মঙ্গলবার, ০৫ জুলাই, ২০১৬, ০৬:৪৬:৪৯

‘নিখোঁজ’ তরুণদের দেশে বিদেশে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ

‘নিখোঁজ’ তরুণদের দেশে বিদেশে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ

সরোয়ার আলম, ওমর ফারুক ও আরিফুজ্জামান তুহিন  : সচ্ছল পরিবারের উচ্চশিক্ষিত তরুণদের কৌশলে জঙ্গি সংগঠনে ভিড়িয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। মগজ ধোলাইয়ের পর তাদের শেখানো হচ্ছে ভারী অস্ত্রশস্ত্র চালানোর কৌশল। প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় মূলত দেশের অভ্যন্তরে পার্বত্য অঞ্চলে। এ ক্ষেত্রে অনেক তরুণ বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নেয় ভিন্ন কোনো স্থানে।

পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখে না তারা। অনেক তরুণ মানুষের চোখ এড়াতে নেয় ছদ্মবেশ। নিজেদের তারা শৌখিন পর্বতারোহী হিসেবে পরিচয় দেয়। পাহাড়ে অভিযানের কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয় তারা। এরপর সেখানে গিয়ে নেয় সশস্ত্র প্রশিক্ষণ। দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হামলা চালানোর জন্য প্রস্তুত করা হয় তাদের। দেশের পাশাপাশি বিদেশেও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।

পথভ্রষ্ট তরুণরা বিশেষ করে মালয়েশিয়ায় গিয়ে জঙ্গিবাদের প্রশিক্ষণ নেয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেশের প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে খবর রয়েছে, বিপথগামী তরুণদের প্রশিক্ষণ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সেরও (আইএসআই) সংযোগ রয়েছে।

আইএসআইয়ের ঊর্ধ্বতন চার কর্মকর্তা এরই মধ্যে বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার তরুণদের কাছ থেকে এসব তথ্য পেয়েছে তদন্ত সংস্থাগুলো।

গত শনিবার সকালে গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ অভিযানে নিহত পাঁচ জঙ্গির তথ্য ঘেঁটেও এমন বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। এই তরুণদের পাসপোর্ট ঘেঁটে দেখা গেছে, অনেকবারই তারা দেশের বাইরে গেছে। মালয়েশিয়ায় যাতায়াত ছিল সবচেয়ে বেশি। সে দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের জঙ্গি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গুলশানে জিম্মি উদ্ধারে অপারেশন থান্ডারবোল্টে নিহত পাঁচ সন্ত্রাসী সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহে মাঠে নেমেছে পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এরই মধ্যে পরিবারের সদস্যসহ ওই পাঁচজনের প্রোফাইল সংগ্রহ করা হয়েছে। তাদের নিজেদের এবং পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কারো কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তদন্ত সংস্থাগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধনাঢ্য পরিবারের উচ্চশিক্ষিত তরুণদের নিশানা করছে জঙ্গি সংগঠনগুলো। বিশেষ করে ইংরেজি মাধ্যমে পড়া শিক্ষার্থীদের দলে টানতে চাইছে তারা। দলে ভেড়ার পর মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের মতাদর্শে তাদের মগজ ধোলাই করা হচ্ছে। বিদেশে নিয়ে গিয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। একে-৪৭, একে-২২ রাইফেলসহ অন্য ভারী অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। শেখানো হচ্ছে বোমা ও গ্রেনেড তৈরির কলাকৌশল।

সূত্র জানায়, সারা দেশে এ মুহূর্তে সচ্ছল পরিবারের অন্তত অর্ধশত উচ্চশিক্ষিত তরুণ নিখোঁজ রয়েছে। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছে, হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলাকারী দলের সদস্য রোহান ইমতিয়াজ একাধিকবার মালয়েশিয়ায় গেছে। সেখানে আবদুল্লাহ নামের এক বাংলাদেশির সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। কিছুদিন মালয়েশিয়ায় থাকার পর দেশে ফিরে আসে রোহান। পরিবারের সদস্যরা জিজ্ঞেস করায় সে জানিয়েছিল, বন্ধুর বাসায় বেড়াতে গিয়েছিল। এ নিয়ে মা-বাবা বকাঝকা করলে রোহান অভিমান করে কিছুদিন বাড়ির বাইরে ছিল। ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল স্কলাসটিকা থেকে পাস করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া রোহানের একাধিক বন্ধু ছিল রাজধানীর গুলশান ও উত্তরা এলাকায়।

রোহানের বাবা এস এম ইমতিয়াজ খান বাবুল ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছে, গত ডিসেম্বরে রোহানের মা-বাবা চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যান। এ সুযোগে রোহান বেপরোয়া হয়ে ওঠে। পরিবারের সদস্যদের কাউকে কিছু না জানিয়ে সে উধাও হয়ে যায়। একটি গোয়েন্দা সংস্থার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রোহান মালয়েশিয়া ও সিরায়ায় গিয়েছিলেন বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। উত্তরাঞ্চলে এক প্রভাবশালী ব্যক্তির মাধ্যমে তিনি দেশের বাইরে যান। তাঁর পাসপোর্টে সেই তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁকে অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে বেশি। তাঁর বাবা-মায়ের সাথে আমরা কথা বলেছি। তাঁরা আমাদের জানিয়েছেন, একটি চক্র ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে রোহানকে জঙ্গি বানিয়েছে।’

গুলশানে রেস্টুরেন্টে হামলাকারীদের আরেকজন মীর সামিহ মোবাশ্বের। সেও স্কলাসটিকায় পড়াশোনা করেছে। ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, মোবাশ্বেরও একাধিকবার দেশের বাইরে গেছে। এর মধ্যে কানাডা ও মালয়েশিয়ায় গেছে দুইবার। যে চক্রটি রোহানকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে সেই একই চক্র মোবাশ্বেরকেও আগ্নেয়াস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ দিয়েছে। তবে তার বিদেশে যাওয়ার বিষয়টি জানতে পারেনি পরিবারের সদস্যরা। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি থেকে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। এ ঘটনায় গুলশান থানায় জিডি করেছিলেন তার বাবা হায়াত কবির। হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলাকারীদের আরেকজন নিবরাস ইসলামও গত ফেব্রুয়ারি থেকে নিখোঁজ ছিল। পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিল না। নিবরাস প্রথমে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়। পরে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়তে চলে যায় মালেশিয়ার মোনাস ইউনিভার্সিটিতে। সেখান থেকে এক বছর পর ফিরে এসে আবার নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছে, নিবরাস আগে থেকেই অস্ত্র চালাতে পারত।

গোয়েন্দারা বলছে, নিষিদ্ধি জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান জঙ্গি নেতা জসিমউদ্দিন রাহমানী জিজ্ঞাসাবাদে তাদের জানিয়েছে, সংগঠনে যোগ দেওয়ার পর তরুণদের অস্ত্র চালানো এবং বোমা ও গ্রেনেড তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কক্সবাজার, টেকনাফ, সিলেট, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে চলে প্রশিক্ষণ কর্মকাণ্ড।

দেশের একটি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থার সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বড় ধরনের নাশকতার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আইএসআইয়ের কর্নেল পদমর্যাদার এক কর্মকর্তার নেতৃত্বে চার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গত বছরের শেষের দিকে বাংলাদেশে এসেছিলেন। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়,  সারা দেশকে ৭০টি ভাগে ভাগ করে জঙ্গি তৎপরতার ছক আঁকা হয়েছে। প্রতিটি ভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জঙ্গিদের একেকটি সামরিক কমান্ডকে। এসব কমান্ডের নেতৃত্বে আছে অন্তত দুই হাজার ৮০০ উচ্চ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গি। তারা সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড পরিচালনার ছক নিয়ে কাজ করছে। অর্থ জোগাড়ের জন্য তারা চট্টগ্রাম অঞ্চলকে ঘাঁটি বানিয়ে পরিকল্পনা মাফিক কাজ করছে। সোনা ও মাদকের চোরাচালান, হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাঠানো এবং নকল টাকা ও ডলারের ব্যবসা করছে তারা।

সচ্ছল পরিবারের অর্ধশত যুবক নিখোঁজ!

গত ১৪ মার্চ র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার মোবাইলে একটি এসএমএস আসে। তা  থেকে জানা যায়, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী হঠাৎ উধাও হয়ে গেছে। উধাও হওয়ার আগে সে মাকে টেলিফোন করে বলেছে, ‘মা আমি ইসলামের পথে চলে যাচ্ছি। আমাকে মাফ করো তুমি। তোমার সঙ্গে জান্নাতে দেখা হবে।’ পরে র‌্যাব সদস্যরা অনুসন্ধান করে জানতে পারেন, ওই শিক্ষার্থী ধনাঢ্য এক পরিবারের সন্তান। তার বাবা একটি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

রাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএসে বসবাসরত সাবেক এক ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার মেধাবী সন্তানও নিখোঁজ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। বাসা থেকে যাওয়ার আগে বাবার উদ্দেশে সে একটি চিরকুটে লিখে গেছে, ‘আমি নেটওয়ার্কের বাইরে চলে যাচ্ছি।’

এ দুই ঘটনার মতোই ঢাকাসহ সারা দেশে অন্তত অর্ধশত যুবক ‘নিখোঁজ’ হয়ে আছে। তারা কোথায় আছে, কী করছে পরিবারের সদস্যরা বলতে পারছেন না। তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। সন্তান নিখোঁজ হওয়ার পর কোনো কোনো পরিবার থানায় জিডি করেছে, কোনো কোনো পরিবার বিষয়টি গোপন রাখছে।

গোয়েন্দারা ধারণা করছেন, ইংরেজি মাধ্যমে পড়া তরুণরাই এখন জঙ্গি নিয়োগকারীদের মূল টার্গেট। পরিবার থেকে হঠাৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া এই তরুণদের প্রথম গন্তব্য মালয়েশিয়া। সেখানেই তাদের মগজ ধোলাইসহ প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে চাপে ফেলেও ইংরেজি জানা তরুণদের জঙ্গি বানানো হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে শুরুতেই জঙ্গিরা বেছে বেছে তরুণদের টার্গেট করে। তারপর তাদের ভুল বুঝিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় জঙ্গি আস্তানায়। সেখানে নিয়ে আটকে ফেলা হয়। একবার সেখানে ঢুকলে আর ফেরার উপায় থাকে না। জীবন বাঁচাতে জঙ্গি নেতাদের কথামতো চলতে হয় তাদের। মগজ ধোলাইয়ের পর কখনো ভয়ে, কখনো নিজের ইচ্ছাতেই জঙ্গি দলে নাম লেখাচ্ছে এসব তরুণ। গোয়েন্দা সূত্রেও এমন ইঙ্গিতই পাওয়া যাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘কোনো পরিবারের সন্তান নিখোঁজ হয়ে থাকলে তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সঙ্গে সঙ্গে জানাতে হবে। যারা নিখোঁজ আছে বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে তাদের উদ্ধার করতে র‌্যাব-পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে। গুলশানে হামলায় যেসব জঙ্গি মারা গেছে তারা উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। তাদের মধ্যে একজন বাসা থেকে পাসপোর্ট নিয়ে গেছে, কিন্তু মোবাইল ফোন ও ব্যক্তিগত জিনিসপত্র রেখে গেছে। আমরা ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি, নিখোঁজের পর আর তারা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেনি।’

ব্লগ-টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বা কোনো এলাকায় জঙ্গি তৎপরতার কথা জানা থাকলে তাও দেশবাসীকে জানানোর অনুরোধ করেন র‌্যাব মহাপরিচালক।

তবে নিখোঁজ তরুণদের পরিবার অভিযোগ করেছে, সন্তানদের নিখোঁজের বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানোর পরও তারা কোনো ধরনের সহায়তা করেনি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবি, হুজি ও হিযবুত তাহ্রীরের শীর্ষ নেতারা ধর্মভীরু লোকজনকে সংগঠনে টানছে।

সূত্র জানায়, ঢাকাসহ সারা দেশে অন্তত ৫০ জন তরুণ নিখোঁজ আছে। এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। তারা সবাই উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। তারা কোনো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে, নাকি স্বেচ্ছায় আত্মগোপন করে আছে সে রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা চলছে। তবে গোয়েন্দারা ধারণা করছেন, নিখোঁজ তরুণদের বেশির ভাগই ঢুকে পড়েছে জঙ্গি কার্যক্রমে। তিনটি গোয়েন্দা সংস্থা এসব তরুণের খোঁজ বের করতে মাঠে নেমেছে।

কিন্তু উচ্চবিত্ত পরিবারের এসব তরুণ কিভাবে বিপথে পা বাড়াল তার কোনো উত্তর মিলছে না। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, নিখোঁজ তরুণদের অনেকেই জঙ্গি কার্যক্রমে সম্পৃক্ত বলে তাঁদের কাছে তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। তাদের অভিভাবকরা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ উচ্চপদে চাকরিরত কিংবা অবসরপ্রাপ্ত বা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী।

জানা গেছে, গত ২৯ ফেরুয়ারি মীর সামিহ মোবাশ্বের নিখোঁজ হওয়ার দিন আরো চার যুবক নিখোঁজ ছিল। তারা কোথায় আছে পরিবারের সদস্যরা বলতে পারছেন না। তাঁরা বিষয়টি পুলিশকেও জানিয়েছেন। চটগ্রামে হাটহাজারী থেকে সুমন নামে এক ছাত্র নিখোঁজ আছে। মাদারীপুরে কলেজ শিক্ষক হত্যাচেষ্টার আসামি ক্রসফায়ারে নিহত গোলাম ফায়জুল্লাহ ফাহিমও দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ ছিল।   

গোয়েন্দারা তথ্য পেয়েছে, গুলশান, বনানী, উত্তরা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ আরো কয়েকটি এলাকাকে টার্গেট করে যুবকদের বিপথে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এসব তরুণ ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল এবং বিদেশি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র। আবার নিখোঁজ তরুণদের মধ্যে কেউ কেউ হিযবুত তাহ্রীরের সঙ্গে জড়িত। নিষিদ্ধ এ সংগঠনের সদস্যরা সুশিক্ষিত এবং বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।

সূত্র জানায়, মাদ্রাসার ছাত্ররা ইংরেজিতে ভালো না হওয়ায় ইংরেজি জানা শিক্ষার্থীদের টার্গেট করছে জঙ্গি গোষ্ঠী। প্রয়োজনে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীকে অপহরণের পর মগজ ধোলাই করে ও ভয় দেখিয়ে জঙ্গি সংগঠনে নাম লেখানো হচ্ছে। আবার এক শ্রেণির শিক্ষার্থী নিজে থেকেই জঙ্গি হয়ে যাচ্ছে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, কোনো শিক্ষার্থীকে টার্গেট করার পর জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের তার সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলার অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হয়। সেই জঙ্গি টার্গেট ছাত্রের সঙ্গে কৌশলে বন্ধুত্ব পাতায়। একপর্যায়ে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় জঙ্গি আস্তানায়। সেখানে যাওয়ার পর চাপ দিয়ে তাদের মোবাইল ফোন ও ফেসবুক আইডির পাসওয়ার্ড নিয়ে নেওয়া হয়। পরে জঙ্গি সংগঠনের পক্ষ থেকে অপহৃত তরুণদের মোবাইল ফোন ও ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে বার্তা  দেওয়া হয়।  এতে পরিবার ও বন্ধুরা ধরে নেয় সে বেঁচে আছে। ফেসবুক ও মোবাইল ফোন সচল থাকায় পরিবারের উদ্বেগও কম থাকে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, কেউ নিখোঁজ হলে অবশ্যই থানাকে জানানো দরকার। কিছু গোপন না করে সবিস্তারে পুলিশকে জানালে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। -কালেরকণ্ঠ

৫ জুলাই ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে