সোমবার, ০৪ জুলাই, ২০১৬, ০৮:৩২:৩৫

সে কি অপারদর্শী ছিল নাকি সামাজিক চাপ?

সে কি অপারদর্শী ছিল নাকি সামাজিক চাপ?

ঢাকা : একটা খবরে পড়লাম নিহত জঙ্গিদের একজন সামেহ মোবাশ্বের। ‘ও’ লেভেলের ছাত্র, ১৮ বছর বয়সী সামেহ নাকি সাদাসিদে টাইপের। তার তেমন কোনো বন্ধু ছিল না।

যে তারুণ্যের ধর্মই নিখাদ বন্ধুত তৈরি, তার তেমন বন্ধু থাকবে না কেন? সে কি বন্ধু তৈরিতে অপারদর্শী ছিল? নাকি নগরায়নের পারিপার্শ্বিকতায় পরিবারিক ও সামাজিক চাপ বা সীমাবদ্ধতা ছিল, যেখানে সে তেমন করে বন্ধুত্ব তৈরি করতে পারেনি?

১.
মাস দুয়েক আগে মেয়েকে স্কুল থেকে আনতে যাই। বড় মেয়ের ৫০ মিনিট পর ছুটি হওয়ায় ছোট মেয়েকে নিয়ে ওই সময়টা বসে থাকি। সেদিন বারান্দায় একটা মেয়ে হাইবেঞ্চে বসে পা দুলাচ্ছিল। আমি সামনে বসা। মেয়েটি হঠাৎ আমার ছোট মেয়েকে জিজ্ঞেস করল, ‘তোমার কি ট্যাব আছে?’ আমার মেয়ে আমার মুখের দিকে তাকায়! আমি তখন মেয়েটিকে বললাম- ‘না, ওর কোনো ট্যাব নেই।’ মেয়েটা তখন হাসিহাসি মুখে বলতে লাগল, ট্যাবে সে কি কি গেমস ডাউনলোড করেছে এবং কথার একপর্যায়ে জানা গেলো তার একটা ফেসবুক অ্যাকাউন্টও আছে। প্রবাসে থাকা তার বাবা তাকে এই অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়েছেন! মা চাকরি করেন। বাসায় মামা থাকেন। মামাই তাকে স্কুলে আনানেয়া করেন। মেয়েটা দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী!

২.
আমার বড়মেয়ের এক সহপাঠী। অসম্ভব মেধাবী। সেদিন শুনলাম, তার বাবা-মা দুজনই বাইরে কাজ করে। সে নিজের পড়া নিজে রেডি করে, নিজের খাবার নিজে খায়, এমনকি নিজের ঘরও নিজে গুছিয়ে রাখতে পারে। ১০ বছরের এই শান্ত-চুপচাপ বালিকার আত্মনির্ভরশীলতার গল্প শুনে সবার সাথে আমিও মুগ্ধ হয়েছিলাম। তবে একটু হতাশ হয়েছি, যখন শুনলাম মেয়েটির সারাদিনের সাথী পড়ালেখাহীন একটা কাজের লোক।

৩.
উপরের সবগুলো ঘটনাই সমাজের বিচ্ছিন্ন কিছু অংশ। তবে একটা মিল কিন্তু আছে। যে বয়সে ছেলেমেয়েরা সবার সাথে মিলেমিশে বড় হওয়ার কথা, সেখানে কখনো তারা পড়ালেখার চাপে, কখনো পারিবারিক বা সামাজিক কারণে অনেকটা একা বড় হচ্ছে। আর একাকীত্ব কখনো কখনো তাদের স্বার্থপর ও হীনমন্য করে তুলছে। একসময় দেখা যায়, একা বড় হওয়া মানুষটা তুলনামূলকভাবে অসামাজিক হয়ে পড়ছে। তারা সবার সাথে সহজে মিশতে পারছে না। সহজাত বন্ধুত্ব তৈরি করতে পারছে না। এমনকি বাবা মায়ের সাথেও তাদের দূরত্ব বাড়তে থাকে। ফলে একসময় জীবন সম্পর্কে তারা হতাশ হয়ে পড়ে। সেই সাথে জড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে।

৪.
সময়ের সাথে সব বদলে গেছে। এখন চাইলেই হাতের কাছে সব পাওয়া যায়। সবকিছুর সহজলভ্যতাও কিন্তু অপরাধ বিশেষ করে কিশোর অপরাধের একটা অন্যতম কারণ।

৫.
আমি কোনো সমাজবিজ্ঞানী বা মনোবিদ নই। তাই কিশোর জগতের মনোবিকাশ বা তাদের অপরাধ প্রবণতার সব কারণ ব্যাখ্যা করা আমার পক্ষে সম্ভব না। তবে সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার প্রেক্ষিতে সমাজবিজ্ঞানের আলোকে এটুকু বলা যায়, আমাদের বাড়ন্ত প্রজন্মকে প্রচুর কার্যকরী সময় দিতে হবে। ইন্টারনেট, মোবাইল, টেলিভিশনে যেন সন্তানদের বেড়ে উঠার সময়টা হারিয়ে না যায়। শুধুমাত্র কাজের লোক না, দাদী-নানী-খালা-ফুফুদের মতো মাতৃসম্পর্কিত কেউ যেন কর্মজীবী বাবা-মায়ের সন্তানটির পাশে থাকে- এটা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। সব বিপদের ভয়ে শুধুমাত্র ঘরবন্দী করে রাখলেও চলবে না, এতে তাদের আত্মবিশ্বাসের ভিত মজবুত হবে না। তাদেরকে প্রচুর মানুষের সাথে মিশার সুযোগ করে দিতে হবে যেন একসময় সে নিজেই বিভিন্ন জনের দোষ-ত্রুটি, ভালো-মন্দ দিকগুলো আলাদাভাবে বুঝতে সক্ষম হয়। এতে অবশ্যই আমাদেরও পাশে থাকতে হবে।

মনে রাখতে হবে, সন্তান শুধুমাত্র আমাদের নিজস্ব নয়। সে মানবপ্রজন্মের একটা অংশ। তাই আপনার আমার সন্তান যেন টিয়াপাখির মতো শুধুমাত্র বুলি আওড়ানো নয়, সমগ্র মানবজাতির হয়ে কথা বলতে পারে। - বাংলামেইল

 লেখক : সুপ্রিয় সুকন্যা
৪ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে