সোমবার, ০৪ জুলাই, ২০১৬, ০১:৩০:৫৫

সাইফুল রেস্তোরাঁর কর্মী দাবি পরিবারের, স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা

সাইফুল রেস্তোরাঁর কর্মী দাবি পরিবারের, স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা

নিউজ ডেস্ক : সাদা শার্ট পরা ব্যক্তিকে সাইফুল ইসলাম বলে শনাক্ত করেছে তাঁর পরিবাররাজধানীর গুলশানে রেেস্তারাঁয় সমন্বিত অভিযানে নিহত সাইফুল ইসলাম চৌকিদারকে জঙ্গি বলে দাবি করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। কিন্তু তাঁর পরিবারের দাবি, সাইফুল জঙ্গি নন, তিনি হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর রান্নাঘরের কর্মী ছিলেন।

গত শুক্রবার রাতে গুলশানের রেস্তোরাঁয় জঙ্গিরা ঢুকে দেশি-বিদেশি নাগরিকদের জিম্মি করে হত্যাযজ্ঞ চালায়। পরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বাধীন সমন্বিত অভিযানে ছয় জঙ্গি নিহত হয় বলে জানায় পুলিশ। তবে গত শনিবার পুলিশের পক্ষ থেকে নিহত পাঁচজনের ছবি সরবরাহ করা হয়। এদের মধ্যে চারজন টি-শার্ট একজন সাদা শার্ট পরা। সাদা শার্ট পরা ব্যক্তিকে সাইফুল ইসলাম বলে শনাক্ত করেছে তাঁর পরিবার।

অভিযানের পরে এক কর্মকর্তার তোলা অন্য একটি ছবিতে দেখা যায়, হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর সামনের চত্বরে পাঁচ তরুণের লাশ পড়ে আছে। এদের সবারই পরনে টি-শার্ট। এখানে আবার সাদা শার্ট পরা কারও দেহ নেই। ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, তাঁরাও মনে করছেন যে সাইফুল জঙ্গি নন। তিনি হয়তো ঘটনার শিকার।

এদিকে রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলা ও সমন্বিত অভিযানের পর ভাইয়ের কোনো খোঁজ না পেয়ে গত শনিবার সকালে তার ছোট দুই বোন ময়না ও মায়া ঢাকায় ছুটে আসেন। গত দুই দিন ধরে তাঁরা কখনো ঘটনাস্থল, কখনো সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ছোটাছুটি করছেন। কেউই তাঁর ভাইয়ের সন্ধান দিতে পারেননি। এখন ময়না ও মায়া রাজধানীর আবদুল্লাহপুরে এক আত্মীয়ের বাসায় আছেন। তাঁরা জানান, সাইফুলের দুটি সন্তান রয়েছে। তার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা।

গতকাল সন্ধ্যায় আবদুল্লাপুরে গিয়ে দেখা যায়, বোন ময়না বারবার তাঁর মুঠোফোনে সাইফুলের ছবি দেখে চিৎকার করে কাঁদছেন আর বলছেন- ‘আমার ভাইয়ের লাশটা যেন পাই’। পাশে বসা আরেক বোন মায়া বলেন, গত শুক্রবার বিকেলে মুঠোফোনে তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে শেষ কথা হয়। সে সময় সাইফুল মায়াকে বলেন, বাড়িতে থাকা দুই বোন, মা, স্ত্রী ও দুই মেয়ের জন্য ঈদের কেনাকাটা করে সোমবার গ্রামের বাড়িতে ফিরবেন।

এরপর আর সাইফুলের সঙ্গে কথা হয়নি বলে মায়া জানান। তিনি বলেন, শুক্রবার হামলার ঘটনা শোনার পর মুঠোফোনে অনেকবার সাইফুলের নম্বরে তিনি ফোন দিয়েছেন। রাত একটা পর্যন্ত ফোন খোলা ছিল। এরপর থেকে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে এ সময়ের মধ্যে সাইফুল তাঁর ভায়রা কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বলে মায়া জানান।

সাইফুলের দুই বোন বলেন, দেড় বছর থেকে সাইফুল হলি আর্টিজান বেকারিতে চাকরি করতেন। থাকতেন গুলশানেরই কোনো এক জায়গায়। এর আগে ১৪ বছর তিনি জার্মানি ছিলেন। ১৫ বছর বয়সে তাদের বাবা মারা যান। এরপর সাইফুলের চাচা তাঁকে জার্মানি পাঠান। ১৪ বছর পর ২০০৫ সালে হঠাৎ সাইফুল গ্রামের বাড়িতে এসে হাজির হন। এই ১৪ বছরে সাইফুল বাড়িতে কোনো যোগাযোগ করেননি। কোনো চিঠিও কখনো পাঠাননি। ফেরার পর সাইফুলের কাছে বাড়ির সবাই শুধু জার্মানির গল্প শুনেছেন, সাইফুল কাউকে কোনো ছবিও দেখাতে পারেননি।

আমাদের শরীয়তপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কোলকাঠি গ্রামের বাড়িতে হাসেম চৌকিদারের চার ছেলে মেয়ের মধ্যে সাইফুল বড়। সাইফুলের আরেক ভাই মালয়েশিয়া থাকেন।

গতকাল সন্ধ্যায় কোলকাঠি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সাইফুলের মা মেহের বেগম ও স্ত্রী সোনিয়া আক্তার শিশু সন্তানদের নিয়ে মাতম করছেন। আত্মীয়স্বজনরা তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

সোনিয়া বলেন, ‘আমার স্বামী ওই রেস্তোরাঁর শেফ ছিল। সে পিজা তৈরি করত। শুক্রবার বিকেলে তার সঙ্গে আমার কথা হয়। শনিবার জানতে পারি, আমার স্বামী জঙ্গি হামলায় মারা গেছে। সন্তানরা বসে আছে বাবা আসবে ঈদের নতুন জামা নিয়ে। শিশু সন্তানদের আমি এখন কি জবাব দেব।’ -প্রথম আলো
০৪ জুলাই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে