রবিবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৬, ০২:৫৭:০০

বিএনপির অঙ্গসংগঠন নিয়ে তোড়জোড়

বিএনপির অঙ্গসংগঠন নিয়ে তোড়জোড়

কামরুল হাসান : বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আগে মেয়াদোত্তীর্ণ অঙ্গসংগঠনের কমিটি দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে দলটির নীতিনির্ধারকরা। এর মধ্যে জাতীয়তাবাদী যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি খুব শিগগিরই ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে। এছাড়াও অন্যান্য মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি নিয়েও কাজ করা হচ্ছে। নেতৃত্ব বাছাই শেষে ওই সব কমিটিও চূড়ান্ত করা হচ্ছে বলে সূত্র জানায়।

এদিকে দলের নীতিনির্ধারকদের এমন মনোভাবের কারণে নড়েচড়ে বসেছেন পদ প্রত্যাশী নেতারা। এতদিন মামলা-হামলা আর নির্যাতনের ভয়ে রাস্তায় বের হতে ভয় পেলেও এখন স্বউদ্যোগেই বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন। দলের হাইকমান্ডের কাছেও ধরনা দিচ্ছেন। অনেকে আবার নেতৃত্ব পেতে নিজের পক্ষে মিছিল-মিটিংয়ের মতো কর্মসূচিও পালন করছেন। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের পক্ষে প্রচারণা তো আছেই।

বিএনপি সূত্র জানায়, দলের ৯টি অঙ্গসংগঠন ও ২টি সহযোগী সংগঠনের মধ্যে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, শ্রমিক দল আর মুক্তিযোদ্ধা দল ব্যতীত সবগুলোরই মেয়াদ পার হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। এর মধ্যে জাতীয়তাবাদী যুবদল আর স্বেচ্ছাসেবক দলকে রাজপথের আন্দোলনের ভ্যানগার্ডও বলা হয়ে থাকে। কিন্তু বিগত দিনের আন্দোলনে এই দুটি সংগঠনের পারফর্মেন্স তেমন একটা ছিল না বললেই চলে। এসব নিয়ে দলের হাইকমান্ডও ক্ষুব্ধ।

সূত্র জানায়, দলকে ঢেলে সাজানোর অংশ হিসেবে গত বছর থেকেই এসব সংগঠনকে পুনর্গঠনের ঘোষণা দেয়া হলেও নানা কারণে তা সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি। ১৯ মার্চ দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল শেষে পুনরায় এ উদ্যোগ নেয়া হয়। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে অন্তত যুবদলের কমিটি ঘোষণা করার প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে সংগঠন সূত্র জানায়।

যুবদল সূত্র জানায়, বিগত দিনে এ সংগঠনের নেতৃত্বভার নেয়ার জন্য বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকের নাম জোরেশোরে শোনা গেলেও এক  নেতার এক পদ নীতির কারণে এখন আর তাদের নাম শোনা যাচ্ছে না। তবে সংগঠনের ভেতর ও বাইরে থেকে অনেকেই এই সংগঠনের নেতৃত্বভার নেয়ার জন্য তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু করেছেন। লবিং-তদবিরের দৌড় এখন লন্ডন পর্যন্ত পৌঁছে গেছে বলেও সূত্র জানায়।

বিএনপির একটি সূত্র জানায়, যুবদলের সভাপতি পদের জন্য সংগঠনের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরব রয়েছেন সবার শীর্ষে। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বিগত আন্দোলনে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার এবং মামলার ডবল সেঞ্চুরি পার করা মহানগর উত্তরের সভাপতি মামুন হাসান রয়েছেন। দক্ষ, বিশ্বস্ত আর সাংগঠনিক নেতা হিসেবে পরিচিত ছাত্রদল থেকে উঠে আসা এ নেতা দায়িত্ব গ্রহণ করছেন বলে ইতিমধ্যে উজ্জীবিত নেতাকর্মীরা।

তারা মনে করেন, নীরব-মামুন কমিটি দেয়া হলে যুবদলকে আগের ঐতিহ্যে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। এছাড়া সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য চেষ্টা করছেন যুবদলের প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজও। ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে নিয়েও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

কিন্তু বিগত দিনে ছাত্রদলের ভঙ্গুর অবস্থা সৃষ্টির জন্য দলের নেতাকর্মীরা টুকু-আলীমকে দায়ী করে বলেন, এরকম নেতৃত্ব যুবদলের দায়িত্ব গ্রহণ করলে এর অবস্থাও একই রকম হবে। তাদের বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে রেখে দক্ষ ও সাংগঠনিক নেতৃত্বের কাছে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসংগঠনের দায়িত্বভার তুলে দেয়া দরকার। কমিটির সুপার ফাইভের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন, সেলিমুজ্জামান সেলিম, হারুন অর রশিদ হারুন (ভিপি হারুন), মাহবুবুল হাসান পিংকুসহ উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাহাঙ্গীর অন্যতম।

জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি পদে বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা শফিউল বারী বাবু দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মীর সরফত আলী সপুও আছেন আলোচনায়। সপুকে সভাপতি করা না হলে বিএনপির নির্বাহী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে দেখা যেতে পারে তাকে।

সাধারণ সম্পাদক পদে হাইকমান্ডের নেক নজরে রয়েছেন দক্ষ সংগঠক ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আবদুল কাদের ভূইয়া জুয়েল। এছাড়া ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমীরুল ইসলাম আলীমও রয়েছেন আলোচনায়। কিন্তু বিগত দিনে দলীয় কর্মকাণ্ডে তার কোনো ভূমিকা না থাকা এবং নানা সময়ে তার নেতিবাচক ভূমিকার কারণে নেতৃত্ব মেনে নিতে চাইছেন না সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। তবে লবিং-তদবিরে আলীমই এগিয়ে রয়েছেন বলে সূত্র জানায়। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে সাবেক ছাত্রনেতা সাইফুল ইসলাম ফিরোজ অনেকটা নিশ্চিত বলে জানা গেছে। মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক ইয়াসিন আলী আলোচনায় রয়েছেন।

ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি নুরুল ইসলাম নয়নও আছেন আলোচনায়। তাকে যুবদল কিংবা স্বেচ্ছাসেবক দলে রাখা না হলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাখা হবে।

বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ এ দুটি অঙ্গসংগঠনের পাশাপাশি আলোচনায় আছে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল, জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাস ও কৃষক দল।

মহিলা দলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ সব পদেই পরিবর্তন আসছে। বর্তমান কমিটির দায়িত্বশীল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়ে যাওয়া হবে। অপেক্ষাকৃত তরুণদের কাছে এ কমিটির দায়িত্ব দেয়া হবে বলেও গুঞ্জন রয়েছে।

জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটিতেও ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। বর্তমান কমিটির নেতৃত্বকে পরিবর্তন করে দক্ষ ও সাংগঠনিক ব্যক্তিত্বের কাছে তুলে দেয়া হবে এর দায়িত্বভার। সংগঠনের সভাপতি পদের জন্য আলোচনায় রয়েছেন বিখ্যাত সুরকার ও একুশে পদকপ্রাপ্ত মনিরুজ্জামান মনির, ছড়াকার আবু সালেহ, সাবেক সভাপতি রেজাবুদ্দৌলা চৌধুরী, আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জল, সাবেক সভাপতি খুরশিদ আহমেদ মোল্লা প্রমুখ।

সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য অপ্রতিদ্বন্দ্বী অবস্থায় রয়েছেন দক্ষ সংগঠক ঢাকা মহানগর জাসাস দক্ষিণের সভাপতি জাহাঙ্গীর শিকদার। এছাড়া সুপার ফাইভ পদের জন্য দৌড়-ঝাঁপ করছেন অনেক কেন্দ্রীয় নেতা।
এক নেতার এক পদ নীতির বিষয়ে শৈথিল্য থাকলে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সভাপতি পদে শামসুজ্জামান দুদু অনেকটাই নিশ্চিত। সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য একাধিক নেতা রয়েছেন। এর মধ্যে তকদির হোসেন জসিম, জামালউদ্দিন খান মিলন, তোফাজ্জল হোসেন, সৈয়দ মেহেদি হাসান রুমি প্রমুখের নাম শোনা যাচ্ছে। এছাড়াও সুপার ফাইভ পদে এস কে সাদিসহ একাধিক নেতার নাম উচ্চারিত হচ্ছে।

অন্ধকার থেকে আলোতে আনার জন্য জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দল, তাঁতী দল, ওলামা দল নিয়েও কাজ করা হচ্ছে। এদিকে মেয়াদ ঘনিয়ে আসার পাশাপাশি আলোচনায় চলে আসছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলও। পদ প্রত্যাশী ছাত্রনেতারা এখন নতুন কমিটির প্রত্যাশায় শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায় রেখে চলছেন। -মানবকণ্ঠ

১০ এপ্রিল ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে