রবিবার, ২৬ জুন, ২০১৬, ০১:১৭:৩৮

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে সর্ব সাধারণের ইফতার

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে সর্ব সাধারণের ইফতার

আলমগীর কবির: সারাদিন রমজানের রোজা পালনের পর ইফতার নিয়ে অন্যরকম একটি ভাবনা থাকে সবার মনে। আর্থিক অবস্থা যাই হোক ইফতারের আয়োজনটা হয় প্রত্যেকের সাধ্যের সেরাটা দিয়ে। কিন্ত হঠাৎ যখন পথে ঘাটে ইফতার করতে হয় তখন পরিকল্পনার বাইরে অনেক কিছু যোগ হয়, এতে জানা যায় বাইরের মানুষের সাথে ভিন্ন পরিবেশে ইফতারের অভিজ্ঞতা। এই যেমন, গত শুক্রবার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে গিয়ে দেখা গেল, ইফতারের আধা ঘণ্টা আগে থেকেই মানুষ জমায়েত হচ্ছেন মসজিদ প্রাঙ্গণে। উদ্দেশ্য ইফতার করা। আসা এবং বসার ধরন দেখে মনে হবে, পূর্বে দাওয়াত করা মেহমান। কিন্ত কেউ দাওয়াতি নন। নিজ উদ্যেগেই মসজিদের ইফতারে যোগ দিতে এসে গেছেন উপস্থিত সবাই। আগতদের একজন জিয়াউল হক ইফতারে মিনিট ১০ আগে অজু করে মসজিদের ভেতরে গিয়ে এদিক ওদিক ছুটছিলেন। কাতারে কাতারে মানুষ ইফতার সামনে নিয়ে পাশাপাশি বসে আছে। তিনি কোথায় বসবেন, বুঝে উঠতে পারছিলেন না। এমন সময় একজন এগিয়ে এলেন, তাকে সাদরে ইফতার আয়োজনে শরিক হওয়ার অনুরোধ করলেন। অপরিচিত একজন লোক এভাবে ইফতারে অংশ নেয়ার জন্য ডাকছিলেন ভেবে জিয়াউল হক অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। দু’এক মিনিটের মধ্যে তিনি বুঝতে পারলেন অন্য সবাই তার মতো এই ইফতারে অংশ নিয়েছেন বা নিচ্ছেন। কেউ এখানে দাওয়াতি মেহমান নয়। এখানে যারাই আসছেন প্রত্যেকেরই সাদরে ইফতার গ্রহণের ব্যবস্থা রয়েছে।

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের এমন দৃশ্য রমজান মাসজুড়েই দেখা যায়। দৈনিক ইফতারের আগে মসজিদের উত্তর-পূর্ব খোলা জায়গায় মানুষের ঢল নামে। মানুষ অজু করে আর সেখানে গিয়ে বসে পড়ে। যারা মাগরিবের আজানের আগে উপস্থিত হয়েছেন তাদের সবার জন্য ইফতারের সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। আজান হলো। প্রায় হাজার খানেক মানুষ, সবাই নীরব। ধনী গরিব সবাই এক সাথে ইফতার করেছেন। এ যেন নতুন এক পৃথিবী, এতগুলো রোজাদার একসাথে ইফতার করছেন। চোখ জুড়িয়ে যায়! একসাথে বড় ডিশে বসে বহু মানুষ ইফতার করছে, কেউ কাউকে চেনেন না, কোনো দিন কথাও হয়নি। এর পরও সবাই সবার যেন অতি আপন। একজন আরেকজনকে এগিয়ে দিচ্ছে ইফতার সামগ্রী। এমন সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ দেখে সত্যিই এই বর্ষার ঘোমট আবহওয়ার মধ্যেও মনের শীতল হাওয়ার পরশ লাগবে। এখানে প্রতিদিন আশপাশের দোকানের লোকজন, গুলিস্তান এলাকায় কেনাকাটা করতে আসা মানুষ, ভিক্ষুক, ভবঘুরে, এতিম, মিসকিন কেউ ইফতার থেকে বাদ যায় না। অনেক মুসল্লি, পথচারী, ব্যবসায়ী, ছাত্র ও পেশাজীবীও এখানে ইফতার করেন। জিয়াউল হকের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমি বায়তুল মোকাররম মার্কেটে কেনাকাটার জন্য এসেছি। সেখান থেকে মসজিদের ভেতর প্রবেশ করে এসে এত মানুষ একসাথে ইফতারের আয়োজন দেখে অবাক হলাম। প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে খুব ভালো লেগেছে।’ জিয়াউল হকের এই ধরনের ইফতারের অভিজ্ঞাতা ওটাই ছিল প্রথম। তবে জাতীয় মসজিদের ইফতারে অংশগ্রহণকারীদের অনেকেই আছেন, যারা নিয়মিত পরিকল্পনা করেই এখানে ইফতার করেন। এই দলে ফুটপাথবাসী, রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে নিকট দূরত্বে বসবাসরত অনেক ছাত্রদেরকেও দেখা যায়। নিয়মিত ইফতারে অংশগ্রহণকারীদের একজন মেহেদী হাসান। ঢাকা কলেজে অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে। প্রতিদিন জাতীয় মসজিদে ইফতার করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সারা দিন রোজা রাখার পর এত লোক একসাথে ইফতার করার শান্তিই আলাদা। তাই এখানে ইফতার করার জন্য ছুটে আসি। বাসায় দুই একজন মিলে ইফতার করার চেয়ে আমার কাছে এই জায়গাটা অনেক ভালো মনে হয়।’

ইফতারের আয়োজন কিভাবে হয় : ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীন ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা) জাতীয় মসজিদে ইফতারের আয়োজন করে। রমজান শুরুর আগেই টেন্ডারের মাধ্যমে জাতীয় মসজিদে ইফতার সরবরাহ বাবদ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। সে অনুযায়ী দুটি প্রতিষ্ঠান ইফতার সরবরাহ করে থাকে। প্রতিদিনের ইফতারে ছয়টি আইটেমের মধ্যে থাকছে শরবত, খেজুর, ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজু ও কলা। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একজন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন বায়তুল মোকাররম মসজিদে দুই থেকে আড়াই হাজার মানুষের ইফতারের ব্যবস্থা করা হয়। এই বিশাল আয়োজন সুশৃঙ্খলভাবে করতে ইফার পক্ষ থেকে পাঁচজন কর্মকর্তা, প্রায় ১৫ জন কর্মচারী ও ২০ জন খাদেম প্রতিদিন কাজ করে থাকেন।-নয়া দিগন্ত
২৬ জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর

আলমগীর কবির

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে