রবিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১২:৪০:০৫

আসছে নতুন বছরের শুরুতেই যে ৬ ধরনের দলিলে আর মিলবে না জমির মালিকানা!

আসছে নতুন বছরের শুরুতেই যে ৬ ধরনের দলিলে আর মিলবে না জমির মালিকানা!

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : আর মাত্র কিছুদিন পরেই শেষ হতে যাচ্ছে ২০২৫ সাল। আসছে নতুন বছর ২০২৬ শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই ভূমি ব্যবস্থাপনায় আসছে বড় পরিবর্তন। 

আগামী ১ জানুয়ারি ২০২৬ থেকে বাংলাদেশে ছয় ধরনের দলিলের ভিত্তিতে জমির মালিকানা আর বৈধ হিসেবে গণ্য হবে না। শুধু নতুন করে মালিকানা অর্জনই বন্ধ হচ্ছে না, বরং পূর্বে যারা এসব দলিলের মাধ্যমে মালিকানা দাবি করছিলেন, তাদের ক্ষেত্রেও সেই মালিকানা বাতিল হওয়ার পথ তৈরি হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূমি অপরাধ দমন ও ডিজিটাল অটোমেশন জোরদার করতেই সরকার এই কঠোর অবস্থান নিয়েছে।

ভুয়া দলিলের মাধ্যমে অর্জিত মালিকানা
দেশজুড়ে সক্রিয় বিভিন্ন প্রতারক চক্র দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া ভোটার আইডি, জাল কাগজপত্র ও অসাধু সিন্ডিকেটের সহায়তায় জমির মালিকানা হাতিয়ে নিচ্ছে। বিশেষ করে প্রবাসী বা দূরবর্তী এলাকায় কর্মরত মালিকদের জমিই ছিল তাদের প্রধান টার্গেট।

২০২৬ সাল থেকে ভুয়া দলিলের ভিত্তিতে করা সব মালিকানা বাতিলযোগ্য হবে। নতুন ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ আইনের আওতায় এসব জমি প্রকৃত মালিকের কাছে ফেরত দেওয়া হবে।

প্রকৃত বিক্রয়ের চেয়ে বেশি জমি রেজিস্ট্রি
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, ৩০ শতাংশ জমি বিক্রির চুক্তি হলেও রেজিস্ট্রেশনের সময় ৩৫ শতাংশ বা তার বেশি জমি দেখিয়ে দলিল করা হয়। এই ধরনের অতিরিক্ত জমির রেজিস্ট্রেশন এখন থেকে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে, এবং বাড়তি অংশ বাতিল করে প্রকৃত মালিককে ফেরত দেওয়া হবে।

শরিক বা ওয়ারিশ বঞ্চিত করে রেকর্ড
ভাই-বোন বা অন্যান্য ওয়ারিশকে ঠকিয়ে নিজের নামে বেশি জমি রেকর্ড করার প্রবণতা দীর্ঘদিনের। বিশেষ করে RS রেকর্ডের সময় এমন অনিয়ম ব্যাপকভাবে হয়েছে।

২০২৬ থেকে আদালতের মাধ্যমে প্রমাণিত হলে এ ধরনের রেকর্ড সম্পূর্ণ বাতিল হবে এবং বঞ্চিত ওয়ারিশরা তাদের অংশ ফিরে পাবেন।

খাস জমির দলিল
খাস জমি সরকার কর্তৃক সাধারণত ৯৯ বছরের জন্য বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। কিন্তু অনেকেই এসব জমি নিজের সম্পত্তি মনে করে বিক্রি করে দেন। আইন অনুযায়ী, খাস জমি কেনাবেচা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ফলে খাস জমির ওপর ভিত্তি করে করা সব দলিল কার্যত বাতিল বলে বিবেচিত হবে এবং ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই আইনি ঝুঁকিতে পড়বেন।

অর্পিত (পরিত্যক্ত) সম্পত্তির দলিল
দেশভাগ ও পরবর্তী সময়ে দেশ ছেড়ে যাওয়া সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পরিত্যক্ত সম্পত্তি নিয়ে সবচেয়ে বেশি জালিয়াতি হয়েছে। ২০২৬ সাল থেকে ভুয়া দলিল দেখিয়ে অর্পিত সম্পত্তির মালিকানা দাবি করা যাবে না। প্রকৃত মালিক বা তাদের উত্তরাধিকারীরা ফিরে এলে সরকারিভাবে তাদের সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিজের অংশের চেয়ে বেশি পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি
ওয়ারিশান সম্পত্তিতে কেউ নিজের অংশের চেয়ে বেশি জমি বিক্রি করলে সেই দলিল কখনোই বৈধ মালিকানা তৈরি করে না। আইন অনুযায়ী, পৈতৃক সম্পত্তি ১০০ বছর পরেও উদ্ধারযোগ্য। ফলে এমন দলিলের ওপর ভর করে মালিকানা দাবি করলে তা ২০২৬ থেকে আর টিকবে না।

কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা
ভূমি আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে পুরোপুরি অটোমেশন, ভূমি অপরাধ দমন আইন এবং আদালতের সক্রিয় ভূমিকার মাধ্যমে এসব অনিয়ম দমন করা হবে। সফটওয়্যার ও নেটওয়ার্ক জটিলতা কাটিয়ে এবার প্রতিটি জেলায় কঠোরভাবে আইন প্রয়োগের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার।

২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এই ছয় শ্রেণীর দলিলের ভিত্তিতে জমির মালিকানা দাবি করা যাবে না। একই সঙ্গে অতীতে অর্জিত অবৈধ মালিকানাও প্রশ্নের মুখে পড়বে।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ—যাদের জমি নিয়ে সন্দেহ বা বিরোধ রয়েছে, তারা দেরি না করে আইনগত পদক্ষেপ ও আদালতের শরণাপন্ন হন। নতুন বছর ভূমি ব্যবস্থাপনায় আনতে যাচ্ছে বড় পরিবর্তন, যা বদলে দিতে পারে বহুদিনের জমি সংক্রান্ত বাস্তবতা।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে