শুক্রবার, ১০ জুন, ২০১৬, ০৪:৩৯:০৩

ছাপার সময় প্রশ্ন মুখস্থ করে বাইরে এসে ফাঁস!

ছাপার সময় প্রশ্ন মুখস্থ করে বাইরে এসে ফাঁস!

নিউজ ডেস্ক: সরকারি মুদ্রণালয়ের (বিজি প্রেস) মুদ্রণ শাখার একজন কর্মচারী প্রশ্ন ছাপানোর সময় সেই প্রশ্ন মুখস্থ করে বাইরে আসতেন। মুখস্থ করা প্রশ্ন বলতেন তাঁদের চক্রের আরেকজনকে। তা পরে আহমেদ নিলয় নাম দিয়ে (প্রকৃত নাম ইকরাম হোসাইন) সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া হতো। এতে কখনো মূল প্রশ্নের সঙ্গে অনেক প্রশ্ন মিলেছে কিংবা অল্প মিলেছে। ওই চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকার বিনিময়ে পাওয়া যেত কথিত ফাঁস হওয়া প্রশ্ন। আবার ফেসবুকে ওই আইডির সঙ্গে সংযুক্ত নির্ধারিত ব্যক্তিরা কথিত প্রশ্ন পেত টাকার বিনিময়ে। পুলিশের ভাষায়, এভাবে চক্রটি চলমান এইচএসসিসহ বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে টাকা কামাচ্ছিল। কথিত আহমেদ নিলয় অর্থাৎ ইকরাম হোসাইন, বিজি প্রেসের ওই কর্মচারীর ভায়রা কলেজশিক্ষক সাইফুল ইসলাম ওরফে জুয়েলসহ নয়জনের একটি চক্রকে গ্রেপ্তারের পর তাঁদের কাছ থেকে এসব জানার কথা বলেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।

তবে বিজি প্রেসের ওই কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য মুন্সিগঞ্জে তাঁর গ্রামের বাড়িতেও অভিযান চালানো হয় বলে জানিয়েছেন অভিযানের সঙ্গে যুক্ত ডিবির উপকমিশনার (উত্তর) শেখ নাজমুল আলম। তিনি বলেন, কোথা থেকে প্রশ্ন ফাঁস হয়, সেটাই বের করতে চান তাঁরা। গ্রেপ্তার করা অন্য সাতজন হলেন রুবেল ব্যাপারী, আবদুস সাত্তার, মেজবাহ আহমেদ, কাওছার হোসেন, আল-আমিন, হৃদয় হোসেন ও জাহাঙ্গীর। এঁদের মধ্যে একজন এইচএসসি পরীক্ষার্থীও রয়েছেন, তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহে। এরা বিজি প্রেসের ওই কর্মচারীকে নিয়ে একটি চক্র গড়ে তুলেছিলেন। পুলিশ বলছে, রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের সাত রাস্তার মোড়-সংলগ্ন ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সামনে থেকে ওই নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁদের এক দিন করে রিমান্ডে নিয়েছে ডিবি। বিজি প্রেসের ওই কর্মচারীর বিষয়টি বিজি প্রেস কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে ২০১৬ সালের এইচএসসি পরীক্ষার রসায়ন দ্বিতীয় পত্র, হিসাববিজ্ঞান প্রথম পত্র, পদার্থবিজ্ঞান (সৃজনশীল), জীববিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষার ভুয়া প্রশ্নপত্র এবং ১০টি বিভিন্ন মডেলের মুঠোফোন সেট উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে ১৯৮০ সালের পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইনের ৪/১৩ এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (সংশোধন) আইন, ২০১৩-এর ৫৭ ধারায় মামলা হয়েছে।

গতকাল সকালে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই চক্র ইমো, হোয়াটস অ্যাপ ও বিভিন্ন নামে ফেসবুকের মাধ্যমে ভুয়া প্রশ্নপত্র দিয়ে স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাইফুল ইসলাম ভুয়া প্রশ্নপত্র অনলাইনে পোস্ট করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ নেওয়ার এবং এই চক্রের নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন।

ডিবির উপকমিশনার (পশ্চিম) মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেন, গ্রেপ্তারকৃত নয়জনকে গতকাল ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে পাঠানো হয়। শুনানি শেষে আদালত এক দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠছে কয়েক বছর ধরে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেছেন, চলতি এইচএসসি পরীক্ষার কয়েকটি বিষয়ের পরীক্ষা শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে ফেসবুকের নির্ধারিত কিছু আইডির মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে পড়ছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে গত ২ মে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। চিঠিতে ফেসবুকের একটি বিশেষ আইডি বন্ধসহ দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, ২০১৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় সারা দেশে আলোচনার ঝড় উঠলে তদন্ত শুরু করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তদন্তে প্রমাণিত হয়, ঢাকা বোর্ডের অধীন এইচএসসি পরীক্ষার ইংরেজি ও গণিত (তত্ত্বীয়) দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নপত্র হুবহু ফাঁস হয়েছে।-প্রথম আলো

১০ জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে