মঙ্গলবার, ০৫ জুলাই, ২০১৬, ০৯:৪৮:৫০

প্রেমিকার সঙ্গে যখন খটকা লাগে নিব্রাসের

 প্রেমিকার সঙ্গে যখন খটকা লাগে নিব্রাসের

নিউজ ডেস্ক : ২০১৪ সালের শেষ ভাগ পর্যন্ত পরিচিতদের কাছে গড়পড়তা সাধারণ একজন ছাত্র হিসেবেই পরিচিত ছিল নিব্রাস ইসলাম।  সে ছিল কৌতুকপ্রিয় মানুষ।  

ফুটবল খেলতেও ভালোবাসত।  
মানুষজন তাকে পছন্দ করত।  মেয়েদের চোখে সে ছিল হ্যান্ডসাম এক তরুণ।  হ্যান্ডসাম এই তরুণের প্রেমে পড়েছিল সেই তরুণী।  কিন্তু প্রেমিকার নাম জানা যায়নি।

মনাশ বিশ্ববিদ্যালয় নিব্রাসকে যারা চিনত, তারা বলছে, নিব্রাসের একজন প্রেমিকাও ছিল।  তার সাথে ২০১৪ সালেই ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় তার।

তারপর গত বছরের কোনো এক সময় নিব্রাস কুয়ালালামপুরের মনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়। সেখানকার পরিচিতরা ভেবেছিল, সে হয়তো দেশে ফিরে গেছে।

এরপর থেকে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে বিচরণ কমিয়ে দেয় নিব্রাস।  স্ন্যাপচ্যাট ও ফেসবুকে পোস্ট করা বন্ধ করে দেয়।

তবে তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টটি এখনো সচল আছে।
নিব্রাস মোটে দশটি টুইটার অ্যাকাউন্ট অনুসরণ করতো।

এর একটি হলো শামিউইটনেস বলে একটি অ্যাকাউন্ট।  গত বছর ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে আটক হওয়া আইএসের প্রোপাগাণ্ডাবিদ মেহদি মাসরুর বিশ্বাস এই অ্যাকাউন্টটি পরিচালনা করত।

মনাশ ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের একটি ফেসবুক পাতায় ২০১৪ সালের ১১ অক্টোবর একজন অজ্ঞাত অনুরাগী লিখেছেন, ‌‘নিব্রাস ইসলাম!! তুমি এত্ত কিউট। কিন্তু তোমাকে খুঁজে পাই না।  বলো, কখন তোমাকে দেখব।  তোমার হাসি দেখলে আমার দিনটাই ভালো হয়ে যায়’।

কিন্তু শুক্রবার রাতে গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্তোঁরায় ১৭জন বিদেশিসহ কুড়িজন নিরীহ মানুষকে হত্যার জন্য যে ছয়জনকে সন্দেহ করছে পুলিশ তাদের একজন এই নিব্রাস।

মালয়েশিয়ার পুলিশের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, হামলাকারী জঙ্গিদের অন্তত দু'জন অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত মনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের কুয়ালালামপুর ক্যাম্পাসের ছাত্র ছিল।

তদন্তকারীরা এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য পাচ্ছে, তাতে হামলাকারীদের এমন এক প্রোফাইল ফুটে উঠছে যেখানে তারা ধনাঢ্য পরিবারের শিক্ষিত একদল তরুণ, যারা অতি সম্প্রতি কট্টর ইসলামপন্থা বেছে নিয়েছে।

তবে এটা স্পষ্ট না কোথায়, কখন এবং কীভাবে এরা কট্টরপন্থীতে পরিণত হলো।  মালয়েশিয়া যাবার আগে ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত থাকাকালে নিব্রাসের যারা বন্ধু ও পরিচিত ছিলেন তারা বলছেন, নিব্রাস বদলে যেতে শুরু করেছিল, তার কিছু লক্ষণও প্রকাশ পাচ্ছিল।

ঢাকার ব্যয়বহুল একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে নিব্রাসকে চিনত এমন একজন বলছিল, এক জানুয়ারি মাসে একটি ক্যাফেতে নিব্রাসের সাথে দেখা হলে সে তাকে সংক্ষিপ্ত সালামের বদলে দীর্ঘ বাক্যের এক সালাম দেয় (আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ)।

সেদিন তার আচরণ একটু অন্যরকম লেগেছিল। সেতো এমনটি নয়! বলছিল নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই ছাত্রটি।

মনাশ বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে নিব্রাস পড়ত, সেখানকার স্নাতক কোর্সের খরচ ৯ হাজার ডলারের কাছাকাছি।  বাংলাদেশের বার্ষিক গড় আয়ের ছয়গুণ বেশি এই খরচ।

ব্রিটেনের নামকরা ইসলাম ধর্মের প্রচারক আনজেম চৌধুরীর এমন একটি টুইট সে পছন্দ (লাইক) করেছিল, যেটিতে ২০১৫ সালে ফ্রান্সের শার্লি হেবদো পত্রিকা কার্যালয়ে জঙ্গি হামলার পরবর্তী সময়ে ফ্রান্স এবং তার সহযোগী দেশগুলোকে সমালোচনা করা হয়েছিল।

এর ঠিক দু'মাস পর সে টুইটারে লিখেছিল ‘চির বিদায়’।  মনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক ছাত্র আন্দালিব আহমেদ সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না।

মালয়েশিয়ার পুলিশের একটি সূত্র বলছে, আন্দালিব ২০১২ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত মালয়েশিয়াতে ছিল। পরে সে ইস্তানবুল যায়।

যারা সিরিয়া ও ইরাকে কথিত ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠিতে যোগ দিতে চায় তারা প্রায়ই ট্রানজিট হিসেবে তুরস্ককে ব্যবহার করে।

 বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বরাত দিয়ে এসব জানিয়েছে বিবিসি।

উল্লেখ্য, শুক্রবার সন্ধ্যারাতে গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা।  গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের ওই রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পুলিশের গোলাগুলির ঘটনায় ডিবির সহকারী (এসি) রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন নিহত হন।

হামলাকারীরা রাতেই দেশি-বিদেশিসহ ২০ জনকে গলা কেটে হত্যা করে।

শনিবার সকালে রেস্টুরেন্টটিতে কমান্ডো অভিযান চালানো হয়।  অভিযানে ৬ হামলাকারী নিহত হয় বলে আইএসপিআইআরের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

আর্টিজানের মালিকের দাবি, ৬ জনের একজন সাইফুল চৌধুরী।  তিনি আর্টিজানের কুক ছিলেন। এরই মধ্যে বাকি ৫ হামলাকারীর পরিচয় প্রকাশিত হয়েছে।

তারা হলেন নিবরাস ইসলাম, রোহান ইমতিয়াজ, মীর সামিহ মোবাশ্বির, খায়রুল ইসলাম পায়েল এবং শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল।  আত্মীয় ও পরিচিতজনরা তাদের ছবি দেখে শনাক্ত করেন।

৫ হামলাকারীর প্রত্যেকেই বেশ কিছুদিন আগে বাসা ছেড়ে হঠাৎ উধাও হয়ে যায়।  এদের তিনজন রাজধানীর বিভিন্ন নামিদামি স্কুল-কলেজে পড়েছে বলে তাদেরই বন্ধুরা দাবি করেছে।

এদের মধ্যে দুজন মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতো।  তাদের দুজনের একজন নিবরাস ইসলাম।  নিবরাস খুব একটা ধার্মিকও ছিল না।
৫ জুলাই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে