বুধবার, ০৬ জুলাই, ২০১৬, ০৯:৩০:২৪

প্রথম প্রতিরোধকারী পুলিশ কর্মকর্তা ফারুকের বর্ণনায় গুলশান হামলা

প্রথম প্রতিরোধকারী পুলিশ কর্মকর্তা ফারুকের বর্ণনায় গুলশান হামলা

ঢাকা : শরীরের অর্ধেকটা ভারী ব্যান্ডেজে মোড়া। হাসাপাতালের বেডেই খাওয়া ও বাথরুম। পাশে আছেন স্ত্রী ও মেয়ে। তারাই এখন দেখভাল করছেন এসআই ফারুকের, যিনি কিনা গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টে সর্ব প্রথম চার কনস্টেবলকে সঙ্গে নিয়ে সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করেন। মঙ্গলবার রাতে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালের জরুরি বিভাগের বেডে দেখা হয় এই বীর পুলিশ সদস্যের সাথে।

ফারুক বলেন, ‘ওইদিন একটাই পণ করেছিলাম, মরলে মরবো কিন্তু সন্ত্রাসীদের পালাতে দেবো না। গ্রেনেডের স্প্লিন্টার ও গুলির আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিলাম, কিন্তু পিছ পা হইনি।’

ওই রাতের প্রথম দিকের ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইতেই কয়েক সেকেন্ড চোখ বুঝে থাকেন তিনি। তারপর বিড়বিড় করে বলতে শুরু করেন। ‘আমি তখন হোটেল ওয়েস্টিনের সামনে টহল ডিউটিতে। হঠাৎ ওসি স্যার জানালেন গুলশান-২ নম্বরের ৭৯ নম্বর সড়কে গোলাগুলি হচ্ছে। সঙ্গে চার কনস্টেবল নিয়ে ছুটে গেলাম সেখানে। গিয়ে দেখি এক ব্যক্তি রক্তাক্ত হয়ে পড়ে আছে। পাশেই একটি কালো প্যারাডো গাড়ি দাঁড়ানো। আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে দ্রুত গাড়িটি চলে গেলো।’

‘চারজন কনস্টেবল নিয়ে আমি রেস্টুরেন্টের গেট দিয়ে ভেতরে দু’পা এগোতেই বৃষ্টির মতো গুলি শুরু হলো। সাথে গ্রেনেডও। আমিসহ সঙ্গে থাকা দুই কনস্টেবল আলমগীর ও প্রদীম মাটিতে লুটিয়ে পড়লাম। অন্যরা গুলি চালাচ্ছে। ওদের বললাম- তোমরা থেমো না। শর্টগানের গুলি চালাতে থাকো। ওদিকে আমি ওয়ারলেসে ওসি স্যারকে জানালাম, সন্ত্রাসীরা আমাদের ওপর হামলা করেছে। অনবরত গুলি ও গ্রেনেড ছুঁড়ছে।’ এ কথাগুলো বলতে বলতে অনেকটাই আবেগী হয়ে পড়েন এসআই ফারুক।

হামলাকারী ক’জন ছিল জানতে চাইলে ফারুক বলেন, ‘সংখ্যায় পাঁচজন ছিল। তাদের মধ্যে দু’জনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র। আর অন্যদের হাতে ছোট ছোট ব্যাগ ছিল। ওই ব্যাগ থেকেই তারা গ্রেনেড ছুঁড়ছিল। তবে তাদের চেহারা পরিষ্কার মনে নেই। ঝাঁপসা ঝাঁপসা মনে আছে।’

এসআই ফারুকের স্ত্রী রুমানা বেগমের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের পারচন্দ্রা দিঘলিয়া গ্রামে। একবছর আগে ফারুক বলদি হয়ে এসেছেন গুলশান থানায়। আগে ছিলেন ভাষানটেকে। সেই সুবাদে ওখানেই তারা ভাড়া বাসায় থাকতেন। দুই ছেলে ও এক মেয়ের সংসার তাদের।

বড় ছেলের নাম ইমতিয়াজুর রহমান ইমন (১৫)। সে শহীদ রমিজ উদ্দিন স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ছেলে সিয়াম আহমেদ আবির (৬)। সে একই স্কুলে নার্সারিতে পড়ে। মেয়ে সুমাইয়া আক্তার লাবনীও (৯) একই স্কুলে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী।

উল্লেখ্য, শুক্রবার হলি আর্টিসান বেকারি নামের রেস্টুরেন্টে বন্দুকধারীরা হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জিম্মিকে হত্যা করে। সন্ত্রাসীদের ছোড়া গ্রেনেডে প্রাণ যায় ডিবির এসি রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন খানের।

পরে শনিবার সকালে কমান্ডো অভিযান চালিয়ে জিম্মি সঙ্কটের অবসানের পর দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়, সন্দেহভাজন ছয় হামলাকারী নিহত হয়েছে এবং একজন ধরা পড়েছে। অবশ্য নিহত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনকে পরে হামলাকারী হিসেবে সনাক্ত করা হয়।

শনিবার সকালে উদ্ধার ১৩ জনসহ ২৭ জনকে নিয়ে যাওয়া হয় গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে। পরে তাদের বক্তব্য শুনে যাচাই-বাছাই করে অনেককে ছেড়ে দেয়া হয়। আবার কেউ কেউ এখনো আটক রয়েছেন।-বাংলামেইল
৬ জুলাই ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে