রবিবার, ০৩ জুলাই, ২০১৬, ১০:৩৮:৩৩

গুলশান হলি আর্টিজানে দু’জনের ছবি নিয়ে প্রশ্ন

গুলশান হলি আর্টিজানে দু’জনের ছবি নিয়ে প্রশ্ন

নিউজ ডেস্ক : শুক্রবার রাজধানীর গুলশানে আর্টিজান রেস্টুরেন্টে ঢুকে পড়ে জঙ্গীরা।  এতে দেশি-বিদেশি লোকজনকে জিম্মি করে ফেলে তারা।  শনিবার ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ অভিযানে জঙ্গিদের হত্যার পর মুক্ত হয় সেই রেস্টুরেন্ট।  কিন্তু ততক্ষণে জঙ্গিদের হাতে হত্যার শিকার হন ২৮ ব্যক্তি।

‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ অভিযানের পর মিলিটারি অপারেশনসের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম আশফাক চৌধুরী বলেন, অভিযানে সাত সন্ত্রাসীর মধ্যে ছয়জন নিহত হয়েছে।  আহত হন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২০ সদস্য।  একজনকে জীবিত গ্রেপ্তার করা হয়।

এদিকে হামলার পর জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) গুলশানের ঘটনায় হামলাকারী উল্লেখ করে পাঁচ তরুণের ছবি প্রকাশ করে।  শনিবার রাতে ওই ছবিগুলো প্রকাশ করা হয় বলে জানিয়েছে জঙ্গিগোষ্ঠীর ইন্টারনেটভিত্তিক তৎপরতা নজরদারিতে থাকা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ।

ছয় সন্ত্রাসী নিহতের কথা বলা হলেও পুলিশ সদর দপ্তর পাঁচজনের লাশের ছবি প্রকাশ করে।  পুলিশ তাদের নামও জানায়- আকাশ, বিকাশ, ডন, বাঁধন ও রিপন।  তবে আরেক সন্ত্রাসীর ছবি ও নাম-পরিচয় প্রকাশ করেনি তারা।

প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশের পাঠানো লাশের ওই ছবি ও নাম নিয়ে।

সে হামলায় জড়িত ৫ জনের একজন রোহান ইমতিয়াজ।  সে স্কলাসটিকা স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী। মা ও বাবার সঙ্গে রোহানের একাধিক ছবি ফেসবুকে এসেছে।  

সেখানে বলা হয়েছে, রোহানের বাবা এস এম ইমতিয়াজ খান বাবুল রাজধানীর ৩১ নং ওয়ার্ডে (মোহাম্মাদপুর) গত বছরের ২৮ এপ্রিল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে অংশ নিয়েছিলেন।

আওয়ামী লীগ সমর্থিত এই কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রতীক ছিল 'রেডিও'।  তিনি ভোট ঘিরে স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবীর নানকের ছবি এবং স্বাক্ষরসম্বলিত লিফলেটও ছাপিয়েছিলেন।

সেখানে নিজের রাজনৈতিক পরিচয় হিসেবে ৩১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দাবি করেন তিনি।

ইমতিয়াজ খান বাবুলের নির্বাচনী লিফলেটের তথ্য অনুযায়ী, তিনি ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল, সাইক্লিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও ফিবার রেফারি।

রোহানের মা স্কলাসটিকা স্কুলের শিক্ষিকা।  মা-বাবার একমাত্র ছেলে সন্তান রোহানের দুই বোন আছে এবং তারা মোহাম্মদপুরে বসবাস করেন বলে জানা গেছে।

মাহবুব রাজীব নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে বাবা-মাসহ নিহত রোহানের একটি ছবি প্রকাশ করা হয়েছে।  সঙ্গে দেয়া হয়েছে সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ থেকে প্রকাশিত ছবি, যেখানে দুই ছবির মধ্যে মিল পাওয়া যায়।

পুলিশের সরবরাহ করা ছবির সঙ্গেও ওই ছবির মিল পাওয়া যায়। তবে পুলিশ হত্যাকারীদের যে নাম প্রকাশ করেছে, সেখানে রোহানের নাম নেই।

জানা গেছে, রোহান গেল মার্চ থেকে নিখোঁজ ছিলেন। এক ফেসবুক পোস্টে সন্তানকে ফিরে আসার আকুতি জানিয়েছিলেন ইমতিয়াজ খান বাবুল। যদিও সেই আইডি এখন আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

এদিকে পুলিশ সদর দফতর থেকে রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টের জঙ্গি হিসেবে যে পাঁচজনের লাশের ছবি সংবাদমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে, তাদের মধ্যে একজন সাইফুল চৌকিদার।

তিনি জঙ্গি নন, তিনি গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারির শেফ বলে একটি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন রেস্টুরেন্টের মালিক সাদাত মেহেদি।

সাইফুল চৌকিদার তালুকদারের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা কলুকাঠি গ্রামে।  রেস্টুরেন্টে হামলার খবরের সংবাদ টিভিতে দেখে দুই বোন তাকে খুঁজতে আসেন শনিবার সকালে গুলশানের নির্ধারিত স্থানে। ভোর পাঁচটায় তারা গ্রাম থেকে রওনা হয়ে ঢাকায় পৌঁছেন দুপুর দেড়টার দিকে।

তার ভায়রা কবির এরই মধ্যে ঢাকায় এসেছেন লাশ নিতে।  তিনি জানিয়েছেন, সাইফুল আগে দেশের বাইরে ছিলেন, কয়েক বছর আগে আর্টিজানে শেফের চাকরি নেন তিনি।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (পূর্ব) মাহবুবুল আলম বলেন, আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।

কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের স্পেশাল অ্যাকশন টিমের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সানোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, গুলশানের ঘটনায় যেসব লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, সব লাশ ভেরিফাই করা হবে। এরপর জানা যাবে সাইফুল চৌকিদার জঙ্গি কি-না।

গত শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে একদল অস্ত্রধারী ঢুকে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করে।

সেখানে তাদের গুলিতে ২ পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। এরপর তারা দেশি-বিদেশি ২০ জনকে গলা কেটে হত্যা করে।  প্রায় ১২ ঘণ্টা পর শনিবার সকালে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে কমান্ডো অভিযানের মধ্যদিয়ে রেস্টুরেন্টের নিয়ন্ত্রণ নেয় নিরাপত্তা বাহিনী।  এ সময় ৬ জঙ্গি নিহত হয়।

ওই হামলায় জড়িত দাবি করে সাইট ইন্টিলিজেন্স পাঁচজনের ছবি প্রকাশ করেছে।  পুলিশও শনিবার রাতে নিহত পাঁচজনের ছবি প্রকাশ করে।

দু'পক্ষের ছবির অন্তত চারজনের চেহারার মিল রয়েছে।  এর মধ্যে জঙ্গিদের সঙ্গে মীর সামেহ মুব্বাসীরের চেহারার মিল রয়েছে।

পুলিশ ওই পাঁচজনের নাম বলেছে আকাশ, বিকাশ, ডন, বাঁধন ও রিপন।  তবে তাদের বিস্তারিত পরিচয় জানানো হয়নি।
৩জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে