্যরা গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতার আহ্বান জানিয়েছেন। এসব বক্তব্য ছড়ানোর পরপর প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এতে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর মারাত্মক হুমকি তৈরি হয়। সরকার ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ জানানো হলেও সহিংসতা উসকে দেওয়া অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় করতে মেটা সহযোগিতা করেনি বলেও চিঠিতে অভিযোগ করা হয়।
পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় কয়েকটি বিষয়ে মেটাকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে, ফেসবুকের মাধ্যমে উসকে দেওয়া সহিংসতার সঙ্গে নাগরিকদের জীবন, গণতান্ত্রিক অধিকার, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা এবং দেশের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা গভীরভাবে যুক্ত।
যেসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ–সংক্রান্ত কন্টেন্টের ক্ষেত্রে কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড আরো কঠোর, দ্রুত ও প্রেক্ষাপট সংবেদনশীলভাবে প্রয়োগ করা; বাংলা ভাষাভিত্তিক আধেয় মডারেশন করা, অনুভূতি বিশ্লেষণ ও প্রাসঙ্গিক পর্যালোচনা জোরদার করা এবং সহিংসতা, ভয়ভীতি প্রদর্শন বা সংগঠিত ক্ষতির আহ্বান জানানো আধেয়র বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
এদিকে সন্ত্রাস ও সহিংসতার আহ্বান সংবলিত যেকোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্টের ব্যাপারে সরাসরি রিপোর্ট করার আহ্বান জানিয়েছে সরকার।
জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি আজ শনিবার থেকে সরাসরি হোয়াটসঅ্যাপে এ রিপোর্ট গ্রহণ করবে বলেও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার দিবাগত রাতে নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এ কথা জানান প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, সন্ত্রাস ও সহিংসতার আহ্বান সংবলিত যেকোনো সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট আগামীকাল থেকে সরাসরি রিপোর্ট করুন।
whatsapp নাম্বার 01308332592. মেইল করুন এই ই-মেইলে [email protected]
তিনি লেখেন, জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি আগামীকাল থেকে সরাসরি হোয়াটসঅ্যাপে রিপোর্ট গ্রহণ করবে। জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ের পরে বিটিআরসির মাধ্যমে প্ল্যাটফরমগুলোতে রিপোর্ট করবে।