নূর মোহাম্মদ: ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য আবেদনের সময় শেষ হলো গেল শুক্রবার। এবার একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য মোট আবেদন করেছে ১৩ লাখ ১ হাজার ৯৯ জন ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী। ৪৪ লাখ ৯২ হাজার ২২২টি আবেদন করেছেন তারা। ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের জ্যেষ্ঠ সিস্টেম অ্যানালিস্ট মনজুরুল কবীর এ তথ্য জানান। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত আবেদনের সময় থাকলেও পরে সময় সকাল ১০টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়। গত ২৬শে মে আবেদন নেয়া শুরু হয়েছিল। এবারও অনলাইনে ও মুঠোফোনে খুদে বার্তায় আবেদন নেয়া হয়েছে। জানা গেছে, অনলাইনে ৯ লাখ ৩৭ হাজার ৯৪৭ জন এবং এসএমএসের মাধ্যমে ৪ লাখ ৫ হাজার ৮৬৮ জন ভর্তিচ্ছু আবেদন করেছেন।
প্রায় সাড়ে চার হাজার প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা এ আবেদনগুলো করেছে। আবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অনলাইনে এবং এসএমএসের মাধ্যমে ১০টি করে মোট ২০টি কলেজে আবেদনের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ভর্তিচ্ছুরা গড়ে ৫টি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেছে। এর ফলে পর্যাপ্ত আসন থাকার পরও পছন্দের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কম দেয়ায় বিশেষ করে ঢাকার শিক্ষার্থীরা শঙ্কায় পড়তে পারে। ২০১৬ সালে ১৪ লাখ ৭৩ হাজার ৫৯৪ জন পরীক্ষার্থী পাস করেছে। কলেজে একাদশ এবং মাদরাসায় আলিমে ১৩ লাখ ১ হাজার ৯৯ জন আবেদন করেছে।
ভর্তির যোগ্যতা ও শাখা নির্বাচন: বিজ্ঞান শাখা থেকে বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা শাখার যেকোনো একটিতে মানবিক শাখা থেকে-মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা শাখার যেকোনো একটিতে, ব্যবসায় শিক্ষা থেকে উত্তীর্ণরা ব্যবসায় শিক্ষা এবং মানবিক শাখার যেকোনো একটি গ্রুপে ভর্তি হতে পারবে। বরাবরের মতো এবারও এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে একাদশ শ্রেণীর ভর্তিতে প্রার্থী নির্বাচন করা হবে। বিভাগীয় এবং জেলা সদরের কলেজগুলোতে মোট আসনের ৮৯ শতাংশ সাধারণ শিক্ষার্থীর জন্য উন্মুক্ত থাকবে। বাকি ১১ শতাংশ হলো ৫% মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, সন্তানের সন্তানদের জন্য। ৩% মফস্বল তথা জেলা সদর এবং বিভাগেরর বাইরের শিক্ষার্থীদের জন্য। ২% শিক্ষা মন্ত্রণালয়, এর অধীনস্ত দপ্তর, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক, কর্মচারী ও গভর্নিং বডির সদস্যদের জন্য। এবার নতুন করে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) জন্য শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ অনুরূপভাবে প্রবাসীর সন্তানদের জন্য শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ।
এসব কোটায় ভর্তি হতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং প্রতিষ্ঠান থেকে সরবরাহ করতে হবে। যার মাধ্যমে কোটায় আবেদন করা প্রার্থীকে শনাক্ত করা যায়। কোটায় প্রার্থী পাওয়া না গেলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারবে। সমান জিপিএ পেলে তাদের নম্বরের ভিত্তিতে মেধাক্রম তৈরি হবে। সাধারণ বোর্ডের মতো মাদরাসা, কারিগরি এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত গ্রেড ও নম্বর সমতুল্য হিসাব করতে হবে। বিজ্ঞান বিভাগে একাধিক প্রার্থীর জিপিএ এবং প্রাপ্ত নম্বর সমান হলে মেধাক্রম নির্ধারণে সাধারণ গণিত, উচ্চতর গণিত, জীববিজ্ঞানে প্রাপ্ত নম্বর বিবেচনা করা হবে। এতেও সমাধান না হলে পর্যায়ক্রমে ইংরেজি, পদার্থ, রসায়নে প্রাপ্ত নম্বর বিবেচনায় আনা হবে। এক গ্রুপ থেকে অন্য গ্রুপে ভর্তির ক্ষেত্রে জিপিএ এবং নম্বর একই হলে মেধাক্রম নির্বাচনে ইংরেজি, গণিত ও বাংলা বিষয়ের নম্বর দেখা হবে। স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্র অগ্রাধিকার পাবে। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ভর্তির পরে আসন খালি থাকা সাপেক্ষে ওপরের নিয়মানুযায়ী ভর্তি কার্যক্রম চলবে। মন্ত্রণালয় থেকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থী ভর্তি করবে। ইচ্ছামতো ভর্তি করার সুযোগ নেই।
ভর্তির সময়সূচি: ১৬ই জুন মনোনীতদের মেধানুযায়ী তালিকা আবেদনকৃত প্রতিটি প্রতিষ্ঠান প্রকাশ করবে। ১৮ থেকে ২২শে জুন মেধা তালিকা এবং ২৩ থেকে ৩০শে জুন পর্যন্ত অপেক্ষমাণ তালিকার ভর্তিচ্ছুরা পছন্দের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবে। তবে ১০ থেকে ২০শে জুলাই পর্যন্ত বিলম্ব ফি দিয়ে ভর্তির সুযোগ থাকছে। ১০ই জুলাই একাদশের শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হবে। ৭ থেকে ১৮ই আগস্টের মধ্যে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ রেজিস্ট্রেশন ও অন্যান্য ফি বোর্ডে জমা দিতে হবে। ২২-৩১শে আগস্ট ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ফি জমার স্লিপ বোর্ডে প্রদান করতে হবে।
ফল পাওয়া যাবে যেভাবে: শিক্ষার্থীদের ফলাফল ভর্তির আবেদনের সময় দেয়া মোবাইল নম্বরে ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে। ক্ষুদে বার্তায় একটি গোপনীয় পিন নম্বর প্রদান করা হবে। এই পিন নম্বরটি পরবর্তী ভর্তি নিশ্চয়নের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে। এছাড়াও শিক্ষার্থীর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার রোল নম্বর, বোর্ড, পাসের সন, রেজিস্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার করে ভর্তির ওয়েবসাইট (www.xiclassadmission.gov.bd) থেকে বিস্তারিত ফলাফল পাওয়া যাবে।
ভর্তি ফি: সেশন ফিসহ ভর্তি ফি সর্বসাকল্যে মফস্বল/পৌর (উপজেলা) এলাকায় ১ হাজার টাকা। পৌর (জেলা সদর) ২ হাজার টাকা। ঢাকা ছাড়া অন্যান্য মেট্রোপলিটন এলাকায় ৩ হাজার টাকা। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে সেশন ফিসহ ভর্তি ফি সর্বসাকল্যে ৫ হাজার টাকা। আংশিক এমপিওভুক্ত, এমপিও বহির্ভূত প্রতিষ্ঠানে উন্নয়ন ফিসহ বাংলা মাধ্যমে ৯ হাজার, ইংরেজি ভার্সনে ১০ হাজার টাকা। কোনোভাবেই উন্নয়ন ফি ৩ হাজারের বেশি হবে না। সকল প্রকার ফি রসিদ প্রদানের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হবে।
অন্যান্য ফির সঙ্গে বোর্ড থেকে নির্ধারিত আরো ফি: রেজিস্ট্রেশন ফি ১২০, ক্রীড়া ফি ৩০, বোভার/রেঞ্জার ফি ১৫, রেড ক্রিসেন্ট ফি ২০, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফি ৭, বিএনসিসি ফি টাকা ৫ টাকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করতে হবে। কোনো শিক্ষার্থীর পাঠ বিরতি থাকলে ১০০ টাকার সঙ্গে বিলম্ব ভর্তি ফি ৫০ টাকা প্রদান করতে হবে। শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে নীতিমালার কোনোরূপ ব্যত্যয় ঘটানো হলে বেসরকারি কলেজ ও সমমানের প্রতিষ্ঠানের পাঠদানের অনুমতি বা স্বীকৃতি বাতিলসহ কলেজটির এমপিওভুক্তি বাতিল করা হবে। সরকারি কলেজ বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে পূর্বে প্রকাশিত নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।-এমজমিন
১৪ জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ