সোমবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৬, ০৫:২৯:১৪

‘আইন মেনেই’ অর্থ ফেরত আনতে হবে বাংলাদেশকে

‘আইন মেনেই’ অর্থ ফেরত আনতে হবে বাংলাদেশকে

নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশের রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া অর্থের ৫৪ লাখ ৬০ হাজার ডলার ফেরত দিয়েছেন চীনা বংশোদ্ভূত ক্যাসিনো ব্যবসায়ী কাম সিন অং ওরফে কিম অং। ওই অর্থ বুঝে নেয়ার রসিদে স্বাক্ষরও করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু তা বাংলাদেশে আনা নিয়ে সৃষ্ট হয়েছে জটিলতা।

কিম অংয়ের আইনজীবীরা রোববারও সাফ জানিয়েছেন, ‘আইন মেনেই’ ওই অর্থ বাংলাদেশকে আনতে হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ‘আইন মানা’ মানে হচ্ছে- আদালতের দ্বারস্থ হওয়া। মামলা করে তাতে জয়ী হলে তবেই সে অর্থ ফেরত পাবে বাংলাদেশ। ফিলিপাইনের দৈনিক ইনকোয়ারার এ তথ্য দিয়েছে।

চুরির ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপাইনে যায়। অংয়ের দাবি, ওই অর্থের মধ্যে (চীনা জাংকেট ব্যবসায়ী শু হুয়া গাওয়ের মাধ্যমে) তিনি পান ১০০ কোটি পেসো (২ কোটি ১৬ লাখ ডলার)। যার ৪৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার এবং ৩ কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার পেসো (৮ লাখ ৩০ হাজার ডলার) ফেরত দেন তিনি। অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিলের (এএমএলসি) জিম্মায় ওই টাকা এখন ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে (ব্যাংকো সেন্ট্রাল এনজি ফিলিপিনো) রয়েছে।

সিনেটের (ব্লু-রিবন কমিটি) শুনানিতে এবং পরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কিম অং দাবি করেন, ওই অর্থ প্রকৃত মালিক অর্থাৎ বাংলাদেশকে ফেরত দিতে তার কোনো আপত্তি নেই। এএমএলসিও চাইছিল, সব রকমের স্বত্ব ত্যাগ করে বাংলাদেশের হাতে ওই অর্থ তুলে দেয়া। এ কারণে তা ফেরত দেয়ার সময় বাংলাদেশ দূতাবাস ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদেরও সেখানে ডাকা হয়। বাংলাদেশের কর্মকর্তারা টাকা গুনে ‘বুঝে পেলাম’ মর্মে স্বাক্ষরও করেন। কিন্তু ওই টাকা আনতে গিয়ে বাধে বিপত্তি। কিম অংয়ের আইনজীবীরা সরাসরি অর্থ ফেরত দিতে আপত্তি জানান। এ নিয়ে বুধবার ত্রিপক্ষীয় বৈঠকও হয়। কিন্তু সমাধান মেলেনি।

ব্লু-রিবন কমিটির প্রধান তেওফিস্তো গুংগোনা, কিম অংয়ের আইনজীবী ইনোসেনসিও ফেরার ও ক্রিস্টোফার জেমস পুরিসিমা রোববার বলেন, এএমএলসির অবস্থান ‘ভিত্তিগতভাবেই ত্র“টিপূর্ণ, প্রক্রিয়াগতভাবে দুর্বল ও প্রবলভাবে আইন পরিপন্থী’। তাদের মতে, যদিও অংয়ের পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি নেই, তবু এএমএলসি সরাসরি বাংলাদেশের হাতে টাকা তুলে দিতে পারে না। কেননা এখনও ওই অর্থের প্রকৃত মালিক নির্ধারিত হয়নি। এএমএলসিকে ফিলিপাইনের আইন মানতে হবে।

মুদ্রা পাচারবিরোধী আইনের ১২ ও ১৭ নম্বর ধারা তুলে ধরে অংয়ের আইনজীবীরা বলেন, ‘কোনো অর্থ বা সম্পত্তি প্রকৃত মালিকের হাতে ফিরিয়ে দেয়ার আগে এএমএলসিকে সাধারণ আদালতে মামলা করতে হবে। গণ-আদালতই চূড়ান্ত করবে ওই অর্থের প্রকৃত মালিক কে।’ তারা আরও বলেন, ‘ওই অর্থের (৫৪ লাখ ৬০ হাজার ডলার) সঙ্গে তিন ক্যাসিনো (ইস্টার্ন হাওয়াই লেইজর, সোলায়ার ও মিডাস) ও শু হুয়া গাও-য়ের সংযুক্তি রয়েছে। এর মধ্যে ইস্টার্ন হাওয়াই (মালিক কিম অং) ছাড়াও অন্যরা রয়েছে। আর  অর্থগুলো মূলত শু হুয়া গাও-য়ের। শুধু অংয়ের কাছে ছিল বলেই তিনি ফেরত দিয়েছেন। সুতরাং আইনগতভাবেই প্রমাণ হতে হবে, ওই অর্থের মালিক বাংলাদেশ কিনা।

মঙ্গলবার শুনানিতেই এ নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেন ফিলিপাইনে বাংলাদেশের দূত জন গোমেজ। তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের বলেছিল টাকা গ্রহণ করতে। এ কারণেই তারা এএমএলসি কার্যালয়ে আমাদের ডেকেছিল এবং আমরা টাকা গ্রহণও করেছি। বাংলাদেশে তা পাঠানোর জন্য আমরা স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তিও করেছি। কিন্তু তা বাংলাদেশে নিতে পারছি না।’

বুধবার এ নিয়ে বিশেষ বৈঠক হয় ব্লু-রিবন কমিটি, এএমএলসি ও কিম অংয়ের আইনজীবীদের মধ্যে। পরে এএমএলসি’র পরিচালক জুলিয়া বাকে-আবদ বলেন, ‘আমরা বুঝেছিলাম, বাংলাদেশের কাছে তুলে দেয়াই ছিল উদ্দেশ্য। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, কিম অং শুধু এএমএলসি’র কাছেই ওই অর্থ হস্তান্তর করতে চেয়েছে। এটা যেহেতু দুই সরকারের মধ্যকার বিষয়, আর আমরা সে ফ ব্যক্তিবিশেষ, সেহেতু যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করাই উচিত। কেননা, কেউ এখনও জানে না, এটা কার টাকা।

গুংগোনা বলেন, এএমএলসিকে মামলা করতে হবে। মামলায় ওই অর্থের তৃতীয় কোনো দাবিদার না পাওয়া গেলে তবেই বাংলাদেশ টাকা ফেরত পাবে। ইউনিভার্সিটি অব ইস্টের সাবেক ডিন আমাদো ভালদেজ বলেন,  ওই অর্থ বাংলাদেশকে ফেরত দেয়া যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে তাড়াহুড়া না করে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণও জরুরি। -যুগান্তর
১১ এপ্রিল ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে