বুধবার, ২২ জুন, ২০১৬, ০১:৫১:৪২

বিএনপিতে নতুন মেরূকরণ শুরু

বিএনপিতে নতুন মেরূকরণ শুরু

নিউজ ডেস্ক :কমিটি গঠনকে সামনে রেখে খুলনা বিএনপিতে নতুন মেরূকরণ শুরু হয়েছে। নেতৃত্ব প্রত্যাশীরা পৃথক পৃথকভাবে অনুসারীদের নিয়ে মাঠে নেমেছে। মহানগর ও জেলা বিএনপির নেতারা ঐক্যবদ্ধভাবে কোনো কর্মসূচি পালন করছেন না।

 মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতারা জেলার শাখা কর্মসূচিতে উপস্থিত না থাকলেও দ্বিতীয় সারির নেতাদের দেখা যায়। অরাজনৈতিক কর্মসূচিতেও একসঙ্গে দেখা যাচ্ছে না শীর্ষ নেতাদের। তবে নতুন উদ্যমে মহানগর বিএনপিতে সক্রিয় ভাবে মাঠে নেমে আলোচনায় এসেছেন নগর ছাত্র দলের এক সাবেক সভাপতি।

 বিএনপির দুর্গ খ্যাত খুলনায় ঐক্যবদ্ধতার চিরচেনা রূপ পাল্টে এভাবে শুরু হয়েছে নতুন মেরূকরণ। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩৫তম শাহাদাৎবার্ষিকী খুলনাতে পৃথকভাবে পালন করেছে মহানগর ও জেলা বিএনপি। এমনকি একে অন্যের কর্মসূচিতে উপস্থিতও ছিলেন না শীর্ষ নেতারা।

 এ নিয়ে খুলনা বিএনপি চার ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। সর্বশেষ ১৮ই জুন কেন্দ্র ঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচি নগরীর কেডি ঘোষ রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে খুলনা জেলা ও মহানগর বিএনপি পৃথক পৃথকভাবে পালন করেছে। সকালে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট এসএম শফিকুল আলম মনার নেতৃত্বে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন।

 অপরদিকে মহানগর বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জুর নেতৃত্বে দুপুরে একই স্থানে বিক্ষোভ করে। কিন্তু ইতিপূর্বে মনা ও মঞ্জুর মধ্যে খুবই ভালো সম্পর্ক ছিল। ব্যক্তিগত থেকে শুরু করে রাজনৈতিক সকল কর্মকাণ্ড যৌথভাবে পরিচালনা করতেন। হঠাৎ করে এই দুই নেতার মধ্যে ঠান্ডা লড়াই দেখা দেয়ায় নেতাকর্মীদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

গত ১১ই জুন জেলা বিএনপির উদ্যোগে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্মানে খুলনা ক্লাবে অনুষ্ঠিত হয় ইফতার ও দোয়া মাহফিল। সেখানে মহানগর বিএনপির সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের কাউকে দেখা যায়নি। তবে সাংগঠনিক সম্পাদক ফখরুল আলম উপস্থিত ছিলেন। সেখানে খুলনা মহানগর যুব দলের সাবেক সাধারণ সমপাদক ও নগর ছাত্র দলের সাবেক সভাপতি তরিকুল ইসলাম জহির তার অনুসারীদের নিয়ে উপস্থিত ছিলেন।


অপরদিকে, প্রেসিডেন্ট জিয়ার শাহাদাৎবার্ষিকীতে পৃথক কর্মসূচি পালন করেছেন মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহারুজ্জামান মোর্ত্তজা। আর সাবেক ছাত্র নেতা তরিকুল ইসলাম জহিরের নেতৃত্বে খুলনা প্রেস ক্লাবে শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া-মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

এ কর্মসূচিতে নব্বই-এর ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতাদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। দীর্ঘদিনে নগর বিএনপিতে কোণঠাসা কেসিসির নির্বাচিত বেশ কয়েক জন কাউন্সিলর সাবেক ছাত্র নেতা তরিকুল ইসলাম জহিরের নেতৃত্বে নতুন করে শোডাউন দিয়েছে। আবার, নগরীতে অনুষ্ঠিত জাতীয়তাবাদ আদর্শের বা জনসেবামূলক কর্মসূচিতে মহানগর বিএনপি নেতাদের উপস্থিতি না থাকলেও উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন জেলা বিএনপির কিছু নেতা।

 বৃহস্পতিবার খুলনা প্রেস ক্লাবের সামনে মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনা আয়োজিত সংবাদপত্রের কালো দিবসের কর্মসূচিতে দেখা যায়নি নগর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের। যদিও উপস্থিত ছিলেন নগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফকরুল আলম ও নগর যুবদলের সভাপতি শফিকুল আলম তুহিন। তবে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম মনার সঙ্গে নগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহারুজ্জামান মোর্ত্তজার রাজনৈতিক মেরূকরণের যোগসূত্রতা আছে কি না, তা নিশ্চিত নন নেতা-কর্মীরা।

 সুন্দরবন বাঁচাও আন্দোলন খুলনা নামের একটি পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ রক্ষার সংগঠন করেছেন নগর বিএনপির শীর্ষ নেতারা। সেখানেও ঠাঁই হয়নি জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের! এসব নিয়ে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে চলছে জোর গুঞ্জন। নাম প্রকাশ না করে দ্বিতীয় সারির একাধিক নেতা বলেন, দুটি কারণে মহানগর ও জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যকার দূরত্বের সৃষ্টি। প্রথমত, এক নেতার এক পদের ভিত্তিতে গত ৯ই এপ্রিল মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত করা হয়।

এরপর থেকে কেন্দ্রের ঘোষণা মোতাবেক নজরুল ইসলাম মঞ্জু আর সভাপতি থাকছেন না বলে নেতাকর্মীরা ধারণা করছেন। তিনি বিকল্প সভাপতি হিসেবে তার অনুসারী সিটি মেয়র মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনির কথাই প্রকাশ করছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। তবে মহানগর সিনিয়র সহ-সভাপতি সাহারুজ্জাান মোর্ত্তজাও সভাপতি প্রার্থী হিসেবে জোরালো দাবিদার।

আর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর অনুসারী সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ তরিকুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক ফকরুল আলম ও কোষাধ্যক্ষ আরিফুর রহমান মিঠু মাঠে রয়েছেন। এদের মধ্যে অধ্যক্ষ তরিকুল ইসলাম নিজেকে নজরুল ইসলাম মঞ্জু’র সমর্থিত প্রার্থী দাবি করেন। তবে মঞ্জু বলেন, আমার পছন্দের কোনো প্রার্থী নেই।  তিনি কারোর পক্ষে মুখ খুলছেন না।

 এর বাইরে মহানগর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম জহির তার অনুসারীদের নিয়ে পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করছে। তার অনুসারীরা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জহিরের নাম ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে। দ্বিতীয়ত. খুলনা মহানগর ছাত্রদলের মডেল কমিটি গঠনের চেষ্টা করা। কর্তৃত্ব ও কৃতিত্বের এ দুইয়ের মনোস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন নগর ও জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতারা।

 এ ব্যাপারে খুলনা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট এসএম শফিকুল আলম মনা বলেন, ‘মহানগরের সঙ্গে জেলা বিএনপি’র কোনো দূরত্ব আছে বলে আমি মনে করি না। বিএনপি দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠন, তাই পৃথকভাবে কর্মসূচি পালিত হতেই পারে।

 আমরা নিজস্ব ভাবেই সংগঠিত। কেউ আমাদের পরগাছা ভাবলে ঠিক হবে না। আমাদের ইউনিয়ন, উপজেলা ও পৌরসভা পর্যায়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে। আমরা গত ১৭ই মে থেকে কেন্দ্রীয় সকল কর্মসূচি পৃথক পৃথকভাবে পালন করছি। জেলা কমিটির ব্যানারে এখন থেকে সকল কর্মসূচি পালিত হবে। খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, মহানগর ও জেলা বিএনপির নেতাদের মধ্যে তেমন কোনো বিরোধ নেই।

পৃথক পৃথকভাবে সাংগঠনিক কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। মহানগর কমিটি প্রসঙ্গে বলেন, কেন্দ্রের নির্দেশে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হবে। সেক্ষেত্রে এক নেতা এক পদ নিয়ম মানা হলে কমিটিতে ব্যাপক পরিবর্তন হবে। সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে চার নেতার দৌড়ঝাপ প্রসঙ্গে বলেন, সবাই দলের নিবেদিত।

এখানে আমার ব্যক্তিগত কেউ পছন্দের নেই। তবে যোগ্য ব্যক্তিকেই সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত করা হবে। উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২৩শে নভেম্বর মহানগর এবং পরদিন ২৪শে নভেম্বর জেলা কমিটির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। গত ৪ঠা মার্চ জেলা এবং ৫ই মার্চ মহানগর বিএনপির সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল।-এম জমিন

 

২২জুন২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/এআর

 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে