নিউজ ডেস্ক : আজ ৭ই জুন। ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস। বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফার ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে আজ। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সৃষ্টিতে ৬ দফার গুরুত্ব ও ভূমিকা অপরিসীম।
আইয়ুব খানের মার্শাল ল’ শাসন, ৬২-এর শিক্ষানীতিসহ সকল অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এবং পূর্ববাংলার জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালের আজকের এই দিনে ৬ দফা ঘোষণা করেন। ওই দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ছয় দফার দাবির পক্ষে দেশব্যাপী গণ-আন্দোলনের সূচনা হয়।
এই দিনটি বাংলার স্বাধিকার আন্দোলনকে নতুন পর্যায়ে উন্নীত করে। একই সঙ্গে এ ৬ দফার মধ্য দিয়েই বাঙালি জাতির স্বাধিকার আন্দোলন স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপ নেয়। ৬ দফা ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধু বাংলার আনাচে-কানাচে প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে জনগণের সামনে ৬ দফার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
বাংলার সর্বস্তরের জনগণ যখন এই ৬ দফা সম্পর্কে সম্যক ধারণা অর্জন করলো তখনই একে বাঙালির মুক্তির সনদ হিসেবে আখ্যায়িত করা হলো। ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাব পেশের মাধ্যমে পাক-ভারত উপমহাদেশের জনগণ বৃটিশ শোষকদের এদেশ থেকে তাড়ানোর জন্য যেভাবে ঐকমত্য হয়েছিল, ঠিক তেমনি ১৯৬৬ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ৬ দফাকে তৎকালীন পূর্ববাংলার জনগণ পশ্চিমাদের এদেশ থেকে তাড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেছিল।
আইয়ুব খানের পতন, ১৯৬৯-এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে বঙ্গবন্ধুসহ সকল রাজবন্দির মুক্তি আন্দোলনের প্রধান মনোবল ছিল এই ৬ দফা। পরবর্তীতে ৬ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলার জনগণ ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তথা বঙ্গবন্ধুর মনোনীত প্রার্থীদের একচেটিয়া রায় প্রদান করে। কিন্তু নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করার পরও পশ্চিম পাকিস্তানিরা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য গড়িমসি শুরু করে। আর তখনই মুক্তি সংগ্রামের ডাক দিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
ঐতিহাসিক ৭ই মার্চে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ঐতিহাসিক ভাষণের ৬ দফার প্রতিটি দফার পর্যালোচনা ছিল। পরবর্তীতে ৬ দফার ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকার বিভিন্ন সেক্টরের মাধ্যমে যুদ্ধ পরিচালনা করার পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে সকল সরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়েছিল।
আজ ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এই দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় স্মরণ করার পাশাপাশি বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করবে।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ সূর্য উদয়ক্ষণে ধানমন্ডিস্থ ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল সাড়ে ৯টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে অপরাহ্ন ৩টায় গুলিস্তানের মহানগর নাট্য মঞ্চের কাজী বশির মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। এ ছাড়া দলের কেন্দ্রীয় ও মহানগরের নেতৃবৃন্দ আলোচনা সভায় উপস্থিত থাকবেন।
এদিকে আজ ৭ই জুন ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন উপলক্ষে গৃহীত কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী সকল সাংগঠনিক জেলা উপজেলায় পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসমূহের সকল শাখাসহ সর্বস্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থক ও জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
০৭ জুন, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম