শুক্রবার, ১০ জুন, ২০১৬, ০৩:৫৯:১৬

তিন কারণে বাংলাদেশকে গুরুত্ব দিচ্ছে সৌদি আরব

তিন কারণে বাংলাদেশকে গুরুত্ব দিচ্ছে সৌদি আরব

রাহীদ এজাজ: সামরিক জোটে সক্রিয় ভূমিকা, ইরানবিরোধী পদক্ষেপের প্রক্রিয়ায় পাশে পাওয়া এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এই তিন বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সৌদি আরব। সদ্য সমাপ্ত সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা দিয়ে এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ে বৈঠকের মাধ্যমে এই বার্তাই দিয়েছে সৌদি আরব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের সঙ্গে যুক্ত ঢাকা ও রিয়াদে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। তবে দুই দেশের সরকারের পক্ষ থেকে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হওয়ার কথা বলা হলেও বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার জনশক্তি রপ্তানির বাজার কতটা সম্প্রসারিত হচ্ছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। কারণ, বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে পাঁচ লাখ শ্রমিক রপ্তানির খবর প্রচারিত হলেও সৌদি কর্তৃপক্ষ এ ধরনের কোনো সংখ্যার কথা উল্লেখ করেনি।


উইকিলিকসে প্রকাশিত গোপন নথির প্রসঙ্গ টেনে বাংলাদেশের দুই কূটনীতিক বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে সৌদি সরকারের সম্পর্কে বাঁক পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। অতীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় তেলসমৃদ্ধ দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক শীতল থাকলেও এবার তার ব্যতিক্রম ঘটছে। উইকিলিকসের নথিতে বলা হয়, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার বন্ধে জামায়াতে ইসলামী এবং রাজনৈতিক সংকট মেটাতে বিএনপি সৌদি আরবকে বাংলাদেশে হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানালে তা আমলে নেয়নি সৌদি কর্তৃপক্ষ। জানতে চাইলে রিয়াদে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে সৌদি কর্তৃপক্ষের আতিথেয়তা থেকে স্পষ্ট যে তারা বাংলাদেশকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের পাশাপাশি তারা ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলকে রাজকীয় অতিথির মর্যাদা দিয়েছে। সৌদি বাদশাহর সঙ্গে বৈঠকের পর তাঁর প্রতিরক্ষা ও অর্থনৈতিক উপদেষ্টার সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রীর একান্তে বৈঠক হয়েছে। এখন এই সফরের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতির ওপর নির্ভর করছে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টি।


রাষ্ট্রদূত জানান, সৌদি বাদশাহ সালমানের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ইয়াসির আল-রুমায়ান সে দেশের বিশেষায়িত সরকারি বিনিয়োগ তহবিল থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এরই অংশ হিসেবে তিনি সম্ভাব্য বিনিয়োগের ক্ষেত্রের একটি তালিকা চেয়েছেন। আর সৌদি বাদশাহ সালমানের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টার দুই দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে কথা বলেছেন। সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এক কূটনীতিক বলেন, সন্ত্রাসের ব্যাপারে কোনো রকম ছাড় না দেওয়ার বাংলাদেশের নীতির কথা শেখ হাসিনা উল্লেখ করেছেন সৌদি বাদশাহ সালমানের কাছে। দুই পবিত্র মসজিদ হুমকির মুখে পড়লে প্রয়োজনে সামরিক অভিযানে বাংলাদেশের অংশ নেওয়ার বিষয়টিও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন। তবে ওই জোটের কর্মপরিধি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ নিয়ে কোন দেশ কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে, তা নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে কথা হচ্ছে। এরই মধ্যে জোটের সদস্য দেশের সেনাবাহিনী প্রধান ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠকও হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশ সরাসরি কোনো ধরনের সামরিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত না হয়ে সরঞ্জাম দিয়ে যাতে অবদান রাখতে পারে, সেই সুযোগও থাকছে।


কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, সৌদি আরবের পক্ষ থেকে ইরানবিরোধী অবস্থানের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েও প্রধানমন্ত্রীর সফরে কথা হয়েছে। তবে কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলানো এবং সবার প্রতি বন্ধুতা, কারও প্রতি বৈরিতা নয়, এমন নীতি বাংলাদেশ মেনে চলবে এটি সৌদি আরবকে বলা হয়েছে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে সৌদি আরবে কর্মরত বাংলাদেশের একাধিক কূটনীতিক জানান, সৌদি ধনকুবেররা তাঁদের বিনিয়োগের ক্ষেত্র তেল থেকে সরিয়ে অন্যান্য খাতে নেওয়ার ওপর অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। পাশাপাশি সৌদি ব্যবসায়ীরা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাইরে এশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে বিনিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছেন। দেশটির এই অবস্থানের কারণে সৌদি আরবের ব্যবসায়ীদের জন্য বাংলাদেশে একটি বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সৌদি আরবের সরকারি-বেসরকারি যেকোনো ধরনের বিনিয়োগকে বাংলাদেশের প্রস্তাবিত অঞ্চলের জন্য প্রধানমন্ত্রী স্বাগত জানিয়েছেন। সৌদি আরবের মন্ত্রী পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে সরেজমিনে পরিস্থিতি দেখে বিনিয়োগের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।


রিয়াদের একটি কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরব পাঁচ লাখ শ্রমিক নেওয়ার যে সংবাদ গণমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে, সেটি ঠিক নয়। কারণ, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌদি বাদশাহ ও দেশটির কর্মসংস্থানমন্ত্রীর বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে নির্দিষ্ট করে কত শ্রমিক নেওয়া হবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়নি। ওই আলোচনাগুলোয় সৌদি আরবের চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে আরও দক্ষ, আধা দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক নেওয়ার প্রসঙ্গটি এসেছে। বাংলাদেশের যেসব শ্রমিক সৌদি আরব যাবেন, তাঁরা যাতে কোনো মধ্যস্বত্বভোগীর খপ্পরে না পড়েন, সে বিষয়টিতে সৌদি কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দিয়েছে। সেই সঙ্গে ওই সব শ্রমিক যাতে সৌদি আরবে গিয়ে নির্যাতনের শিকার না হন, সেটিও নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। সব মিলিয়ে সৌদি আরবে অভিবাসন প্রক্রিয়ায় একটি স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে দুই দেশ রাজি হয়েছে।

আর বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য সৌদি আরবের ভিসা অবারিত হওয়ার প্রসঙ্গে এক কর্মকর্তা বলেন, এটি এখনই ঢালাওভাবে উন্মুক্ত হচ্ছে না। ভিসা পাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করবে ব্যক্তির ওপর। তা ছাড়া সৌদি আরবে বাংলাদেশের লোকজনের কাজ পাওয়াটা নির্ভর করবে কী পরিমাণ বিদেশি নাগরিকের সে দেশের প্রয়োজন, তার ওপর। এদিকে সৌদি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর সৌদি আরবের সবচেয়ে বড় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আল বায়ান গ্রুপের সঙ্গে জনশক্তি রপ্তানির বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে সেনা কল্যাণ সংস্থা। ওই সমঝোতা স্মারকের আওতায় বাংলাদেশ থেকে প্রকৌশলী, দক্ষ, আধা দক্ষ ও অদক্ষ নির্মাণশ্রমিক নিয়োগ করবে সৌদি প্রতিষ্ঠানটি।-প্রথম আলো

১০ জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে