মোশতাক আহমদ : দিন যাচ্ছে আর হজে যাওয়া কঠিনতর হয়ে উঠছে। টাকা থাকলেই সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে না। এ বছর হজে যাওয়ার জন্য অনলাইনে প্রাক-নিবন্ধনের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেও প্রায় ৪০ হাজার ব্যক্তি প্রাক-নিবন্ধিত হতে পারেননি। কারণ নির্ধারিত কোটা শেষ হয়ে গেছে। তাই এ বছরের নিবন্ধন-প্রক্রিয়াও বন্ধ হয়ে গেছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় অবশ্য এই ৪০ হাজার ব্যক্তিকে নিরাশ করছে না। পুনঃপ্রাক- নিবন্ধনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে তাদের। সোমবার নিবন্ধন শুরু হয়েছে। তবে নিবন্ধিত হলেও এ বছর তাদের হজে যাওয়ার নিশ্চয়তা মন্ত্রণালয় দেবে না। তারা আগামী বছরের জন্য তালিকাভুক্ত হবেন। কোনো কারণে কোটা খালি হলে কিছুসংখ্যক ব্যক্তি ক্রমানুসারে হজে যাওয়ার সুযোগ পাবেন।
ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী বছর হজে যাওয়া নিশ্চিত করতে হলে আগামী ৩০ মের মধ্যে এই ৪০ হাজার ব্যক্তিকে অনলাইনে প্রাক-নিবন্ধন করে রাখতে হবে। আগে নিবন্ধন করলে আগে ভিসা মিলবে।
সূত্র আরো জানায়, একেকটি হজ এজেন্সির জন্য নির্ধারিত কোটা ১৫০-৫০০ জন। অনেক এজেন্সি এ বছর ২০০ জন করে হজযাত্রী জোগাড় করেছিল। কিন্তু সবার প্রাক-নিবন্ধন করাতে পারেনি তারা। আগামী বছর যাতে যেতে পারেন সে জন্য বাদ পড়া হজযাত্রীদের আবার প্রাক-নিবন্ধন করার সুযোগ চেয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে তারা। তাদের অনুরোধে আবারও প্রাক-নিবন্ধনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
পুনরায় প্রাক-নিবন্ধনের বিষয়ে গত ৩১ মার্চের বৈঠকে নেওয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও শর্ত গত রবিবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশ করা হয়। শর্তে বলা হয়েছে, বেসরকারিভাবে পুনরায় প্রাক-নিবন্ধিতদের ২০১৬ সালে হজে যাওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া যাচ্ছে না। হাবকে ঘোষণা দিতে হবে যে এ ব্যাপারে কোনো এজেন্সি বা ব্যক্তি চাপ প্রয়োগ করবে না। এবারের কোটার কেউ যেতে না পারলে বেসরকারিভাবে পুনঃপ্রাক-নিবন্ধিতদের ক্রমানুসারে হজে পাঠানো হবে। অবশিষ্টরা পরের বছরের জন্য নিবন্ধিত গণ্য হবেন।
সৌদি সরকারের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী এ বছর বাংলাদেশ থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১০ হাজার জনসহ এক লাখ এক হাজার ৭৫৮ জন হজে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। সরকারি ব্যবস্থাপনাধীন ১০ হাজার জনের মধ্যে সাধারণ হজযাত্রী ৯ হাজার ৫০০ জন; বাকিরা গাইড ও রাষ্ট্রীয় খরচের হজযাত্রী। বেসরকারি ব্যবস্থাপনাধীন ৯১ হাজার ৭৫৮ জনের মধ্যে সাধারণ হজযাত্রী ৮৮ হাজার ২০০ জন; বাকিরা গাইড ও মোনাজ্জেম (ব্যবস্থাপক বা ব্যবস্থাপনা সহকারী)।
গত সোমবার বিকেল ৩টায় এবারের বাদ পড়া হজযাত্রীদের পুনঃপ্রাক-নিবন্ধন শুরু হয়েছে; চলবে আগামী ৩০ মে পর্যন্ত। এ কার্যক্রম প্রতি কর্মদিবসে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে। সবাই আগের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে পারবেন। তবে নতুন করে পেমেন্ট ভাউচার দিতে হবে এবং তারিখ সংশোধন করে নিতে হবে। নতুন পেমেন্ট ভাউচার সম্পর্কে জানার থাকলে ০৯৬০২৬৬৬৭০৭ নম্বরে কল করার জন্য বলা হয়েছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মনোনীত আইটি প্রতিষ্ঠান বিজনেস অটোমেশন লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বজলুল হক বিশ্বাস বলেন, ‘পুনরায় প্রাক-নিবন্ধন শুরু হয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আমরা কাজ শুরু করেছি।’
উল্লেখ্য, ই-হজ সিস্টেমের আওতায় প্রথমবারের মতো এবার হজযাত্রীদের প্রাক-নিবন্ধন শুরু হয় ২৩ মার্চ। ৩০ মে পর্যন্ত কোটা থাকা সাপেক্ষে অনলাইনে নিবন্ধনের ব্যবস্থা করে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অফিস। কিন্তু পাঁচ দিনের মাথায় বেসরকারি হজযাত্রী কোটা পূরণ হয়ে যাওয়ায় ২৮ মার্চ দুপুরে প্রাক-নিবন্ধনের সার্ভার বন্ধ করে দেওয়া হয়।
প্রাক-নিবন্ধন সম্পন্ন করতে না পেরে হজযাত্রী ও এজেন্সি কর্তৃপক্ষ বিপাকে পড়ে। অনেকে ডাটা এন্ট্রি করে ব্যাংকের ভাইচার পেলেও সার্ভার বন্ধ থাকায় টাকা জমা দিতে পারেননি। ৪০ হাজারের বেশি হজযাত্রী প্রাক-নিবন্ধন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৩১ মার্চ ধর্ম মন্ত্রণালয়ে জরুরি বৈঠক হয়। ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মো. মতিউর রহমানের সভাপতিত্বে বৈঠকে হাব নেতারা ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সিদ্ধান্ত হয়, ৪ এপ্রিল থেকে শর্তসাপেক্ষে হজযাত্রীদের প্রাক-নিবন্ধন ফের চালু করা হবে। সিদ্ধান্তের কথা ওই দিনই হাবের পক্ষ থেকে চিঠির মাধ্যমে সব হজ এজেন্সিকে জানানো হয়।
মন্ত্রণালয়ের অন্য এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, যেসব এজেন্সি ১৫০ জন হজযাত্রীর কোটা পূরণ করতে পারেনি, তাদের অন্য এজেন্সিগুলোর (যাদের বেশি আছে) সঙ্গে সমঝোতা করে নিতে হবে। আগামী ১৫ এপ্রিলের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে সমঝোতাপত্র দাখিল করতে হবে। এর ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।-কালের কষ্ঠ
৯ এপ্রিল, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন