নিউজ ডেস্ক : আদরের যে ছেলের সামনে খুন হন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু সেই ছেলের জন্য বাবার বাড়িতে একাধিকবার আসতে চেয়েও আসতে পারেননি তিনি।
মাহিরের পড়াশোনার ক্ষতি হবে ভেবে বাবার বাড়ি রাজধানীর খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়া ভূঁইয়াপাড়ায় যেতে পারছিলেন না মাহমুদা খানম মিতু।
সর্বশেষ জানুয়ারিতে বাবার বাড়িতে এসেছিলেন তিনি। তবে কয়েকদিন ধরে তিনি বাবা-মায়ের কাছে ফোন করে জানিয়েছিলেন, শিগগিরই তিনি আবার আসবেন। আসলেন ঠিকই, তবে লাশ হয়ে!
রোববার রাত ১০টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ভূঁইয়াপাড়ায় ২২০/এ নম্বর বাড়ির আঙিনায় যখন মাহমুদার নিথর দেহ এসে পৌঁছায়, মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন তখন বারান্দায় বসে ছিলেন। মেয়ের লাশ পৌঁছামাত্র কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলতে থাকেন, ‘আমার মা এসেছে। আমাকে তার কাছে নিয়ে যাও। আমার মা তো কোনো অপরাধ করেনি। সে তো কারো ক্ষতি করেনি। তাহলে কেন সে লাশ হয়ে এল। কখনো শুনিনি, পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীকে খুন করা হয়েছে। আমার মেয়ের ভাগ্যেই এটাই কি লেখা ছিল?
এ সময় তিনি বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। মিতুর মরদেহ তাদের দোতলা বাড়ির ভেতরে নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার মা মোশারফ হোসেনকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন।
কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলতে থাকেন, একটিবার আমার মায়ের মুখটা দেখতে দাও। আমার মেয়ের কী অপরাধ? আমার মেয়েটাকে ওরা মেরে ফেলতে পারল?
মিতুর স্বামী এসপি বাবুল আক্তার তখন স্বজনদের জড়িয়ে ধরে করে কাঁদছিলেন। এ সময় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
আশপাশের কেউই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। কেউ যেন কাউকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষাও খুঁজে পাচ্ছিলেন না।
রোববার সকালে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানাধীন জিইসি মোড়ের ওয়েল ফুডের বাসার কাছাকাছি এলাকায় খুন হন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। এসময় তার ছেলে মাহির কিছু বুঝে উঠতে পারছিল না। দৌড়ে গিয়ে বিষয়টি বাসার দারোয়ানকে জানায়।
এদিকে রাত ১০টার দিকে মিতুর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বাবার বাড়ি ভূঁইয়াপাড়ায়। রাত ১১টার দিকে স্থানীয় বায়তুল ফালাহ জামে মসজিদের সামনে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজায় তার স্বজন ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তারাও অংশ নেন। এরপর মেরাদিয়া কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়।
৬ জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম