এ এস এম হাফিজুর রহমান, সহকারী পুলিশ কমিশনার : আপনাকে কেউ হুমকি দিয়েছে বা আপনি কোন অপরাধ সংঘটনের আশঙ্কা করছেন এমনকি আপনার মূল্যবান কোনো পাসপোর্ট, ভোটার আইডি কার্ড বা সার্টিফিকেট হারিয়ে গেলে নিশ্চয়ই ভড়কে গিয়ে প্রথমেই ভাবছেন থানায় গিয়ে জিডি করার কথা। কিন্তু জিডি কীভাবে করতে হয় তা আপনার জানা নেই।
চলুন খুব সহজেই জেনে নেই জিডি কী এবং কীভাবে জিডি করতে হয়।
জিডি কী?
জেনারেল ডায়েরি বা জিডি হলো যেকোনো বিষয়ের লিপিবদ্ধ বিবরণ। থানায় গিয়ে কোন বিষয়ে বা কোন ব্যাপারে আপনার লিখিত সমস্যার বিস্তারিত বিবরণই হলো জিডি।
জিডি আপনার আইনগত অধিকার। পুলিশ রেগুলেশন্স বেঙ্গলের (পিআরবি) ৩৭৭ নং প্রবিধানে জিডি সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা আছে।
যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়ে থানায় জিডি করে রাখলে পুলিশ খুব দ্রুত যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারে। জেনে রাখা ভালো সাধারণত যেসব বিষয়ে মামলা করা যায় না সেসব বিষয়ের উপরই মূলত জিডি করা হয়।
কোন বিষয়ে জিডি করবেন
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি সংক্রান্ত কোন খবর পেলে, আপনার ভূমি বা বাড়ি ব্যবহার করে কেউ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করতে চাইলে বা করলে, কোনো অপরাধ বা অপরাধীর কোনো তথ্য পেলে, কেউ হারিয়ে গেলে বা পেলে, কোনো প্রকার হুমকি পেলে বা হুমকির আশঙ্কা থাকলে অথবা মূল্যবান যেকোনো বিষয় যেমন-সার্টিফিকেট, দলিল, লাইসেন্স, পাসপোর্ট, মূল্যবান রশিদ, চেকবই, ক্রেডিট-কার্ড, এটিএমকার্ড, যেকোনো মোবাইল ফোন, স্মার্ট-ফোন, ভোটার আইডি কার্ড ইত্যাদি হারিয়ে গেলে আপনি নিকটবর্তী থানায় গিয়ে জিডি করতে পারবেন।
কীভাবে করবেন
প্রথমেই সাদা কাগজে স্ব-হস্তে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সম্বোধন করে সংশ্লিষ্ট থানার নাম ও ঠিকানা লিখতে হবে। আবেদনের মধ্যে ‘জিডি করার জন্য আবেদন’ কথাটি বিষয় হিসেবে উল্লেখ্য করতে হবে।
কী বিষয়ে জিডি করবেন সেটির কারণ অবশ্যই উল্লেখ্য করতে হবে। যেমন কেউ হুমকি দিলে বা কারো কাছ থেকে হুমকির আশঙ্কা থাকলে তার বিবরণ ও হুমকিদাতার নাম, ঠিকানা, সময়, পেশা ইত্যাদি উল্লেখ্য করতে হবে।
কেউ হারিয়ে গেলে হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তির বিবরণ যেমন গায়ের রং, কোন সনাক্তকরণ চিহ্ন, বয়স, কোন এলাকা থেকে হারিয়েছে এবং কখন হারিয়েছে এসব তথ্য উল্লেখ্য করতে হবে। এমনকি আপনি সাক্ষীর নামও উল্লেখ করতে পারেন।
সর্বশেষে জিডিকারীর অর্থাৎ যিনি জিডি করছেন তার পূর্নাঙ্গ নাম, ঠিকানা, পেশা ও মোবাইল নম্বর উল্লেখ করতে হবে।
জিডির পরবর্তী ধাপ
জিডি সাধারণত দুই কপি করতে হয়। এক কপি থানায় নথিভুক্ত করার জন্য জমা দিতে হয় এবং আরেক কপিতে জিডির নম্বর ও যার কাছে জিডি করেছেন সেই পুলিশ কর্মকর্তার স্বাক্ষর সহ সযত্নে সংরক্ষণ করতে হবে।
জিডি করতে থানায় কোনো ধরনের ফি দিতে হবে না। তদন্তে সত্যতা পেলে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জিডির কপিটি আপনি অবশ্যই ভালোভাবে সংরক্ষণ করবেন। কারণ এটি পরবর্তীতে আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
জিডি সম্পর্কে বিভ্রান্তি
অনেকেই জিডি আর মামলাকে এক মনে করে সবকিছু গুলিয়ে ফেলেন। আসলে জিডি এবং মামলা পুরোপুরি আলাদা দুটো বিষয়।
আবার অনেকের ধারণা জিডি করতে টাকা-পয়সা লাগে। এ ধারনা মোটেও সত্য নয়। জিডি করতে কোন টাকা-পয়সা লাগেনা। আপনি থানায় কর্তব্যরত ডিউটি অফিসারকে আপনার সমস্যার কথা ভালোভাবে বুঝিয়ে বললে বা জিডি করার নিয়ম-কানুন না জানা থাকলে সংশ্লিষ্ট ডিউটি অফিসারই আপনাকে জিডির আবেদন লিখতে সাহায্য করবেন।
সেবাই পুলিশের ধর্ম। আপনি যদি আপনার সমস্যার কথা সুন্দর করে বুঝিয়ে বলেন অবশ্যই পুলিশ আপনাকে সহযোগিতা করবে।
জিডির একটি নমুনা কপি
তারিখ:—————-
বরাবর,
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা
——- থানা, ঢাকা।
বিষয়:- সাধারণ ডায়েরি ভুক্তির জন্য আবেদন।
জনাব,
আমি নিম্ন স্বাক্ষরকারী নাম:———————- বয়স——— পিতা/স্বামী————– ঠিকানা————(পূর্নাঙ্গ ঠিকানা) এই মর্মে জানাচ্ছি যে, ————(সংক্ষিপ্ত বর্ণনা)– তারিখ———- সময়———–
বিষয়টি থানায় অবগতির জন্য সাধারণ ডায়েরীভূক্ত করার অনুরোধ করছি।
বিনীত
নাম—-
ঠিকানা———-
মোবাইল নম্বর———-
লেখক ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স বিভাগে কর্মরত। -পূর্বপশ্চিম
৩ মে, ২০১৬/এমটনিউিজ২৪/এমআর/এসএম