ঢাকা : রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলার ঘটনায় আটক হাসনাত রেজা করিমকে ছেড়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তার বাবা এম আর করিম। তিনি বলেছেন, সন্দেহ থাকলে পুলিশের উচিত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া।
গুলশান রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আসার পর তিনদিন ধরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত। তাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনতে আইনজীবীদের কাছে যাবেন বলেও মঙ্গলবার জানিয়েছেন এম আর করিম।
তিনি বলেন, তিনদিন ধরে হাসনাত ডিবির কাছে আছে। তার সঙ্গে দেখা করতে পারছি না। হাসানাতের সঙ্গে কোনো কথা বলতে পারছি না। এখন কী করতে হবে- সেই পরামর্শ নিতেই আইনজীবীর কাছে যাব।
শুক্রবার হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে বন্দুকধারীরা হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে জিম্মি করে হত্যা করে। শনিবার সকালে কমান্ডো অভিযান চালিয়ে জিম্মি সঙ্কটের অবসানের পর দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়, সন্দেহভাজন ছয় হামলাকারী নিহত হয়েছে, একজন ধরা পড়েছে। অবশ্য নিহত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনকে পরে হামলাকারী হিসেবে শনাক্ত করা হয়।
শনিবার সকালে উদ্ধার করা ১৩ জনসহ ২৭ জনকে নিয়ে যাওয়া হয় গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে। পরে তাদের বক্তব্য শুনে যাচাই-বাছাই করে অনেককে ছেড়ে দেয়া হয়।
মঙ্গলবার ঢাকা পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলায় সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন উদ্ধার হওয়া জিম্মি হাসনাত রেজা করিম ও তাহমিদ হাসিব খান। তদন্তের স্বার্থে সন্দেহভাজন অন্যদেরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হবে।
শনিবার কমান্ডো অভিযান শুরুর আগে এক ভিডিওতে রেস্টুরেন্ট থেকে হাসনাত রেজা করিমকে সপরিবারে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ’র সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজা করিম পুলিশকে বলেছেন, মেয়ে সাফা করিমের জন্মদিন করতে শুক্রবার স্ত্রী শারমিন পারভীন ও ছেলে রায়ান করিমকে নিয়ে গিয়েছিলেন হলি আর্টিজানে।
হাসনাতের বাবা গণমাধ্যমকে বলেন, আমার ছেলেকে তারা যদি সন্দেহ করে থাকে তাহলে তার তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করুক।
এসময় তিনি তদন্তে সহযোগিতা করারও আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, তাকে সন্দেহের কারণ আছে। তাকে নিয়ে জঙ্গিরা ঘুরে বেড়িয়েছে। কোরিয়ান নাগরিক ফটো তুলেছে। সে এমনভাবে বেরিয়ে এসেছে যেন তার কিছুই হয়নি।
তিনি ছেলের ভূমিকা জানতে জঙ্গি হামলায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি, বিশেষ করে রেস্টুরেন্টের কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানান।
হাসনাতের বাবার দাবি, হাসনাতের পাসপোর্ট দরকার হলে ডিবি রেখে দিক। তারা তদন্ত করুক পুরো বিষয়টার। এরপর তার বিরুদ্ধে কোনো কিছু পেলে ব্যবস্থা নিক।
পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, নিষিদ্ধ সংগঠন হিজবুত তাহরিরের সঙ্গে যোগাযোগ থাকার কারণে হাসনাতকে অব্যাহতি দিয়েছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এম আর করিম বলেন, সংবাদ মাধ্যমে যেসব খবর আসছে সেগুলো ফ্যাক্ট না। হাসনাত একসময় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করত। বর্তমানে আমার প্রতিষ্ঠান বেসিক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডর পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছে।
হাসনাত লন্ডন ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েশন এবং আমেরিকা থেকে এমবিএ করেছেন বলেও জানান তার বাবা।
গুলশানের ঘটনার পর হাসনাতের স্ত্রী এবং দুই সন্তানকেও ডিবি অফিসে রাখা হয়। তারা রোববার বাড়ি ফেরার সুযোগ পেলেও হাসনাতকে ফেরার অনুমতি ডিবি পুলিশ দেয়নি বলে দাবি করেন তার বাবা।
উল্লেখ্য, শুক্রবার সন্ধ্যারাতে গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের ওই রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পুলিশের গোলাগুলির ঘটনায় ডিবির সহকারী (এসি) রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন নিহত হন।
হামলাকারীরা রাতেই দেশি-বিদেশিসহ ২০ জনকে গলা কেটে হত্যা করে।
শনিবার সকালে রেস্টুরেন্টটিতে কমান্ডো অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ৬ হামলাকারী নিহত হয় বলে আইএসপিআইআরের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
আর্টিজানের মালিকের দাবি, ৬ জনের একজন সাইফুল চৌধুরী। তিনি আর্টিজানের কুক ছিলেন। এরই মধ্যে বাকি ৫ হামলাকারীর পরিচয় প্রকাশিত হয়েছে।
তারা হলেন নিবরাস ইসলাম, রোহান ইমতিয়াজ, মীর সামিহ মোবাশ্বির, খায়রুল ইসলাম পায়েল এবং শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল। আত্মীয় ও পরিচিতজনরা তাদের ছবি দেখে শনাক্ত করেন।
৫ হামলাকারীর প্রত্যেকেই বেশ কিছুদিন আগে বাসা ছেড়ে হঠাৎ উধাও হয়ে যায়। এদের তিনজন রাজধানীর বিভিন্ন নামিদামি স্কুল-কলেজে পড়েছে বলে তাদেরই বন্ধুরা দাবি করেছে। এদের মধ্যে দুজন মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতো। তাদের একজন নিব্রাস ইসলাম।
৫ জুলাই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম