শনিবার, ০৯ এপ্রিল, ২০১৬, ০২:২৯:২১

বাবা-মা থেকেও নেই, তাই থানাতেই স্কুল থানাতেই ঘর!

বাবা-মা থেকেও নেই, তাই থানাতেই স্কুল থানাতেই ঘর!

বিপুল সরকার সানি : বাবা-মা’র ছাড়াছাড়ির পর দুজনই অন্যত্র বিয়ে করেছেন। তারা কেউই রাখতে চাননি ১১ বছরের আনিসকে। তাই ঠাঁই হয় দাদির কাছে। কিন্তু সেখানেও বেশিদিন থাকা হয়নি তার। একদিন চট্টগ্রাম থেকে সে চলে আসে দিনাজপুর। বাবা-মা জীবিত থাকায় তাকে নিতে চায়নি এতিম খানাও। শেষ পর্যন্ত ঠাঁই হয় দিনাজপুর থানায়। এখন সেখানেই দিন কাটছে তার। থানায় হলেও বেশ আনন্দেই আছে আনিস। লেখাপড়া, খেলাধুলা আর খাওয়া-দাওয়া কোনও কিছুরই অভাব নেই তার। তাই সে থানা থেকে যেতেও চায় না। আনিস স্বপ্ন দেখে, বড় হয়ে পুলিশ হওয়ার।

আনিসের বাড়ি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থানার কাউজা মাজারপাড়া ফকিরহাট গ্রামে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সে বাসে করে চলে আসে দিনাজপুরে। রাতে জেলার পাঁচবাড়ী এলাকায় ঘোরাফেরা করতে দেখে আকতারুজ্জামান নামে এক ইউপি সদস্য আনিসকে থানায় সোপর্দ করে। তার কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে পুলিশ তার অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও অভিভাবকরা তাকে নিতে চায় না। পুলিশ তাকে এতিমখানায় দিতে চাইলেও বাবা-মা জীবিত থাকায় এতিমখানা তাকে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। ব্লাস্ট, সমাজসেবা অধিদফতর, নিরাপদ আবাসসহ বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করেও এখন পর্যন্ত কোনও সুরাহা হয়নি এই শিশুর বিষয়ে। শিশুটিকে একা ছেড়ে দিলে তার নিরাপত্তার সমস্যা হতে পারে, তাই দিনাজপুর থানা পুলিশ নিজেদের হেফাজতেই তাকে রেখে দেয়। গত প্রায় আড়াইমাস ধরে থানাতেই রয়েছে সে।

খেলাধুলার সামগ্রী, লেখাপড়ার জন্য বই-খাতা সবই কিনে দিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। কাজের ফাঁকে তাকে লেখাপড়া শেখাচ্ছেন পুলিশ সদস্যরাই। খাওয়া-দাওয়া ও ঘুমানোও সেখানে। সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ও আদর পেয়ে আনিস থানা থেকে যেতে চায় না।

দিনাজপুর কোতোয়ালি থানায় প্রবেশ করেই দেখা গেলো, আনিস থানার মধ্যে একটি চেয়ার টেবিলে বসে পড়াশোনা করছে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে অন্য পুলিশ সদস্যরা তাকে পড়া শিখিয়ে দিচ্ছেন।

সেখানেই কথা হয় আনিসের সঙ্গে। সে জানায়, বাবা-মার কাছে জায়গা না হওয়ায় দাদির কাছে থাকতো। সেখানেও ছিল অভাব-অনটন। একদিন দাদির কাছ থেকে সে চলে আসে এবং স্থানীয় বাজারে এক নৈশপ্রহরীর সঙ্গে থাকতো। সেখান থেকে একদিন দিনাজপুরে চলে আসে।

সে জানায়, বাবা-মার কাছে থাকতে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। বাবা-মা আলাদা হওয়ার পর লেখাপড়া তো দূরের কথা দু'বেলা খাবারও জুটত না। তবে থানায় আসার পর সে সবই পেয়েছে। এখানকার সবাই তাকে আদর করে।

আনিস জানায়, সে বড় হয়ে পুলিশ হতে চায়। তার ভাষায়, ‘ওসির বাড়িতে থাকমু, আর বড় হয়ে পুলিশ হমু।’

থানার শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা এসআই নাজমুল আলম জানান, শিশুটিকে সুরক্ষিত স্থানে দেওয়ার চেষ্টায় রয়েছেন তারা। অপরাধী নয়, এই ধরনের শিশুকে লালন-পালন ও খাওয়া-দাওয়ার জন্য বাড়তি কোনও বরাদ্দ নেই। তবে বাজেট না থাকলেও সবাই নিজ দায়িত্বে শিশুটির জন্য অনেক কিছুই আনছেন। এই ধরনের শিশুর জন্য সব জেলাতেই আলাদা বাজেট করা প্রয়োজন।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একেএম খালেকুজ্জামান জানান, শিশুটির দায়িত্ব কেউ না নেওয়ায় বাধ্য হয়েই তাকে থানাতেই রেখে দেওয়া হয়েছে। তার জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছুই সবাই মিলে কিনে দিয়েছেন। সে ঘুমায় ডিউটি কর্মকর্তার কক্ষে।

ওসি জানান, উপযুক্ত অভিভাবকদের কাছে কিংবা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় শিশুটি মানুষের মতো মানুষ হোক এমনটি চান তারা। এভাবে তাকে ছেড়ে দিলে সে অপরাধী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়তে পারে। সম্মিলিতভাবে এই ধরনের শিশুদের  নিরাপত্তা ও সহায়তা করলে তাদের মাধ্যমে দেশ উপকৃত হতে পারে।-বাংলা ট্রিবিউন
৯ এপ্রিল, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে