সোমবার, ০৪ জুলাই, ২০১৬, ০৬:১৫:১৪

‘তারে এখন কবরে দিয়ে আসি’

‘তারে এখন কবরে দিয়ে আসি’

ঢাকা : রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলায় নিহত ইশরাত আখন্দের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।  সোমবার বেলা ১২টা ৪০ মিনিটে তার মরদেহ উত্তরায় ১০ নম্বর সেক্টরের ভাইয়ের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।

ইশরাতের ভাইয়ের বাসায় তার বৃদ্ধা মা (৮২) ছোটবেলার ইশরাতকে নিয়ে নানা অভিজ্ঞতার কথা সবার সঙ্গে শেয়ার করছেন।  ইশরাতের লাশ এসে পৌঁছেছে শোনার পর তিনি সবাইকে বলেন, বাইরে যেতে।

এসময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ঘটনার পরদিন ইশরাতের শ্রীলঙ্কা যাওয়ার কথা ছিল।  ফিরে এসে আমার সঙ্গে ঈদ করবে বলেও জানিয়েছিল। এখন তারে কবরে দিয়ে আসি।  এ কথা বলে ফের তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

এর আগে সকাল থেকেই ইশরাতের আত্মীয়-স্বজনেরা অপেক্ষা করছিলেন বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামে।  তার লাশ পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হলে প্রথমে শ্যামলীতে নেয়া হয়।  

সেখানে লাশের গোসল ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শেষে ইশরাতের মরদেহ উত্তরার ভাইয়ের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বাদ যোহর জানাজা শেষে তাকে গাজীপুরের বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কবরস্থানে দাফন করা হবে।

উল্লেখ্য, ১ জুলাই শুক্রবার রাতে গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কে ৫নং বাসার দ্বিতীয় তলায় হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলা চালায় কয়েক অস্ত্রধারী।  রেস্টুরেন্টে প্রবেশের সময় তারা বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটায় এবং গুলি চালায়।  এসময় পুলিশের সঙ্গে গুলিবিনিময় হয়।

ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন, ডিবির এসি রবিউল ইসলাম, পুলিশের দুই কনস্টেবল, একজন মাইক্রোবাসচালকসহ ২০ জনের বেশি।

গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা যান ওসি সালাউদ্দিন এবং এসি রবিউল।

গুলশান এ হামলায় মোট নিহত হন ২৮ জন।  এর মধ্যে ইশরাতও।  হোলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে অভিযান শেষে শনিবার সকালে ২০ বিদেশির লাশ উদ্ধার করা হয় এবং কমান্ডো অভিযানে নিহত হয় ৬ জঙ্গি।  আটক করা হয়েছে একজনকে।

শুক্রবার দিবাগত রাতে জঙ্গিদের গুলি ও বোমার আঘাতে ২ পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন।  একজন সন্ত্রাসীকে আটক করা হয়েছে।  এ ঘটনায় ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।

এর মধ্যে একজন জাপানি ও ২ জন শ্রীলঙ্কান নাগরিক রয়েছেন।  আইএসপিআর এ তথ্য জানিয়েছে।

সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশন্সের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম আশফাক চৌধুরী প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছিলেন, জিম্মি সংকট অবসানে রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে 'অপারেশন থান্ডারবোল্ট' পরিচালনা করা হয়।

শনিবার সকালের এ অভিযানের পর ২০টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।  তাদের সবাই বিদেশি এবং অভিযানের আগেই তাদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলাকেটে হত্যা করা হয়।  মরদেহগুলো ময়নাতদন্তের জন্য সিএমএইচে পাঠানো হয়েছে।

তিনি জানান, অভিযানের সময় ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।  তাদের মধ্যে তিনজন বিদেশি নাগরিক।  এর মধ্যে দুজন শ্রীলঙ্কার ও একজন জাপানের নাগরিক।  তবে চূড়ান্ত অভিযানে অংশগ্রহণকারী কোনো কমান্ডো আহত হননি।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম আশফাক চৌধুরী  জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই এ অভিযান চালানো হয়।  সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে অভিযানে অংশ নেয় নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।

সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে অপরাশেন থান্ডারবোল্ট শুরু হয়।  ১২ থেকে ১৩ মিনিটের মধ্যেই যৌথবাহিনী দুষ্কৃতকারীদের নির্মূল করতে সক্ষম হয়।  
৪ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে