ঢাকা : আর্মি স্টেডিয়ামে রাখা গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলায় নিহতদের মরদেহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রদ্ধা নিবেদনের পর উপস্থিত নিহতদের স্বজনরা নিজ দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী ইতালির রাষ্ট্রদূত মারিও পালমার সামনে গিয়ে আধা মিনিট কথা বলেন। কথা বলার প্রায় শেষপর্যায়ে শেখ হাসিনার হাত ধরে তিনি ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠেন।
গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে ৯জন ইতালীয় নাগরিককে হত্যা করা হয়।
সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা এবং এরপর নিহত দুই পুলিশ কর্মকর্তার পরিবারের সদস্যরা শ্রদ্ধা জানান।
বেলা পৌনে ১১টার দিকে পরিবারের স্বজনরা মরদেহ নিয়ে চলে যান। আর্মি স্টেডিয়ামে নিহত ১৭ বিদেশির মরদেহ আনা হয়নি।
তাদের মরদেহ সিএমএইচের হিমঘরে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে হস্তান্তর করা হবে মরদেহগুলো।
এর আগে একে একে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য মঞ্চে আসেন রাষ্ট্রদূতরা। জাপানের রাষ্ট্রদূত মাসাতো ওয়াতানাবে মঞ্চে ফুল অপর্ণের পর কিছুক্ষণের জন্য তাকিয়ে থাকেন কফিনগুলোর দিকে। এসময় সবাই ছিলেন বিমর্ষ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সঙ্গেও কিছু সময় কথা বলেন। গুলশানের হত্যাকাণ্ডে ৭ জন জাপানি নাগরিককে হত্যা করা হয়।
রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর দুপুর ১২টা পর্যন্ত সর্বস্তরের জনগণকে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মঞ্চ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
সেখানে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, ১৪ দল, ১১ দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।
শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আর্মি স্টেডিয়ামে যে মঞ্চটি তৈরি করা হয়, সেখানে তিনটি মরদেহ ছিল। দুটি কফিন ঢাকা ছিল বাংলাদেশের পতাকা দিয়ে। আরেকটি ঢাকা ছিল বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা দিয়ে।
হামলায় পাঁচ দেশের নাগরিক নিহত হওয়ায় মঞ্চের পেছনে পাঁচটি দেশের পতাকা টাঙানো হয়। মাঝে ছিল বাংলাদেশের পতাকা। বাঁ-দিকে প্রথমে ছিল ভারতের, এরপর ইতালি, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা ছিল।
সন্ত্রাসী ঢাকার গুলশান এলাকার হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে।
উল্লেখ্য, ১ জুলাই শুক্রবার রাতে গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কে ৫নং বাসার দ্বিতীয় তলায় হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলা চালায় কয়েক অস্ত্রধারী। রেস্টুরেন্টে প্রবেশের সময় তারা বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটায় এবং গুলি চালায়। এসময় পুলিশের সঙ্গে গুলিবিনিময় হয়।
ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন, ডিবির এসি রবিউল ইসলাম, পুলিশের দুই কনস্টেবল, একজন মাইক্রোবাসচালকসহ ২০ জনের বেশি।
গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা যান ওসি সালাউদ্দিন এবং এসি রবিউল।
গুলশান এ হামলায় মোট নিহতের সংখ্যা ২৮ জনে দাঁড়িয়েছে। হোলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে অভিযান শেষে শনিবার সকালে ২০ বিদেশির লাশ উদ্ধার করা হয় এবং কমান্ডো অভিযানে নিহত হয় ৬ জঙ্গি। আটক করা হয়েছে একজনকে।
শুক্রবার দিবাগত রাতে জঙ্গিদের গুলি ও বোমার আঘাতে ২ পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। একজন সন্ত্রাসীকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
এর মধ্যে একজন জাপানি ও ২ জন শ্রীলঙ্কান নাগরিক রয়েছেন। আইএসপিআর এ তথ্য জানিয়েছে।
সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশন্সের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম আশফাক চৌধুরী প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছিলেন, জিম্মি সংকট অবসানে রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে 'অপারেশন থান্ডারবোল্ট' পরিচালনা করা হয়।
শনিবার সকালের এ অভিযানের পর ২০টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তাদের সবাই বিদেশি এবং অভিযানের আগেই তাদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলাকেটে হত্যা করা হয়। মরদেহগুলো ময়নাতদন্তের জন্য সিএমএইচে পাঠানো হয়েছে।
তিনি জানান, অভিযানের সময় ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। তাদের মধ্যে তিনজন বিদেশি নাগরিক। এর মধ্যে দুজন শ্রীলঙ্কার ও একজন জাপানের নাগরিক। তবে চূড়ান্ত অভিযানে অংশগ্রহণকারী কোনো কমান্ডো আহত হননি।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম আশফাক চৌধুরী জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই এ অভিযান চালানো হয়। সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে অভিযানে অংশ নেয় নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।
সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে অপরাশেন থান্ডারবোল্ট শুরু হয়। ১২ থেকে ১৩ মিনিটের মধ্যেই যৌথবাহিনী দুষ্কৃতকারীদের নির্মূল করতে সক্ষম হয়।
৪ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম