বুধবার, ০৬ জুলাই, ২০১৬, ১২:০৫:৪২

গুলশানের এক জিম্মিকে নিয়ে সন্দেহ

গুলশানের এক জিম্মিকে নিয়ে সন্দেহ

মীর সাব্বির : গুলশানে সন্ত্রাসী হামলা থেকে যে জিম্মিরা জীবিত ফিরে এসেছেন তাদের কয়েকজন এখনো গোয়েন্দা পুলিশের জিম্মায় রয়েছেন।

শনিবার সকালে অভিযানের পর আইএসপিআর থেকে ১৩ জনকে উদ্ধারের কথা বলা হয়েছিলো।

জিম্মিদের মধ্যে অন্তত দু’জন পুলিশের হেফাজতে থাকার কথা জানা গেছে। তাদের একজন তাহমিদ হাসিব খান এবং অপরজন হাসনাত রেজা করিম।

তাহমিদ খান কানাডা থেকে দেশে ফিরে বন্ধুদের সাথে সেদিন সন্ধ্যায় হেলি আর্টিজানে গিয়েছিলেন।

অপর জিম্মি হাসনাত রেজা করিমকে নিয়ে কিছু রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।

বিশেষ করে তার অতীত ইতিহাস এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ হওয়া কিছু ভিডিও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

মি. করিম একটি প্রকৌশল প্রতিষ্ঠানের পরিচালক এবং বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক।

পুলিশের একজন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন যে মি. করিমকে তারা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। তবে তাকে আটক করা হয়নি এবং এবিষয়ে যে মামলা হয়েছে সেখানেও তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আনা হয়নি।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনার দিন পার্শ্ববর্তী একটি ভবন থেকে একজন কোরীয় নাগরিকের করা একটি ভিডিওর সূত্র ধরে মি. করিমের বিষয়ে কিছু সন্দেহ তুলে ধরা হচ্ছে।

একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে মি. করিম রেস্টুরেন্টের কাঁচের দরজার ভেতরে দাঁড়িয়ে অস্ত্রধারী একজনের সাথে কথা বলছেন এবং অপর একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে তিনি রেস্টুরেন্টের দোতলার বারান্দায় হাঁটছেন এবং তার পেছনে দুজন রয়েছে যাদের হাতে অস্ত্র রয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

হাসনাত রেজা করিম শুক্রবার তার পুরো পরিবারকে নিয়ে হেলি আর্টিজানে খেতে গিয়েছিলেন এবং সেখানে তিনি ছাড়াও তার স্ত্রী ও দুই সন্তান সারারাত জিম্মি ছিল।

তার ১৩ বছর বয়সী কন্যার জন্মদিন পালন উপলক্ষে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে তার পরিবার। তার ছেলের বয়স ৮ বছর।

মি. করিম এখনো পুলিশের জিম্মায় থাকলেও তার স্ত্রী এবং সন্তানেরা বাসায় ফিরে এসেছেন।

মি. করিমের বিষয়ে সামাজিক মাধ্যমে যেসব সন্দেহ প্রকাশ করা হচ্ছে এবিষয়ে বিবিসি বাংলার সাথে কথা বলেছেন তার স্ত্রী শারমিনা পারভিন করিম।

মিসেস করিম বলেন, এসব ছবি এবং ভিডিওতে মি. করিমের যেসব কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে তার সবই তিনি সন্ত্রাসীদের বন্দুকের মুখে করতে বাধ্য হয়েছেন।

“সকাল ৬ টার দিকে ওকে (মি. করিম) বললো যে আপনি আমাদের সাথে আসেন আর আরেকটা যে ছেলে ছিল তাকেও নিয়ে তারা ছাঁদে চলে গেল। প্রায় ১০ মিনিটের মতো ওদেরকে ছাঁদে রেখেছিল। তাদেরকে অস্ত্র দেখিয়ে ছাঁদের বিভিন্ন কোণায় যেতে বলা হয় এবং হাত দিয়ে পুলিশের লোক কোনদিকে আছে সেটি দেখায়। ১০ মিনিট পরে ওদেরকে নামিয়ে জিজ্ঞেস করলো এখন বলেন আপনাদের কি করলে ভালো হয়?” বলেন মিসেস করিম।

রাতে মি. করিমের হাতে একটি সাইকেলের লক দিয়ে রেস্টুরেন্টের দরজা বন্ধ করতে সন্ত্রাসীরা নির্দেশ দেয় বলে জানান তার স্ত্রী।

তিনি বলেন, রাতের প্রায় পুরো সময়টিতেই তাদের পরিবারের চারজন, একটি ছেলে, দুটি মেয়ে এবং আরেকজন লোককে একটি টেবিলে মাথা নিচু করে রাখতে বলে সন্ত্রাসীরা।

“কাঁচের দরজার সামনে যেই ছবি নিয়ে কথা হচ্ছে সেটি আমাদের সামনেই ঘটেছে। টেবিল থেকে দরজাটা বেশি দূরে না। দরজাটা খুলে এসে ওকে (মি. করিম) বললো যে এখানে আপনি দাঁড়ান। তাকে দাঁড় করিয়ে রাখলো তারপর আমাদেরকে উঠে দাঁড়াতে বললো। ও কিন্তু দরজার সাথেই দাঁড়ানো ছিল। টেবিল থেকে আমরা হেঁটে একেক করে, ও প্রথমে তার পেছনে আমরা আটজন একসাথে বেরিয়ে গেলাম।”

কোরীয় নাগরিকের করা ভিডিওতে এই আটজনের বেরিয়ে যাওয়ার দৃশ্যও দেখা যায়।

মি. করিমকে নিয়ে সন্দেহের প্রতিবাদ জানিয়েছেন তার বাবা রেজাউল করিম।

তিনি বলেন, তার ছেলেকে নিয়ে মিথ্যা ছড়ানো হচ্ছে।

তিনি বলেন, “কেউ হামলা চালানোর জন্য পরিবারকে নিয়ে যায় না।”

জিম্মি অবস্থা থেকে মুক্তি পাবার পর শনিবারেই হাসনাত করিমের বাসা থেকে তার ল্যাপটপ জব্দ করে পুলিশ।

তবে মি. করিমকে সন্দেহভাজন হিসেবে দেখা হচ্ছে কিনা এনিয়ে এখনো পুলিশ স্পষ্ট করে কিছু বলছে না। -বিবিসি
৫ জুলাই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে