বুধবার, ০৬ জুলাই, ২০১৬, ০৩:৫৪:১০

গুলশান ম্যাসাকারকারী জঙ্গিদের পালানোর কাজে ব্যবহৃত প্যারাডো গাড়িটি কার?

গুলশান ম্যাসাকারকারী জঙ্গিদের পালানোর কাজে ব্যবহৃত প্যারাডো গাড়িটি কার?

নিউজ ডেস্ক : রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর জঙ্গিরা পালিয়ে যেতে চেয়ে ছিল। এমন কি এ জন্য বেকারির বাইরে একটি প্রাডো গাড়িও আনা হয়েছিল! মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য জানান পুলিশের এসআই ফারুক হোসেন।

তিনি জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার পর গুলশান থানার একটি টহল টিম দায়িত্ব পালন করছিল গুলশানে হোটেল ওয়েস্টিনের পাশে। হঠাৎ গুলশান থানার ওসি ওয়াকিটকিতে বার্তা পাঠান লেকভিউ ক্লিনিক আক্রান্ত হয়েছে। এই বার্তা পাওয়ার পর এক মুহূর্ত দেরি না করে ছয় সদস্যের টহল টিম নিয়ে সেখানে পৌঁছে যান তিনি। সেখানে গিয়ে দেখেন, মূল গেটের ভেতরে একজন আহত হয়ে পড়ে আছেন। তিনি জানালেন, ভেতরে অনেককে হত্যা করা হয়েছে। এ সময় বেকারির বাইরে দাঁড়িয়েছিল একটি প্রাডো গাড়ি। পুলিশের টহল গাড়িদেখার পরপর সেটা দ্রুত পালিয়ে যায়। হোটেলের ভেতর থেকে কয়েকজন দুর্বৃত্তও পালানোর চেষ্টা করছিল। গাড়িটি সম্ভবত তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। জঙ্গিদের লক্ষ্য করে গুলি শুরু হলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। গ্রেনেডের আঘাতে প্রথমে দু’জন কনস্টেবল আহত হন। তারপরও তাদের লক্ষ্য করে আমরা গুলি ছুড়তে থাকি। তখন তারা রেস্তোরার ভেতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়। এ সময়ে ওয়াকিটকিতে আক্রান্ত হওয়ার খবর দিই। সবাইকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট নিয়ে আসতে বলি। জঙ্গিদের অন্তত পাঁচ সদস্যকে দেখেছি আমি। দু’জনের কাছে ব্যাগ ছিল। সবার কাছেই ছিল ক্ষুদ্রাস্ত্র।

এসআই ফারুক হোসেন আরও বলেন, পুলিশের পরবর্তী টিম আসার আগ পর্যন্ত সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করতে আমরা কিছু কৌশল নিয়েছি। আমাদের আগে ঘটনাস্থলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো দল পৌঁছেনি। দু’জন কনস্টেবল আহত হওয়ার পর তাদের কাছে থাকা শটগান নিয়ে কিছুক্ষণ পরপরই গুলি করতে থাকি। যদিও আমার কাছে পিস্তল ছিল। শটগানের গুলি ছুড়লে বিকট শব্দ হয়। তাই বন্দুকধারীদের আতঙ্কিত করতে শটগানের গুলি ছুড়ি। যাতে তাড়াতাড়ি গুলি শেষ হয়ে না যায় তাই কিছু সময় পরপর থেমে থেমে গুলি করেছি। পুলিশের অন্য টিম আসার পর ফারুকসহ আহত অন্যদের হাসপাতালে নেওয়া হয়।

এ সময় রেস্তোরার বাইরে একটি প্রাডো গাড়ি দাঁড়ানো অবস্থায় ছিল উল্লেখ করে ফারুক বলেন, সম্ভবত জঙ্গিরা ওই গাড়ি দিয়ে পালিয়ে যেত। টহল টিমের প্রতিরোধের কারণে তারা পালাতে পারেনি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা জেলার এডিশনাল ডিআইজি হাবিবুর রহমান বলেন, মূলত রেস্টুরেন্টের পাশের বাড়ির এক বাসিন্দা ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজিকে ফোন করে গোলাগুলির ঘটনাটি জানান। এরপর তিনি সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের অবগত করেন। তবে দ্রুত টহল টিমের সদস্য ফারুক সেখানে না পৌঁছলে উগ্রপন্থিরা পালিয়ে যেত।

উল্লেখ্য, শুক্রবার হলি আর্টিসান বেকারি নামের রেস্টুরেন্টে বন্দুকধারীরা হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জিম্মিকে হত্যা করে। সন্ত্রাসীদের ছোড়া গ্রেনেডে প্রাণ যায় ডিবির এসি রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন খানের।

পরে শনিবার সকালে কমান্ডো অভিযান চালিয়ে জিম্মি সঙ্কটের অবসানের পর দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়, সন্দেহভাজন ছয় হামলাকারী নিহত হয়েছে এবং একজন ধরা পড়েছে। অবশ্য নিহত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনকে পরে হামলাকারী হিসেবে সনাক্ত করা হয়।

শনিবার সকালে উদ্ধার ১৩ জনসহ ২৭ জনকে নিয়ে যাওয়া হয় গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে। পরে তাদের বক্তব্য শুনে যাচাই-বাছাই করে অনেককে ছেড়ে দেয়া হয়। আবার কেউ কেউ এখনো আটক রয়েছেন।
৬ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে