মঙ্গলবার, ০৫ জুলাই, ২০১৬, ০৩:২৬:০১

হঠাৎই বদলে যান নিবরাস

হঠাৎই বদলে যান নিবরাস

নিউজ ডেস্ক : ২০১৪ সাল পর্যন্তও নিবরাস ইসলাম ছিলেন আর ১০ জন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রের মতোই। হাসতে, মজা করতে ভালোবাসতেন। ফুটবল পাগল ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ বদলে যান নিবরাস। ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর ভোর ৩টা ১৯ মিনিটে টুইট বার্তায় নিবরাস লেখেন, ‘চিরবিদায়।’

টুইটারে আইএসের এক প্রচারকসহ জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল নিবরাসের। মোনাস বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিবরাসের এক সহপাঠী বলেন, নিবরাস ছবি তুলতে পছন্দ করতেন। বিশেষ করে নিজের ছবি। বন্ধুরা এ জন্য তাঁকে প্রায়ই খ্যাপাতো। রেস্তোরাঁয় গেলেই বন্ধুদের সঙ্গে সেলফি তোলা ছিল নিবরাসের শখ। ওই সহপাঠী আরও জানান, বলিউড তারকাদের দারুণ ভক্ত ছিলেন নিবরাস। ছিলেন লিভারপুল ফুটবল ক্লাবের সমর্থক।

মেয়েদের কাছে আকর্ষণীয় হওয়ায় নিবরাসকে অনেক বন্ধু ঈর্ষাও করত। মোনাস বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ফেসবুক পেজে ২০১৪ সালের ১১ অক্টোবর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী নিবরাসকে উদ্দেশ করে একটি পোস্ট দেন। তাতে লেখা ছিল, ‘নিবরাস ইসলাম!! তুমি খুব সুন্দর। কিন্তু তোমার নাগাল পাওয়া কঠিন। বল, কখন তোমার দেখা পাব। তোমার হাসি দেখলে আমার দিন রঙিন হয়ে ওঠে।’

২০১৪ সালের শুরুর দিক থেকে নিবরাস বদলে যেতে শুরু করেন। ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই নিবরাসকে চিনতেন এক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, মালয়েশিয়া ছাড়ার আগে তিনি নিবরাসের সঙ্গে দেখা করতে একটি রেস্তোরাঁয় যান। নিবরাস তাঁকে সালাম দেওয়ায় তিনি অবাক হয়ে যান। কারণ দেখা হলে নিবরাস সাধারণত ‘হাই, হ্যালো’ করেই সম্ভাষণ করতেন। ওই ছাত্র আরও বলেন, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি ওয়াক্তে নামাজ পড়তাম। কিন্তু নিবরাসকে কখনো নামাজ আদায় করতে দেখিনি।’

২০১৫ সালের দিকে নিবরাস মোনাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলে যান। বন্ধুদের বলেছিলেন, পরিবার ও বাড়ির কাছে থেকে তিনি পড়াশোনা করতে চান।

নিবরাস ১০টি টুইটার অ্যাকাউন্ট অনুসরণ করতেন। তার মধ্যে একটি ছিল সামিউইটনেস। সেটি পরিচালনা করত আইএসের প্রচারক মেহেদি মাসরুর বিশ্বাস। গত বছর ভারতের বেঙ্গালুরু থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ফ্রান্সের ব্যঙ্গাত্মক পত্রিকা শার্লি এবদোর কার্যালয়ে জঙ্গি হামলার পরই গত বছরের জানুয়ারিতে টুইট করেন ব্রিটেনের কট্টরবাদী আনজেম চৌধুরী। তিনি ফ্রান্সের সমালোচক ছিলেন। সেটিতে লাইক দিয়েছিলেন নিবরাস।

আন্দালিব আহমেদ নামে এক ব্যক্তির টুইট অ্যাকাউন্টে দেখা গেছে তিনি মোনাস বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জড়িত। তাঁর সঙ্গে নিবরাসের যোগাযোগ থাকতে পারে বলে সন্দেহ রয়েছে। মালয়েশিয়ার পুলিশ বলছে, ২০১২ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত আন্দালিব মালয়েশিয়ায় ছিলেন। এরপর তিনি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে চলে যান। সিরিয়ায় আইএস জঙ্গি দলে যারা যোগ দিতে চান তাদের বেশির ভাগই তুরস্ক হয়ে যান।

গুলশানের রেস্তোরাঁয় জিম্মি উদ্ধার অভিযানে নিহত সন্দেহভাজন হামলাকারীদের মধ্যে একজন মালয়েশিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নিবরাস ইসলাম। ডিবির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত ৩ ফেব্রুয়ারি জঙ্গি সন্দেহে তিন তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাঁদের কাছ থেকে প্রথমে নিবরাস ইসলাম ও রোহান ইমতিয়াজের নাম পাওয়া যায়। ওই তথ্যের ভিত্তিতে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা একটি মামলায় নিবরাসকেও আসামি করা হয়েছিল। অভিযোগ ছিল, তাঁরা বড় ধরনের নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পরে নিবরাসের খোঁজে পুলিশ তাঁর বাসায় গেলে পরিবার থেকে জানানো হয়, তিনি নিখোঁজ। এরপর নানা জায়গায় তাঁকে খোঁজাখুঁজি করে পুলিশ। পুলিশ এটাও জানতে পারে, তিনি মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের মালয়েশিয়া ক্যাম্পাসের ছাত্র হলেও দীর্ঘদিন ধরে ঢাকাতেই অবস্থান করছেন। -রয়টার্স, প্রথম আলো
৫ জুলাই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে