সোমবার, ০৪ জুলাই, ২০১৬, ০১:২৩:৪৬

‘মেয়েকে জীবিত পাব ভাবতেই পারিনি’

‘মেয়েকে জীবিত পাব ভাবতেই পারিনি’

নিউজ ডেস্ক : এ কে বোরহান উদ্দীন বলছিলেন, ‘মেয়ে জীবিত, তা ভাবতেই পারিনি। শনিবার সকালে মেয়ে জানায়, সে জীবিত আছে। শুক্রবার রাতে ঘটনা জানার পর সারাক্ষণ দোয়া করেছি। শুধু বলেছি, সবকিছুর বিনিময়ে হলেও আমার মেয়ে ও অন্যরা যেন জীবিত থাকে। মসজিদে বিশেষ দোয়ার আয়োজন করেছি। ভাবতেই পারিনি মেয়েকে ফেরত পাব।’

বোরহান উদ্দীন ২০ বছর বয়সী ফাইরুজ মালিহার বাবা। রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় জঙ্গিরা যাঁদের জিম্মি করে, মালিহা তাঁদের একজন। গোলাগুলির শুরুতেই মালিহা ফোন করে বলতে পেরেছিলেন তাঁদের জিম্মি করার কথা। তারপর ঘটনাস্থলে গিয়ে এই বাবা একটার পর একটা ঘটনা শুনছিলেন। জঙ্গিদের অতর্কিত বোমা হামলায় শুরুতেই নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তা। রাতভর জিম্মি উদ্ধারের প্রস্তুতি। সকালে যৌথ বাহিনীর কমান্ডো অভিযানে ২০ জিম্মির লাশ উদ্ধার। এই বাবা ধরেই নিয়েছিলেন যা হওয়ার তাই হয়েছে।
গতকাল রোববার বিকেল পর্যন্ত মেয়ের সঙ্গে বাবার দেখা হয়নি। উদ্ধারের পর থেকে মেয়ে আছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের হেফাজতে।

গতকাল দুপুরে গোয়েন্দা বিভাগের অভ্যর্থনাকক্ষেই কথা হয় এনবিআরের সদস্য (কর আপিলাত ট্রাইব্যুনাল) এ কে বোরহান উদ্দীনের সঙ্গে। মালিহার মা গোয়েন্দা বিভাগের হেফাজতে মেয়ের সঙ্গে থাকার সুযোগ পেয়েছেন। আর বাবা বাইরে বসেই কাটিয়ে দিচ্ছেন দিন-রাত। অপেক্ষা, কখন মেয়েকে বুকে টেনে নেবেন।

দেশ-বিদেশ থেকে শুভাকাঙ্ক্ষীরা ফোন দিচ্ছিলেন বোরহান উদ্দীনকে। তিনি ফোনে একজনকে বলছিলেন, ‘আমার বাচ্চাটা বেঁচে আছে। রাষ্ট্রীয় হেফাজতে আছে। ভালো আছে। দোয়া করবেন।’

বোরহান উদ্দীন বলেন, ‘ঘটনার পর অনিশ্চয়তার মধ্যে কেটেছে। মেয়ের মা অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকেন। মেয়ে, না মেয়ের মা—কাকে রক্ষা করব, তাই ভেবে পাচ্ছিলাম না। মেয়ে জীবিত শুনে আনন্দে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। তবে অন্য ছেলেমেয়েগুলোকে মেরে ফেলল। বিদেশি নাগরিক আমাদের মেহমান। তাঁদের মেরে ফেলল। যাঁরা মারা গেলেন, তাঁদের পরিবারের সদস্যদের কথা ভাবতেই কী যে কষ্ট লাগছে।’ কথাগুলো বলে বোরহান উদ্দীন রুমাল দিয়ে চোখের পানি মুছলেন।

এক ছেলে এক মেয়ের বাবা বোরহান উদ্দীন। মেয়েকে আবার জীবিত পাওয়াকে জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি বলে মনে করছেন মুক্তিযোদ্ধা বোরহান উদ্দীন। মেয়ের নতুন জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে নিজের মনেই বললেন, সবগুলো বাচ্চা যদি জীবিত ফেরত আসত। ইসলামকে এভাবে প্রতিষ্ঠিত করা যায় না। সম্ভাবনাময় সন্তান, তারাই-বা কেন জঙ্গি হচ্ছে, তাও ভাবিয়ে তুলছে।

ফাইরুজ মালিহা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। শুক্রবার গুলশানে আর্টিজান রেস্তোরাঁর কাছেই তাঁর এক বান্ধবীর বাসায় ইফতারের দাওয়াত ছিল। ইফতার করে বান্ধবীকে নিয়ে রেস্তোরাঁয় কফি খেতে যান। তারপরই ঘটে ঘটনা। এখন ওই বান্ধবীও আছেন গোয়েন্দা বিভাগের হেফাজতে।

প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই বিকেল পাঁচটার দিকে স্ত্রী টেলিফোন করে বোরহান উদ্দীনকে জানান মেয়ের পাসপোর্ট লাগবে। বাবা ছুটলেন উত্তরার বাসায় মেয়ের পাসপোর্ট আনার জন্য। এই দীর্ঘ প্রক্রিয়া নিয়ে বোরহান উদ্দীনের ক্ষোভ নেই। তিনি বলেন, ‘জঙ্গিদের সম্পর্কে তথ্য পেতে আমার মেয়েসহ উদ্ধার পাওয়াদের একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। কষ্ট হচ্ছে। তবে তাতে যদি দেশের ভালো হয়, তাই হয়রানি মনে করছি না।’ -প্রথম আলো
০৪ জুলাই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে