নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশে পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা বেগম মিতুর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে দু’জনের গ্রেফতার এবং আদালতে তাদের স্বীকারোক্তির বিষয়ে পুলিশের ব্রিফিং আলোচিত এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন মিতু হত্যা মামলার তদন্তকারীরা তিনটি প্রশ্নর উত্তর খুঁজছেন। আর তা হল- পেছনে কে বা কারা? কারা খুনিদের ভাড়া করেছিল? কেন খুন করা হয়?
হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বাবুল আক্তারকে ‘জিজ্ঞাসাবাদ’ এবং এরপর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাঁর জড়িত থাকার ইঙ্গিত কিছু গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার ফলে গুঞ্জনই কেবল বাড়ছে।
নানা রকম প্রশ্ন উঠছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, কিন্তু প্রশ্নের নিরসন তো দূরের কথা, পুলিশ আর কর্তাব্যক্তিদের নানা বক্তব্য বরং নতুন প্রশ্ন উস্কে দিচ্ছে।
চট্টগ্রামের পুলিশ দাবী করছে যে ওয়াসিম নামের একজন পেশাদার অপরাধী মাহমুদা বেগম মিতুকে গুলি করে হত্যা করেছে।
ওয়াসিমের সহযোগী হিসেবে মোঃ আনোয়ার নামের একজনকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের বক্তব্য দু’জনেই আদালতে জবানবন্দী দিয়ে অপরাধ স্বীকার করেছে।
মাহমুদা বেগম মিতুর হত্যার পুলিশের প্রথম ধারণা ছিল ‘জঙ্গী দমনে সফল’ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের প্রতি প্রতিশোধ নিতে জঙ্গীরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে।
কিন্তু গ্রেফতার হওয়া দু’জন জঙ্গীদের সঙ্গে সম্পর্কিত - এমন কোন দাবী পুলিশ করছে না। তাহলে এই দু’জন কথিত পেশাদার ভাড়াটে খুনী মাহমুদা বেগম মিতুকে কেন খুন করবে? কার বা কাদের হয়ে এই দু’জন ভাড়া খেটেছেন?
আর সরাসরি গুলি না করে কেন ঐ নারীকে কোপানো হলো? তা কি এই ঘটনা জঙ্গীদের সাথে সম্পর্কিত দেখানোর জন্যেই?
সম্প্রতি পদোন্নতি পেয়ে বাবুল আক্তার পুলিশ সুপার হয়েছেন। এটি পুলিশের কমান্ড কাঠামোতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তর।
এই স্তরের একজন কর্মকর্তার স্ত্রীকে হত্যার ঘটনা কোন কারণ ছাড়া ঘটতে পারে না বলেই বিশ্বাস করেন পুলিশেরই অনেক কর্মকর্তা। তাহলে কার নির্দেশে ঘটেছে এই হত্যাকাণ্ড?
গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, কার নির্দেশে খুন, জেনেও তা বলছে না পুলিশ। পুলিশ যদি কিছু জেনেও থাকে, তাহলে তারা কেন কিছু বলছে না?
বাবুল আক্তারকে শুক্রবার রাতে ঢাকায় তাঁর শ্বশুরের বাসা থেকে নিয়ে গিয়ে পনের ঘণ্টা ধরে ‘জিজ্ঞাসাবাদ’ করা হয়েছিল।
একজন এসপি’কে স্ত্রী হত্যা সম্পর্কিত বিষয়ে ‘জিজ্ঞাসাবাদ’ করা হলেও দীর্ঘ সময় ধরে পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলা হয়নি।
শেষ পর্যন্ত এ বিষয়ে মুখ খুলতে হয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে, যিনি প্রশ্নের সামনে পড়ে সাংবাদিকদের জানান যে সন্দেহভাজনদের মুখোমুখি করতে তাকে গোয়েন্দা দপ্তরে নেয়া হয়েছে।
কিন্তু এরই মধ্যে কিছু সংবাদমাধ্যম স্ত্রী হত্যার সঙ্গে স্বয়ং বাবুল আক্তারকে জড়িয়ে খবর প্রকাশ করে, গুঞ্জন তোলে নির্মমভাবে নিহত স্ত্রী সম্পর্কেও।
পুলিশের পক্ষ থেকে কোন আনুষ্ঠানিক বক্তব্য না থাকায় ঐ সব গুজব-গুঞ্জন ছাপা হয় খবর হিসেবে। তীব্র সমালোচনা হয়েছে কোন কোন সংবাদমাধ্যমের। চট্টগ্রামের পুলিশ বলছে, মিতু হত্যায় সাত-আট জন অংশ নিয়েছিল।
পুলিশের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা মনে করেন, তদন্তকারীদের এখন খুঁজে বের করতে হবে ঘটনার পেছনে কে রয়েছে, কারণ সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো – কারা এদের ভাড়া করেছিল।
আর যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, জবানবন্দীতে তারা কাদের নাম বলেছে, আর যাদের এখনো গ্রেফতার করা যায়নি, গ্রেফতার হলে তারা কাদের নাম বলবে – ঐ কর্মকর্তা মনে করছেন এ সবই হবে এই হত্যা রহস্য উন্মোচনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
বাবুল আক্তারের স্ত্রীর হত্যার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, হত্যাকারীদের ছাড়া হবে না। তবে এটা হয়তো এখন অনেকটাই নির্ভর করছে অনেকগুলো প্রশ্নের জবাব পাওয়ার ওপর। -বিবিসি
২৮ জুন, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম