মঙ্গলবার, ২৮ জুন, ২০১৬, ১১:৩২:৪৮

এবার জার্মানির নিষেধাজ্ঞা

এবার জার্মানির নিষেধাজ্ঞা

নিউজ ডেস্ক : বিমানবন্দর ও উড্ডয়ন নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ‘উচ্চ ঝুঁকির’ দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে এখান থেকে আকাশপথে সরাসরি পণ্য পরিবহন (কার্গো) বন্ধ করে দিয়েছে জার্মানি।

জার্মানির বিমান সংস্থা লুফথানসা এয়ারলাইনস গত রোববার ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
জার্মানির এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানিতে প্রভাব পড়বে বলে জানিয়েছেন তৈরি পোশাক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ। কারণ, বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে একক দেশ হিসেবে জার্মানি দ্বিতীয় বৃহত্তম।

এর আগে গত ডিসেম্বরে অস্ট্রেলিয়া ও মার্চে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশ থেকে আকাশপথে কার্গো পাঠানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। পরে যুক্তরাজ্যের পরামর্শে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার, বিশেষ করে কার্গো স্ক্যানিং আন্তর্জাতিক মানে নেওয়ার লক্ষ্যে ওই দেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রেডলাইনকে নিয়োগ করা হয়।

রেডলাইন কাজ শুরুর তিন মাসের মাথায় জার্মানির এই সিদ্ধান্তে বড় ধাক্কা খেয়েছে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। কারণ, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্য সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করে নিরাপত্তার ‘আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে’ ঘাটতি থাকায়।

কিন্তু জার্মানির বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (এলবিএ—লুফৎফার্ট বুন্ডেসাম্ট অথরিটি) বার্লিন দপ্তর থেকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে আকাশপথে পাঠানো পণ্য ও চিঠিপত্রকে ‘অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে জার্মানির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা। এ কারণে বাংলাদেশকে উড্ডয়ন নিরাপত্তার ক্ষেত্রে উচ্চ ঝুঁকির দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই চিঠির (২৪ জুন সই করা) পর থেকে জার্মানির যেকোনো বিমানবন্দরে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি আকাশপথে পাঠানো পণ্য ও ডাককে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন গতকাল সোমবার  বলেন, জার্মানির এই সিদ্ধান্তের বিষয়টি জার্মান কর্তৃপক্ষ গতকাল পর্যন্ত বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বা মন্ত্রণালয়কে কিছু জানায়নি। তবে লুফথানসা এয়ারলাইন রোববার বাংলাদেশ বিমান কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে যে এখান থেকে কার্গো নেওয়ার ক্ষেত্রে জার্মান কর্তৃপক্ষ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, গত ২৪ মার্চ থেকে যুক্তরাজ্যের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রেডলাইন বিমানবন্দরের নিরাপত্তার মান আরও উন্নত করতে কাজ করছে। এরপর হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা ও পণ্য স্ক্যানিংয়ে অনেক উন্নতি হয়েছে।

ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলোও বলছে, তারা গতকাল পর্যন্ত জার্মান কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে কোনো চিঠি পায়নি। তবে শাহজালাল বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ও কার্গো ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, তারা রোববার জার্মান কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত-সংক্রান্ত চিঠি পেয়েছে।

বিমানবন্দর সূত্র বলেছে, এখন ঢাকা থেকে কেবল লুফথানসা এয়ারলাইন সপ্তাহে দুটি কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা করে। এর মধ্যে বেশির ভাগই থাকে তৈরি পোশাক।

বিজিএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ নাছির বলেন, জার্মানির এ সিদ্ধান্তে তাঁরা উদ্বিগ্ন। কারণ, বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে একক দেশ হিসেবে জার্মািন দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার। যুক্তরাষ্ট্রের পরই এর অবস্থান। গত বছর বাংলাদেশ থেকে জার্মানিতে ৪৩৬ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এর একটা অংশ গেছে আকাশপথে।

তিনি বলেন, কোনো কারণে পণ্য তৈরিতে দেরি হলে শিপমেন্ট বাতিল বা জরুরি কারণে তৈরি পোশাক আকাশপথে পাঠানো হয়। এই অবস্থায় জার্মানির সিদ্ধান্ত রপ্তানিতে অনেক প্রভাব ফেলবে।

বিমান মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, এর আগে অস্ট্রেলিয়া যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থার উন্নতির ফলে দেশটির সরকার তা শিথিল করে।

গত ৫ মে ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশন এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠিয়ে বিষয়টি জানায়। নতুন অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় একটি দেশ ঘুরে অস্ট্রেলিয়াতে কাের্গা যাবে। ওই তৃতীয় দেশে পণ্য পুনরায় স্ক্যানিং করা হবে। কিন্তু জার্মানিতে তৃতীয় দেশে পুনরায় স্ক্যানিং করে কার্গো পাঠানো যাবে কি না, সে বিষয়ে ওই দেশের কর্তৃপক্ষের পাঠানো চিঠিতে কিছু বলা হয়নি।- প্রথম আলো
২৮ জুন, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে