সোমবার, ০২ মে, ২০১৬, ০২:৩০:০২

তবুও জীবন থেমে থাকে না

তবুও জীবন থেমে থাকে না

মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল: রাত তখন ১১টা। সুনশান পিনপতন নিরবতা কারওয়ান বাজারের হাসিনা মার্কেট সংলগ্ন সিটি কর্পোরশনের পেপে মার্কেট। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার, পোড়া গন্ধ, ময়লা পানি আর প্রায় নিভে যাওয়া আগুনের ধোঁয়ায় আছন্ন।


মাথায় হেডলাইট ও হাতে মোটা নলের পাইপ নিয়ে দৃষ্টির আড়ালে রয়ে যাওয়া আগুন খুঁজে নেভানোর কাজে ব্যস্ত ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। বেশ কিছু মানুষ মার্কেটের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অন্ধকারে তাদের কাউকে দেখা যাচ্ছে না কিন্ত ধোঁয়ার কারণে ক্ষণে ক্ষণে কাশির সশব্দে মানুষগুলোর উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। যাদের দোকান পুড়ে গেছে তাদের সবার মুখে এক কথা সব শেষ অইয়া গেছে, সব পুড়ে ছাই।

ঠিক কয়েক গজ দূরেই মোমবাতি জ্বালিয়ে সব্জি বিক্রি করছিল জাহাঙ্গীর নামের এক ব্যবসায়ী। কাছে যেতে শোনা গেল ক্রেতার পণ্যের দাম হাকছে ক্যাপসিকাম কেজি ১৮০ টাকা, লেটুস পাতা ২৫০ টাকা, চাইনিজ ক্যাবিস প্রতি পিস ১৫ টাকা। একটু দূরেই লেবু বাছাইয়ে ব্যস্ত মো. আইয়ুব নামে আরেক ব্যবসায়ী। জিজ্ঞেস করতেই জানা গেল এখানে লেবু কুড়ি ও পুন (৮০ টায় এক পুন) ও ১শ’ হিসেবে বিক্রি হচ্ছে।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে আইয়ুব মিয়া জানান, পাশের মার্কেটে এত বড় আগুনে পুড়ে গেলেও তাদের ব্যবসা বন্ধ করে রাখার সুযোগ নেই, পরিবার পরিজন নিয়ে বাঁচতে হলে ব্যবসা করে রোজগার করতে হবে। এত বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পরও লোকজন কিনতে আসবে কিনা জানতে চাইলে সে জানায়, কারওয়ান বাজারে দোকান খোলা রাখলে কমবেশি মালামাল কিনতে লোকজন আইবই। হয়তো সংখ্যায় কম আইবো বলে সে মন্তব্য করে। সবুজ নামের এক মিনতির একই কথা। পাশের মার্কেট পুড়ছে দেইখ্যা বইয়া থাকলেও পেটের ভাত জুটবো না।

এক পাশে সর্বস্ব খুইয়ে ব্যবসায়ীরা আহাজারি করছেন আরেক দিকে অন্য ব্যবসায়ীরা মিনতি দিয়ে মালপত্র টেনে নামাচ্ছেন, পণ্য বিক্রিও করছেন। রাত সোয়া ১১টায় দেখা যায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জেনারেটর ও শক্তিশালী বাতি জ্বালিয়ে জ্বলে যাওয়া মার্কেটের আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন। একই সময়ে বিভিন্ন পণ্যবাহী ট্রাক মালামাল নিয়ে বাজারে ঢুকছে।
আনিস নামের এক লেবার বলেন, আইজ মাল আড়তে ঢুকাইতে কষ্ট অইবো আপাতত রাস্তার ওপর স্তুপ কইরা রাখমো।

মো. আবদুল আউয়াল নামে এক তরুণ পুড়ে যাওয়া মার্কেটের বাইরের রাস্তায় অন্ধকারেই মালামাল কিছুটা কম দামে লাউ, কুমড়া ও কাঁচা কলা বিক্রি করছিল। সে জানায়, তার বয়স ২১ বছর। এ বয়সে সে কারওয়ান বাজারে পাঁচবার আগুনে পুড়তে দেখেছে। আগুনে পুড়লেও ব্যবসায়ীরা ব্যবসা কখনও বন্ধ রাখে না বলে সে জানায়।

২ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সবুজ/এসএ

 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে