আশরাফুল হক রাজীব ও আবুল কাশেম : দ্বিগুণ বেতন বাড়িয়েও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মন পাচ্ছে না সরকার। ক্যাডার থেকে নন-ক্যাডার, মধ্যম সারি থেকে নিম্ন সারির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চরম অসন্তুষ্ট। কারণ টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল হয়েছে। সরকার সমর্থক কর্মচারী সংগঠন থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মচারীরাও টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন। এসব বিষয় পর্যালোচনার জন্য ২৬টি ক্যাডার ও বিভিন্ন ফাংশনাল সার্ভিসের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) সমন্বয় কমিটি বৈঠকে বসবে আজ। একই দিনে কর্মচারীদের বিভিন্ন সংগঠন জরুরি বৈঠক ডেকেছে।
এদিকে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাদ দেয়ার পক্ষে ১২টি যুক্তি তুলে ধরে অর্থ বিভাগের তৈরি করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লোকসানের চেয়ে বরং লাভই হবে। নতুন বেতন কাঠামোতে টাইম স্কেল বহাল থাকলে ২০ নম্বর গ্রেডের একজন কর্মচারী চাকরির আট বছর পূর্তিতে ১১,৩৮০ টাকা, ১২ বছর পূর্তিতে ১৩,৩৬০ টাকা ও ১৫ বছর পূর্তিতে ১৫,১৫০ টাকা বেতন পেতেন। এখন তিনি প্রতিবছর টাইম স্কেল বাদ দিয়ে ৫ শতাংশ হারে চক্রবৃদ্ধি ইনক্রিমেন্ট পাবেন। এতে আট বছর পর ২০ নম্বর গ্রেডভুক্ত ওই কর্মচারীর বেতন হবে ১২,২৪০ টাকা, ১২ বছর পূর্তিতে ১৪,৯০০ টাকা ও ১৫ বছর পূর্তিতে ১৭,২৭০ টাকা। অর্থাৎ টাইম স্কেল বাদ দেয়ায় তিনি আখেরে লাভবানই হবেন। এ হিসাব তুলে ধরে অর্থ বিভাগ বলছে, যাঁরা ব্লক পদে চাকরিরত তাঁরাও স্বীয় স্কেলে এই ক্রমপুঞ্জিত আর্থিক সুবিধা পাবেন, যা জটিল টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড থেকে সহজলভ্য।
টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিলে ক্ষোভ : সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) সমন্বয় কমিটির মহাসচিব ফিরোজ খান প্রতিবেদককে বলেন, 'অনুমোদিত বেতন স্কেলে মূল বেতনের ওপর একটি নির্দিষ্ট হারে আর্থিক সুবিধা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। যে কর্মকর্তা নিয়মিতভাবে পদোন্নতি পাবেন, তাঁর ক্ষেত্রেও এ সুবিধা প্রযোজ্য। নিয়মিত পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রতিটি পদোন্নতিতে উচ্চতর বেতন স্কেলে যাবেন এবং ওই ধাপের মূল বেতনের নির্ধারিত হারে তিনি আর্থিক সুবিধা পাবেন। আর যে কর্মকর্তা পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হবেন তিনি পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তার তুলনায় নিচের স্তরের বেতন স্কেলের নির্ধারিত হারে আর্থিক সুবিধা পাবেন। তাই সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাতিল করা একটি চরম বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত। কারণ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিজস্ব ক্যাডার তফসিলের নির্ধারিত পদে (লাইন পদে) পদোন্নতি দেয়া হয় না। এর পরিবর্তে সরকারের বিশেষ পদ হিসেবে চিহ্নিত উপসচিব বা তদূর্ধ্ব পর্যায়ের নির্ধারিত পদের চেয়ে অতিরিক্তসংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়। আর পদ না থাকার অজুহাতে অন্যান্য ক্যাডার ও ফাংশনাল সার্ভিসের কর্মকর্তাদের বছরের পর বছর এমনকি এক যুগেরও বেশি সময় একই পদে বসিয়ে রাখা হয়। ফলে একই ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে বেতনবৈষম্য সৃষ্টি হয়। সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেলের কারণে একজন কর্মকর্তা পদোন্নতি না পেলেও নিজ ব্যাচের কর্মকর্তার সঙ্গে সৃষ্ট বেতনবৈষম্য নিরসনের সুযোগ পান। তাই আমাদের দাবি হচ্ছে, প্রশাসন ক্যাডারের মতো অন্যান্য ক্যাডারে সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করে পদোন্নতি দেয়ার পর টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড তুলে দেয়া যেতে পারে, তার আগে নয়।'
২৬টি ক্যাডার ও বিভিন্ন ফাংশনাল সার্ভিসের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) সমন্বয় কমিটির একজন সদস্য বলেন, 'সরকারের বেতন স্কেল শুরু হয় গ্রেড-১ থেকে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি গ্রেড-১-এর ওপরে আরো দুটি বেতন ধাপ রাখা হয়েছে। গ্রেড-১-এ অবস্থানকারী কর্মকর্তার তুলনায় মন্ত্রিপরিষদসচিব, মুখ্য সচিব ও সিনিয়র সচিবরা জ্যেষ্ঠ হওয়ায় তাঁরা একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের সম্মানী ভাতা পান। কিন্তু যেকোনো ক্রমধারায় এক-এর ওপরে কোনো অবস্থান থাকতে পারে না। প্রস্তাবিত বেতন স্কেলে এমন অদ্ভুত ক্রমধারা সংযোজন করে 'সুপারগ্রেড' সৃজন করা হয়েছে। সিনিয়র সচিব ও গ্রেড-১ পদের মধ্যে বেতনবৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে। সিনিয়র সচিবদের গ্রেড-১-এর ওপরে রাখা কোনোভাবেই সমীচীন হবে না। মন্ত্রিপরিষদসচিব, মুখ্য সচিব ও সিনিয়র সচিবদের জন্য নির্দিষ্ট সম্মানী ভাতা রেখে গ্রেড-১ থেকে বেতন কাঠামো সাজানোর জন্য বিসিএস সমন্বয় কমিটি দাবি জানাবে। এর আগে গত ৬ আগস্ট বিসিএস সমন্বয় কমিটি বৈঠক করেও গ্রেড-১-এর ওপরে কোনো সুপারগ্রেড না রাখার দাবি জানিয়েছিল।
গত সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনুমোদিত পে স্কেল ও গ্রেডের পরিবর্তে সবার জন্য বিভিন্ন হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। নিচের দিকের কর্মচারীরা বেশি ইনক্রিমেন্ট পাবেন। আর ওপরের দিকের কর্মকর্তাদের জন্য এ ইনক্রিমেন্ট কমে যাবে। সবচেয়ে বেশি ইনক্রিমেন্ট হবে ৫ শতাংশ। ২০ থেকে ষষ্ঠ গ্রেডের কর্মচারীরা এ ইনক্রিমেন্ট সুবিধা পাবেন। গ্রেড-৫-এর জন্য ইনক্রিমেন্ট ৪.৫ শতাংশ। গ্রেড-৩ ও ৪-এর কর্মকর্তাদের ইনক্রিমেন্ট হবে ৪ শতাংশ। এ ছাড়া দ্বিতীয় গ্রেডের কর্মচারীরা ৩.৭ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট পাবেন। প্রথম গ্রেডের কর্মকর্তাদের কোনো গ্রেড থাকবে না।
বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের কার্যকরী সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূইয়া মিলন এই প্রতিবেদককে বলেন, নিচের দিকের কর্মচারীদের বেশি ইনক্রিমেন্ট হবে- এটা সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ভুল ব্যাখ্যা। কারণ দ্বিতীয় গ্রেডের কর্মচারীরা ৩.৭ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট পাবেন। এই গ্রেডের কর্মচারীর মূল বেতন ৬৬ হাজার টাকা। ৩.৭ শতাংশ হারে এই বেতনের বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট হবে দুই হাজার ৪৪২ টাকা। ২০তম গ্রেডের একজন কর্মচারীর মূল বেতন আট হাজার ২৫০ টাকা। এ বেতনের ওপর ৫ শতাংশ হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট হবে মাত্র ৪১২ টাকা ৫০ পয়সা। সুতরাং নিচের দিকের কর্মচারীরা ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট পেলেও তা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তুলনায় কম। দ্বিতীয় গ্রেডের একজন অতিরিক্ত সচিব ৩.৭ শতাংশ হারে অর্থাৎ ২০ গ্রেডের একজন কর্মচারীর তুলনায় প্রায় ১.৩ শতাংশ কম হারে ইনক্রিমেন্ট পাওয়ার পরও তাঁর ইনক্রিমেন্ট হবে দুই হাজার ৪২৫ টাকা।
নিজামুল হক ভূইয়া মিলন আরো বলেন, 'টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল করায় ৬৫ শতাংশ কর্মচারী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল করায় ব্লক পোস্টের কর্মচারীরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। একদিকে কর্মচারীদের টাইম স্কেল বাতিল করা হয়েছে, অন্যদিকে প্রশাসন ক্যাডারের তিন শতাধিক কর্মচারী গত জুলাইয়ের পর সিলেকশন গ্রেড পেয়েছেন। কর্মচারীদের টাইম স্কেল বাতিল করলে কর্মকর্তাদের সিলেকশন গ্রেড কিভাবে দেয়া হলো? সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাতিল এবং একই সঙ্গে শ্রেণি বিলুপ্তির ফলে একই ব্যাচের কর্মচারীদের মধ্যে যাঁরা আগে সিলেকশন গ্রেড পেয়েছেন তাঁদের সঙ্গে অন্যদের চরম বৈষম্য সৃষ্টি হবে। কর্মচারীদের গৃহ নির্মাণ ঋণ ষষ্ঠ বেতন স্কেলে যা ছিল, ১০ বছর পরে অষ্টম বেতন স্কেলেও তাই রয়েছে। অথচ কর্মকর্তারা ৩০ লাখ টাকা বিনা সুদে ঋণ নিয়ে গাড়ি কিনতে পারছেন। তাঁদের গাড়ি সচল রাখার জন্য ৪৫ হাজার টাকা প্রতি মাসে দেয়া হচ্ছে। অষ্টম বেতন কমিশনের উদ্দেশ্য ছিল, বেতনবৈষম্য দূর করা। কিন্তু ঘোষিত স্কেলে বৈষম্য তো দূর হয়ইনি বরং নতুন করে বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। এসব বৈষম্য নিয়ে আমরা আগামীকাল (আজ) বুধবার বৈঠক করব। সেখানেই পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।'
বাংলাদেশ সচিবালয় অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব রুহুল আমীন প্রতিবেদককে বলেন, টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড অতীতে ছিল। দীর্ঘদিন ধরে এসব সিস্টেম চলে আসছিল। হঠাৎ করে তা বন্ধ করা ঠিক হয়নি। বিশেষ অবস্থার কারণে আন্দোলনে নামতে পারছি না। সুযোগ সৃষ্টি হলে যেকোনো সময় এর বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য আগামীকাল (আজ) বুধবার বৈঠক করব। বাংলাদেশ সচিবালয় পারসোনাল অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মো. আনিসুল হক এই প্রতিবেদককে বলেন, শতভাগ না বাড়িয়ে ৮০ শতাংশ বেতন বাড়িয়ে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বহাল রাখলে কর্মচারীরা খুশি থাকতেন। একই সংগঠনের সদস্যসচিব রওশন আরা দীনা বলেন, 'আমরা আশাবাদী ছিলাম, শেষ পর্যন্ত টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বহাল থাকবে। কিন্তু তা হলো না। এ কারণে আমরা খুব হতাশ।'
মন্ত্রণালয়ের যতো যুক্তি : গতকাল অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের বলেছেন, 'আজ আমি এক জায়গায় গেলাম। সেখানে দেখলাম টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তিনজন লোক আমাকে বলল, চার বছর ধরে একই বেতনে আছে তারা। আরো চার বছর পর সিলেকশন গ্রেড পেয়ে ওপরের গ্রেডে যাবে তারা। আর এখন নতুন কাঠামোতে প্রতিবছরই তাদের বেতন বাড়বে।'
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ প্রতিবেদককে বলেন, অর্থ বিভাগ হিসাব করে দেখেছে, টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড থাকলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যে পরিমাণ আর্থিক সুবিধা পেতেন, তা তুলে নিয়ে নির্দিষ্ট হারে প্রতিবছর ইনক্রিমেন্ট চালু করায় তার চেয়ে বেশি সুবিধা পাবেন।
টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল করার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে অর্থ বিভাগের তৈরি করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন বেতন কাঠামোতে ক্রমপুঞ্জিত ইনক্রিমেন্টের যে বিধান রাখা হয়েছে (৩.৭৫% থেকে ৫%) তাতে চাকরিজীবীরা আর্থিক দিক দিয়ে লাভবান হবেন। কারণ, সনাতন পদ্ধতিতে নতুন বেতন স্কেল না হওয়া পর্যন্ত একই হারে ইনক্রিমেন্ট পেতেন তাঁরা। এবারের কাঠামোতে ইনক্রিমেন্ট প্রতিবছর ক্রমবর্ধমান হারে বাড়তে থাকবে, ফলে মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গেও সামঞ্জস্য রাখা সম্ভব হবে। যাঁরা ব্লক পদে চাকরিরত তাঁরাও স্বীয় স্কেলে এই ক্রমপুঞ্জিত আর্থিক সুবিধা পাবেন, যা জটিল টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড থেকে সহজলভ্য।
অর্থ বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'চাকরিজীবীরা যাতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সে জন্য এবারের বার্ষিক বর্ধিত বেতন বৃদ্ধির (ইনক্রিমেন্ট) ক্ষেত্রে নতুনত্ব আনা হয়েছে। ১৯৭৩ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত কেবল একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ইনক্রিমেন্ট হিসেবে দেয়া হতো। কিন্তু বর্তমান প্রস্তাবে ৩.৭৫ থেকে ৫ শতাংশ হারে ক্রমপুঞ্জিত হারে ইনক্রিমেন্ট দেয়া হচ্ছে। ২০০৯ সালের বেতন স্কেলে ২০তম গ্রেডের সঙ্গে ১৯তম গ্রেডের বেতনের পার্থক্য ছিল ১৫০ টাকা (৪২৫০-৪১০০) এবং বর্ধিত বেতন বৃদ্ধি ২০তম গ্রেডে ১৯০ টাকা এবং ১৯তম গ্রেডে ২১০ টাকা। অর্থাৎ, টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পেলেও একজন চাকরিজীবীর জন্য খুবই সামান্য অর্থ বৃদ্ধি পায় এবং এ জন্য আট বা ১২ বা ১৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু নতুন বেতন কাঠামোতে এই সুবিধা আরো আকর্ষণীয়। ২০তম গ্রেডের চাকরিজীবীদের ৫ শতাংশ হারে প্রথম বছরে বেতন বৃদ্ধি হবে ৪২০ টাকা এবং পরের বছর ক্রমপুঞ্জিত হারে বাড়বে ৪৪০ টাকা এবং এভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকবে। প্রত্যেক গ্রেডের জন্য এই সুবিধা আছে। এমনকি যাঁরা ব্লক পদে চাকরিরত তাঁরা স্বীয় স্কেলে এই ক্রমপুঞ্জিত আর্থিক সুবিধা পাবেন, যা জটিল টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড থেকে সহজলভ্য হবে।'
টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডও যে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করছে, তা উল্লেখ করে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একই স্কেলে বেতন পেলেও ১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির চাকরিজীবীর জন্য একই ধরনের সিলেকশন গ্রেড বা টাইম স্কেলের বিধান বর্তমানে নেই। ক্যাডার, নন-ক্যাডার ও ব্লক পদধারীদের মধ্যেও অনেক পার্থক্য রয়েছে। ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের মধ্যে যাঁরা সচিবালয়ে কর্মরত, তাঁরা আট, ১২ ও ১৫ বছরে টাইম স্কেলের পাশাপাশি ১০ বছরে সিলেকশন গ্রেড পেয়ে থাকেন। কিন্তু সচিবালয়ের বাইরের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীরা তা না পাওয়ার কারণে একই শ্রেণির কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করে।
অর্থ বিভাগের মতে, জাতীয় বেতন স্কেল ২০০৯-এর ৭(৬) দফা অনুযায়ী, ১ম শ্রেণির পদে নিয়োজিত ৫ম গ্রেডের কর্মকর্তাদের জন্য ১০ বছর পূর্তিতে ১০০ ভাগ সিলেকশন গ্রেড দেয়ার বিধান করা হয়েছিল, যা পরে বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সমস্যা দেখা দেয়ায় ২০১১ ও ২০১৩ সালে দুইবার সংশোধন করা হয়েছে। এ সংশোধনীর পরও আন্তক্যাডার ও অন্তক্যাডার বৈষম্য দূর হয়নি। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো এ ধরনের টাইম স্কেলের কারণে ৫ম গ্রেডের কর্মকর্তা ৩য় গ্রেডে এবং ৬ষ্ঠ গ্রেডের কর্মকর্তা ৪র্থ গ্রেডে পৌঁছে গেছেন।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত বিভিন্ন গ্রেডের কর্মচারীদের ক্ষেত্রে প্রকল্পের প্রকৃত চাকরিকাল গণনা করে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড দেয়ার সুযোগ না থাকায় প্রকল্প থেকে স্থানান্তরিত অনেক কর্মচারী রিট মামলা দায়ের করেছেন। অনেক ক্ষেত্রে এসব মামলায় সরকারের বিপক্ষে রায় হয়েছে।
আবার পদোন্নতি ছাড়া ক্যাডার কর্মকর্তাদের স্ব স্ব স্কেলের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছার এক বছর পর পরবর্তী উচ্চতর স্কেল (টাইম স্কেল) প্রাপ্তির সুবিধাটি যেসব ক্যাডারে ৪র্থ গ্রেডের পদোন্নতিযোগ্য পদ নেই, সেসব ক্যাডারের কর্মকর্তারা সমভাবে পান না। এ ছাড়া কর্মচারীরাও এই সুবিধা পান না। কারণ, নির্ধারিত বেতনক্রমের সময়সীমা বড় হওয়ার কারণে কর্মচারীরা এই বিধানের সুবিধাপ্রাপ্ত হন না।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'টাইম স্কেল বা সিলেকশন গ্রেড বা উচ্চতর স্কেল- যে নামেই ডাকা হোক না কেন, তার ফলাফল একই। কিন্তু শুধু সময়ের ব্যবধানে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আপনা আপনি এই উচ্চতর স্কেল বা টাইম স্কেল বা সিলেকশন গ্রেড প্রাপ্ত হন না। এ জন্য ডিপিসির (বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটি) সভা অনুষ্ঠানের প্রয়োজন হয় এবং সংশ্লিষ্ট চাকরিজীবীর এসিআর এবং সন্তোষজনক চাকরি বিবেচনা করা হয়ে থাকে। ডিপিসির সভা যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হয় না। এসব কারণে এ ধরনের সিলেকশন গ্রেড বা টাইম স্কেল নিয়ে অসন্তোষ রয়ে যায়। এ ছাড়া ডিপিসির সভার আলোকে সরকারি আদেশ জারি করার পর এজি অফিসে 'পে ফিক্সেশন'-এর প্রয়োজন হয়, যেখানে অনিয়ম বা দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে প্রচুর অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড চাকরিজীবীরা বছরের বিভিন্ন সময় পেয়ে থাকেন, ফলে বাজেট নির্ধারণও জটিল হয়ে পড়ে।-কালের কণ্ঠ
৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে