ঢাকা : প্রতিটি সন্তানই একজন বাবার আদরের। সন্তানকে মানুষ করতে কত কষ্টই না করে থাকেন বাবারা। কোনো বাবাই চান না যে সন্তান বিপথগামী হোক। তারপরও ভাগ্যক্রমে যা হয়। এমনই এক বাবার মনে যত কষ্ট। পরীক্ষার কথা বলে বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ছেলের এমন কাণ্ড মেনে নিতে পারছেন না তিনি।
পরীক্ষার প্রস্তুতিমূলক ক্লাসে অংশ নেয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় মীর সামিহ হায়াত কবীর। গত ২৯ ফেব্রুয়ারির কথা। এরপর কেটে যায় চার মাস। সামির কোনো হদিস পায়নি তার পরিবার।
ছেলেকে নিয়ে মহা শঙ্কায় পড়ে যায় পরিবারের সদস্যরা। পরিবার ভাবতে থাকে হয়তো সামি কারো প্রেমে পড়েছে। আবার কখনো তাদের মনে আশঙ্কা তৈরি হয়, সামিহকে হয়তো অপহরণ করা হয়েছে।
শনিবার স্বজনরা সাংবাদিকদের জানালেন, শুক্রবার গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলার পর শনিবার প্রকাশিত হামলাকারীদের ছবি দেখে সামিহকে শনাক্ত করেন তারা।
ছেলে জঙ্গিদের কাতারে নাম লিখিয়ে এমন জঘন্য হত্যাকাণ্ডে অংশ নেবে তা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না বাবা মীর হায়াত কবীর। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বারবার তিনি বলছিলেন- ‘ও আমার ছেলে হতে পারে না। আমি যদি জানতাম ও সেখানে যাচ্ছে, তবে জীবন দিয়ে হলেও তাকে থামাতাম।’
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার রাতে গুলশান ২ নম্বরের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলা চালায় একদল অস্ত্রধারী জঙ্গি। এরপর তারা অন্তত ৩৩ দেশি-বিদেশিকে জিম্মি করে।
প্রায় ১২ ঘণ্টা পর কমান্ডো অভিযান চালিয়ে ওই রেস্টুরেন্টের নিয়ন্ত্রণ নেয় সশস্ত্রবাহিনী। ১৩ জন জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার করা হলেও ২০ জনের লাশ পাওয়া যায় জবাই করা অবস্থায়। কমান্ডো অভিযানে ৬ হামলাকারী নিহত হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে তাদের ছবিও প্রকাশ করা হয়। সেখান থেকে আত্মীয় ও পরিচিতজনরা ছবি দেখে সামিহকে শনাক্ত করেন।
সামিহ মোবাশ্বিরের বাবা হায়াত কবীর একটি টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানির এক্সিকিউটিভ। তিনি জানান, মুসলিম পরিবারের সন্তান সামিহ সবসময় ধর্মের ব্যাপারে আগ্রহী ছিল।
পরিবার কখনো তার ধর্মবিশ্বাসকে নিরুৎসাহিত করতো না। ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াশোনা করা ছেলে যেন ইসলামের ব্যাপারে বিকৃত ধারণা না পায় সে ব্যাপারে তার বাবার সচেতনতাও ছিল।
তিনি সামিহকে পবিত্র কোরআনের ইংরেজি সংস্করণ দিয়েছিলেন এ বিবেচনায় যে, সেখানে বিকৃত ব্যাখ্যা থাকবে না ইসলামের।
বাবা চাইতেন, ছেলে অন্য কোনো জায়গার বিকৃত ব্যাখ্যা থেকে প্রভাবিত না হয়ে যেন সরাসরি ইসলামের মতবাদ নিজেই অনুসন্ধান করে নিতে পারে। নিজের বিশ্বাস নিজেই গড়ে তুলতে পারে।
১৮ বছর বয়সী ছেলে সামিহ'র খুব বেশি বন্ধুও ছিল না। পরিবারের বিশ্বাস, এ সুযোগকেই কাজে লাগিয়েছে জঙ্গিরা।
হায়াত কবীর বলেন, আমি ঠিক জানি না ওরা তাকে কী বলেছে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, তারা ওর আত্মমর্যাদাবোধ এবং বিশ্বাসের ফায়দা নিয়েছে।
বাবা হায়াত কবীর এখনো নিজেকে সামলে তুলতে পারছেন না। ‘আমি এখনো বিশ্বাস করতে চাই যে, ওই লাশগুলোর মধ্যে সামিহ নেই। আমি এখনো ওর অপেক্ষায় থাকতে চাই। আশায় বুক বেঁধে রাখতে চাই, একদিন ও ফিরে আসবে আমার বুকে। তথ্যসূত্র : সিএনএন