হাবীব রহমান : টানা সাড়ে ছয় বছরে বিভিন্ন খাতের অভাবনীয় উন্নয়ন প্রচারে মনোযোগী হচ্ছে সরকার। নিজের পরিকল্পনায় দেশের তৃণমূল পর্যায়ে বাস্তবায়িত নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ঘুরে দেখার ইচ্ছাও রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। এজন্য ঈদুল আজহার পর জেলা সফরে বের হতে পারেন তিনি। সে সময় বিভিন্ন জনসভায়ও উঠে আসবে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন চিত্র। জেলা সফরের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজেই সম্প্রতি তার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। আগামী অক্টোবর থেকে শুরু হতে পারে প্রধানমন্ত্রীর জেলা সফর।
জানা গেছে, সাত বিভাগের অন্তত ৩০টি জেলা ও ৫০টি উপজেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর করার পরিকল্পনা রয়েছে। সময় ও সুযোগ বুঝে এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
সূত্রমতে, সাংগঠনিকভাবে দুর্বল জেলা-উপজেলাগুলো আগে সফর করবেন শেখ হাসিনা। এখানে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলবেন এবং একটি করে জনসভায় বক্তৃতা করবেন প্রধানমন্ত্রী। সেসব জনসভায় বক্তৃতার মাধ্যমে সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরা হবে। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রচারণার পাশাপাশি এ সফরের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করা ও কিছু জেলায় স্থবির সাংগঠনিক কাজে গতি আনার নির্দেশ দেবেন।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, নেত্রী (শেখ হাসিনা) সারাদেশে সফরে বের হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, এর আগে তিনি কয়েকটি জেলায় সফর করেছেন, জনসভায় বক্তৃতা দিয়েছেন। মাঝখানে সরকারি কাজে ব্যস্ত সময় পার করার কারণে সফর কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সম্ভব হয়নি। তাছাড়া রাজনৈতিক পরিস্থিতিও অনুকূলে ছিল না। সেই সফর কার্যক্রম আবার শুরু হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগেই সারাদেশে উন্নয়নের প্রচার শুরু করবেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দলের সমন্বয়ে সারাদেশে সরকারের উন্নয়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হবে। এজন্য পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল গত ৩১ আগস্ট বিভিন্ন বিভাগে নির্বাচিত প্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। চলতি মাসের মধ্যেই উন্নয়ন প্রচারের পুরো কৌশল নির্ধারিত হয়ে যাবে। পরে বিভিন্ন ভাবে জনসমক্ষে উঠে আসবে এসব উন্নয়ন চিত্র। দেশের সাত বিভাগ ও জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে স্থাপিত হবে বিলবোর্ড। বিলবোর্ড স্থাপনের কাজ শুরু হবে চলতি মাসেই।
দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগের ভেতরে-বাইরে সমালোচনা হচ্ছিল সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কোনো প্রচারণা নেই। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ উল আলম লেনিন প্রতিবেদককে বলেন, সরকারের উন্নয়নের প্রচারণা নেই তেমন না। আমি নিজেই একটি পত্রিকার (উত্তরণ) সম্পাদনা করি। সেখানেও সরকারের উন্নয়নের বর্ণনা থাকে। তবে সরকারের যত উন্নয়ন, তার ঠিক তত প্রচার-প্রচারণা হচ্ছে না এবং বিরোধী শিবিরের অপপ্রচারের জবাবও দেয়া হচ্ছে না। এখন সরকার ও দলের পক্ষ থেকে নিজেদের উন্নয়নের প্রচার এবং বিরোধীদের অপপ্রচারের জবাব দুটোই দরকার।
রাজপথে কার্যকর বিরোধী দলের অভাব থাকলেও এ সময়ে সাংগঠনিকভাবে নিজেদের অনেকটা গুছিয়ে নিয়েছে শাসক দল। যদিও বিভিন্ন স্থানে শাসক দলের নিজেরাই নিজেদের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যেই ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বছরই মেয়াদোত্তীর্ণ অন্য সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন শেষ করার প্রস্তুতি রয়েছে শাসক দলের। এর বাইরে মূল দল আওয়ামী লীগের আর মাত্র ১৫টি সাংগঠনিক জেলা সম্মেলনের বাকি রয়েছে। এসব সম্মেলন শেষে চলতি বছরের ডিসেম্বরেই কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সম্মেলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগস্টে মাসব্যাপী শোক দিবসের আলোচনায়ও সংগঠনে গতি এসেছে। দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও এখন সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে যথেষ্ট সক্রিয়। তার প্রচেষ্টায় আগস্টে সফল কর্মসূচি পালনের পর বার কাউন্সিল নির্বাচন ও ইঞ্জিনিয়ারদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের জয় এসেছে। তাই এবার সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রচারণায় মন দেয়ার মোক্ষম সময় বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীনদের শীর্ষ নেতৃত্ব।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, সরকারের উন্নয়নের প্রচার যা হচ্ছে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমেই হচ্ছে। দলীয়ভাবে তেমন প্রচারণা নেই। তাই হয়তো প্রধানমন্ত্রী নিজেই উদ্যোগী হয়ে উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ ও প্রচারণায় বিভিন্ন জেলা সফর করতে পারেন।
ইন্টারনেট সপ্তাহ উদ্বোধনের পর গত শনিবার প্রধানমন্ত্রী সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জের নেতাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময়ের সময় এমন মনোভাব প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সারাদেশে আরেক বার সফর করার ইচ্ছা রয়েছে। বয়সের কারণে আগের মতো ঘোরা সম্ভবও না। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী এমপি প্রধানমন্ত্রীকে সিলেট সফরের আমন্ত্রণ জানালে তিনি সিলেটের বিভিন্ন এলাকার কথা উল্লেখ করে বলেন, এসব এলাকায় আগে রাস্তা ছিল না। আমি নৌকায় করে ঘুরে বেড়িয়েছি। এখন তো সেসব জায়গায় সড়ক-মহাসড়ক হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে। এগুলো আমাকে আনন্দিত করে। আমি এগুলো দেখতে চাই। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, তাছাড়া এখন বয়স হয়ে গেছে। আর একবার ঘুরে আসি।
আওয়ামী লীগ ও সরকারের বিভিন্ন সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী দিনরাত পরিশ্রম করে দেশের যে অভাবনীয় উন্নয়ন সাধিত করেছেন, তা এবার তিনি নিজের চোখে দেখবেন। প্রধানমন্ত্রীর জেলা সফরে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের উদ্বোধন এবং বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপিত হতে পারে। এসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরখ করার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন জনসভায় বক্তব্য রেখে উন্নয়নপূর্ব এবং বর্তমান অবস্থার বর্ণনা করবেন। জনগণকে স্মরণ করিয়ে দেবেন দেশের আগের অবস্থা কেমন ছিল আর এখন দেশের কী অবস্থা। স্থানীয় পর্যায়ে এসব উন্নয়নের পাশাপাশি ইউনিয়ন পর্যায়ে তথ্য প্রযুক্তির সেবা, কমিউনিটি হেল্থ ক্লিনিক, বিনা মূল্যে বই বিতরণ, সার প্রাপ্তির সহজলভ্যতা, কৃষকদের বিনামূল্যে অ্যাকাউন্ট, কৃষি জ্বালানিতে ভর্তুকি, সেচের সময়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহসহ তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ বর্তমান সরকারের আমলে সরাসরি উপকৃত হয়েছে এবং তাদের জীবন মানের উন্নয়ন হয়েছে এসব বিষয় এলাকার মানুষদের আবারো স্মরণ করিয়ে দিয়ে আসবেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রভাবশালী এক নেতা জানান, মধ্যবর্তী একটি নির্বাচনের চাপ রয়েছে সরকারের ওপর। বিএনপি রাজপথে সে দাবি তুলতে না পারায় সরকার সেটি বারবার এড়িয়ে (ওভারলুক) যাচ্ছে। নতুন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে আগামী বছর একটি নতুন নির্বাচনের সম্ভাবনা রয়েছে। সে সম্ভাবনা থেকেও প্রধানমন্ত্রী জেলা সফরে যেতে পারেন।-মানবকণ্ঠ
৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে