মঙ্গলবার, ০৫ জুলাই, ২০১৬, ০১:৩০:৫৭

হাসনাত করিমকে নিয়ে রহস্য

হাসনাত করিমকে নিয়ে রহস্য

নিউজ ডেস্ক : গুলশানে জঙ্গি হামলা ও হত্যাযজ্ঞ থেকে বেঁচে ফিরে আসা হাসনাত করিম নামে এক ব্যক্তিকে নিয়ে রহস্য সৃষ্টি হয়েছে। তিনি হামলাকারী জঙ্গিদের সহযোগী নাকি প্রকৃতই জিম্মি হয়েছিলেন তা নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। জঙ্গি হামলার ঘটনা অবসান হওয়ার পর অন্যা জিম্মিদের মতো হাসনাতকেও গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। তবে রোববার বিকালে তাকে আবারো গোয়েন্দা কার্যালয়ে আনা হয়। গতকাল সকালে হাসনাতের বাসা থেকে তার ল্যাপটপ নিয়ে গেছে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। তার ল্যাপটপসহ মোবাইল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। তবে তাকে আটক করা হয়েছে কিনা পুলিশের পক্ষ থেকে তা স্পষ্ট করা হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জঙ্গিদের জিম্মি ঘটনার সময় ভোরের কোনো এক সময়ে হাসনাত করিমকে হলি আর্টিজান রেস্তরাঁর দোতলার বারান্দায় দেখা যায়। তার পেছনে দুই বন্দুকধারী ছিল। ওই ছবিটি একটি গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়। এছাড়া ডি কে হোয়াং নামে কোরিয়ান এক নাগরিক হলি আর্টিজান রেস্তরাঁর পাশের লেকভিউ ক্লিনিক থেকে মোবাইল ফোনে সেনা কমান্ডোদের অভিযানের আগ মুহূর্ত ভিডিও করেন। সেখানে হাসনাত করিমকে নিচতলার একটি কাঁচের দরজার ভেতরে দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখা যায়। এই ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে এবং তার আচরণ সন্দেহজনক মনে করা হচ্ছে।

গোয়েন্দা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্যদের মতো হাসনাত করিমকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে যেহেতু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযোগ উঠেছে, এ কারণে সতর্কতার সঙ্গে তার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তার ব্যবহৃত ল্যাপটপ ও মোবাইলে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ রয়েছে কিনা তাও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হাসনাত করিম এক সময় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির বিবিএ ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক ছিলেন। ২০১২ সালে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে হিযবুত তাহ্‌‌রীরের সদস্য অভিযোগে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এরপর থেকে তিনি বাবা প্রকৌশলী রেজাউল করিমের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান বেসিক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের পরিচালক ছিলেন।

হাসনাত করিমের বাবা প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, তার ছেলে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে বৃটেনে পড়াশোন করেছে। আমেরিকা থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়েছে সে। এরপর ২০০০ সালে সে বাংলাদেশে ফিরে আসে। ২০০৭-০৮ সাল থেকে সে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে। ২০১২ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠানে যোগ দেয়। গুলশান-২-এর একটি বাসায় সে পরিবার নিয়ে থাকতো।

রেজাউল করিম বলেন, হাসনাতকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আমরা ডিবি কার্যালয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু তার সঙ্গে দেখা করতে পারিনি। আমি ডিবি কর্মকর্তাদের বলেছি, আপনারা যত পারেন জিজ্ঞাসাবাদ করেন কিন্তু নির্যাতন করবেন না। তার সবকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন। রেজাউল করিম বলেন, আমার ছেলে জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত নয়। সে তার স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ওই রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছিল। সেখানে গিয়ে অন্যদের মতো জঙ্গি হামলার কবলে পড়ে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, হাসনাত করিম প্রকৃতই সেদিন সন্তানের জন্মদিন উপলক্ষে ওই রেস্তরাঁয় গিয়েছিলেন কিনা তা যাচাই-বাছাই চলছে। তার বক্তব্যের সঙ্গে অন্যদের বক্তব্যও মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। ডিবির অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, যারা জিম্মি অবস্থায় ওই রেস্তরাঁয় আটকে ছিল তাদের অনেকেই দীর্ঘ সময় ধরে আতঙ্কগ্রস্ত থাকার কারণে তারা সঠিকভাবে ঘটনা ‘রিকল’ করতে পারছিল না। যাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে তাদের প্রয়োজনে আবারো ডেকে কথা বলা হবে। এমজমিন
৫ জুলাই ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে