শুক্রবার, ২৪ জুন, ২০১৬, ০১:৪৯:০৫

ভালো কলেজে ভর্তির আশায় ঢাকা বোর্ডে অভিভাবকদের ভিড়

ভালো কলেজে ভর্তির আশায় ঢাকা বোর্ডে অভিভাবকদের ভিড়

নূর মোহাম্মদ: যে তদবির আর বাণিজ্য বন্ধ করতে একাদশ শ্রেণির ভর্তিতে অনলাইন পদ্ধতি চালু করা হয়েছে, সেখানেই চলছে এখন প্রভাবশালীদের তদবির। আগে যেখানে সরাসরি কলেজ কর্তৃপক্ষকে চাপ দেয়া হতো এখন  দেয়া হচ্ছে শিক্ষা বোর্ডকে। চাপের কারণে স্বাভাবিক কাজ করতে পারছেন না বোর্ড কর্মকর্তারা। গতকাল (বৃহস্পতিবার) ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে সরজমিন গিয়ে বোর্ড চেয়ারম্যান, কলেজ পরিদর্শক, সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্টের রুমের সামনে দেখা যায় কয়েকশ’ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের লম্বা লাইন। চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছেন কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, অনলাইন পদ্ধতিতে নিয়মের বাইরে গিয়ে ভর্তির সুপারিশ করার কোনো সুযোগ নেই। তারপরও আমলা, এমপি এমনকি মন্ত্রী পর্যন্ত তদবির করছেন এজন্য। কেউ প্রভাবশালী কারও ভিজিটিং কার্ড, কেউ এমপি বা মন্ত্রীর ডিও লেটার নিয়ে তদবির করছেন পছন্দের কলেজে ভর্তির জন্য । এমনকি কেউ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের রুমে গিয়ে প্রভাবশালীদের ফোন ধরিয়ে দিচ্ছেন।

গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকাল সাড়ে ১০টায় পুরো ভর্তিপ্রক্রিয়া সমন্বয় করা কর্মকর্তা ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. আশফাকুস সালেহীনের রুমে গিয়ে দেখা যায় অভিভাবকদের জটলা। রুমের ভেতরে তাদের ভিড়ে রুমের ভেতর পা রাখার জায়গা নেই। অফিস সহকারীরা রুমে ঢুকতে নিষেধ করেও তাদের আটকাতে পারছেন না। বরং উল্টো ধমক খেতে হচ্ছে। একজন অভিভাবক তার সন্তানকে আদমজী কলেজে ভর্তির সুপারিশ করছেন। তার আরজি, কলেজ পরিদর্শক সুপারিশ করে দিলে তার ছেলের ভর্তি নিশ্চিত হয়ে যাবে। এজন্য তার ভর্তির কাগজে কলেজ পরিদর্শকের লিখিত সুপারিশ চাচ্ছেন। অথচ তিনি তার সন্তানকে ভর্তির প্রাথমিক ধাপ অনলাইন আবেদন পর্যন্ত করেননি। অবশ্য ওই অভিভাবকের দাবি, তার সন্তান অনলাইনে আবেদন করেছে কিন্তু এখন সেটি দেখা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় বিব্রত হয়ে কলেজ পরিদর্শক বলেন, এই কাজটি আমার পক্ষে কোনো অবস্থায় করা সম্ভব না। কারণ, অনলাইনে আবেদন করা ছাড়া একজন শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারবেন না। তারপরও তিনি আমার লিখিত সুপারিশ চাচ্ছেন। এটা আমার পক্ষে সম্ভব না।

একই সময় বাংলাদেশ তাতী লীগের সাধারণ সম্পাদক পরিচয়দানকারী একজন নারীনেত্রী আসেন কক্সবাজার থেকে। ভর্তিচ্ছুক এক মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে নিয়ে আসেন। তার স্বামীর স্থানীয় এমপিসহ ডজনখানের নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে বলে পরিচয় দেন। তিনিও অনলাইনে আবেদন করেননি। কিন্তু পছন্দের কলেজে ভর্তির কোটা নিশ্চিত করার সুপারিশ করেন। এরপরও যেকোনো উপায়ে কাজটি করে দিতে হবে বলে রীতিমতো হুমকি দিয়ে যান। তাদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে টেলিফোন ও তার মোবাইলে ফোনে আরও কয়েকটি ফোন আসে। সবগুলো ভর্তির সংত্রুান্ত তদবিরের। একজন নিজেকে সিটি কপোরেশনের সচিব পরিচয় দিয়ে বলেন, তার আত্মীয় চারটি কলেজে অপেক্ষামাণ তালিকায় রয়েছে। সে যেন একটি ভালো কলেজ ভর্তি হতে পারে সেটি নিশ্চিত করতে কলেজ পরিদর্শকে বলেন।

এছাড়া আরও তিনটি মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ডজনখানের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ফোন করেন। এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. আশফাকুস সালেহীন বলেন, সবাই চায় তার সন্তানকে ভাল প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাতে। কিন্তু সেটি তো সম্ভব না। এজন্য নানা জায়গা থেকে তদবির আসে। সেগুলো আমরা নানা কৌশলে এড়িয়ে যাই। কেউ তদবির নিয়ে আসলে তাকে বের করে দেয়া সম্ভব হয় না। বোর্ড কর্মকর্তাদের শঙ্কা, দ্বিতীয় মেধা তালিকা এবং উন্মুক্ত করে দেয়ার পর এই তদবির আরও বেড়ে যেতে পারে। এজন্য খুব দ্রুত সময়ে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করার দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন তারা।


ভুল আবেদনের হিড়িক: এদিকে কলেজ পরিদর্শকের রুমে কয়েক হাজার ভুল আবেদন জমা পড়েছে। এরাই সবাই আবেদন করার জন্য নানা ধরনের ভুল করেছেন। সবচেয়ে বেশি ভুল করেছে কোটা পদ্ধতি পছন্দ করার ক্ষেত্রে। কারণ, অধিকাংশ ভর্তিচ্ছুরা শিক্ষা কোটা নামে যে কোটা আছে সেটি পূরণ করেছে। কলেজ পরিদর্শন বলেন, অনেক শিক্ষার্থী বুঝতে পারেনি শিক্ষা কোটা আসলে কী। এজন্য আবেদনের সময় তারা শিক্ষা কোটা পূরণ করেছে। কলেজ ভর্তির সময় এর পক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজ দেখাতে না পারায় সবাই বোর্ডে এসেছে। সবার আবেদন আমরা জমা রাখছি।

দ্বিতীয় তালিকায় তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী কলেজ মনোনীত করে দেয়া হবে। তিনি জানান, যারা ভুল করেছে তাদের প্রথম তালিকায় ভর্তি হওয়ার সুযোগ নেই। কী রকম আবেদন জমা পড়েছে জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রতিদিনই কয়েকশ’ আবেদন আসছে। তিনি জানান, এরপর ভুল করেছে বিভাগ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে। বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ভুলে মানবিক কিংবা বাণিজ্যে একই ভুল করেছে অন্য বিভাগের ভর্তিচ্ছুরা। তবে সবাই ভর্তি হতে পারবে। এটি দ্বিতীয় তালিকায় সংশোধন করে দেয়া হবে।-এমজমিন

২৪ জুন, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে