নিউজ ডেস্ক : গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলাকারীদের হাতে নিহত ইশরাত আখন্দ প্রসঙ্গে খ্যাতিমান শিল্পী শান্তনু বিশ্বাস তার ফেসবুকে 'নও কাছে নও দূরে, কেউ কি বেঁধেছে সুর ভুল করে' শিরোনামে 'প্রবঞ্চনা' গানটি শেয়ার করেছেন। যে গানে মডেল হয়েছিলেন গুলশান রেস্টুরেন্টে নিহত ইশরাত।
তাতে শিল্পী শান্তনু লিখেছেন, ‘আতিথেয়তায় অতুলনিয়া ইশরাত। আমাকে দুবার নিজ হাতে নানা পদ রান্না করে খাইয়েছে। শুধু আমাকে কেন, পড়ে শুনলাম কাকে নয়। বুদ্ধিমতী অথচ প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা। আপন বলেই শুধু আপন নয়, শক্ত করে সেই আপনত্বকে বাঁধবার ঐশ্বর্য ছিল তার। ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে গান গাওয়ার আমন্ত্রণ। অনেকের মাঝে সেও এসে বসেছে সাদা কালো শাড়ি পরে’।
শান্তনু লিখেছেন, ‘আমার গান ভীষণ ভালবাসত, ওর ফ্ল্যাটে গান গেয়েছি অনেক, আমার সিডি বাজিয়ে গান শুনতে শুনতে গলায় আঙুল বুলিয়ে বলতো “সত্যি, awesome voice’। আমাকে নিয়ে ঢাকায় একটা গানের অনুষ্ঠান করবে, অন্যরকম একটা অনুষ্ঠান, সে হবে এ্যঙ্কর।
তিনি লিখেছেন, বলতাম তুমি যদি এ্যঙ্কর হও আমার গান আর শ্রোতারা শুনতে চাইবে না, চাইবে তোমাকে বারবার দেখতে। হো হো হাসিতে ভরে উঠতো ঘর।একদিন বললো, তখন ‘খড়কুটো’ এ্যালবামের ভিডিওগুলো এক এক করে করছি, “আপনার গান দেখবেন বাঁচবে অনেকদিন, মানে আমার এই রকম মনে হয়, আমাদের কি আর মনে রাখবে, কিছুই তো করতে পারলাম না, মরলেই ঠুস’।
শান্তনু লিখেছেন, বললাম তোমাকে তরুণ শিল্পীরা মনে রাখবে, মনে রাখবে প্রতিষ্ঠিত ছবি আঁকিয়েরাও। “শান্তনুদা আপনার একটা গানে আমি থাকতে চাই, গানটি আমার খুব খুবই প্রিয়, দেবেন”। আমি বললাম দেব মানে সেতো আমার গানের জন্য বড় পাওনা, তোমার মত মডেল এই শিল্পী কোথায় পাবে। বললো “প্রবঞ্চনা” গানটিতে থাকবে, স্ক্রিপ্ট করবে সে, বান্টি শুধু শুট করবে। বললাম তথাস্ত। আমার সেই গান ইশরাতের উপস্থিতিতে দুর্লভ মাত্রা পেল, ধ্বনি পেল দৃশ্যের সুষমা।
তিনি লিখেছেন, মৃত্যু অনিবার্য, সে তো আমরা জানি। কিন্তু এমন আকস্মিক ওকে হারাবো, এতো দুঃস্বপ্নেও ছিল না। আর এমন নির্দয় হত্যা। আহা, কেন... সে কি প্রতিবাদ করেছিল সেই ছোকরাদের মুখের উপর কেন আমাকে প্রমাণ দিতে হবে আমি কোন ধর্মের, বা কেন সে হিজাব পরেনি। যদি সে বিদেশি বন্ধু নিয়ে যায়, সে বন্ধুর দায় তো তারও। জীবন তো জীবনই, ধর্ম দিয়ে কি জীবনকে আলাদা করা যায়। সেই কথা হয়তো বলতে গিয়েছিল এবং তাই নির্মম ভাবে রক্তাক্ত হতে হতে নিথর হয়ে গিয়েছিল মুখর মুখরিত বন্ধু আমার...... ইশরাত।
উল্লেখ্য, শুক্রবার গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের ওই রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পুলিশের গোলাগুলির ঘটনায় ডিবির সহকারী (এসি) রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন নিহত হন।
হামলাকারীরা রাতেই দেশি-বিদেশিসহ ২০ জনকে গলা কেটে হত্যা করে। এদের একজন ইশরাত আখন্দ। শনিবার সকালে রেস্টুরেন্টটিতে কমান্ডো অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ৬ হামলাকারী নিহত হয় বলে আইএসপিআইআরের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
আর্টিজানের মালিকের দাবি, ৬ জনের একজন সাইফুল চৌধুরী। তিনি আর্টিজানের কুক ছিলেন। এরই মধ্যে বাকি ৫ হামলাকারীর পরিচয় প্রকাশিত হয়েছে।
তারা হলেন নিব্রাস ইসলাম, রোহান ইমতিয়াজ, মীর সামিহ মোবাশ্বির, খায়রুল ইসলাম পায়েল এবং শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল। আত্মীয় ও পরিচিতজনরা তাদের ছবি দেখে শনাক্ত করেন।
৫ হামলাকারীর প্রত্যেকেই বেশ কিছুদিন আগে বাসা ছেড়ে হঠাৎ উধাও হয়ে যায়। এদের তিনজন রাজধানীর বিভিন্ন নামিদামি স্কুল-কলেজে পড়েছে বলে তাদেরই বন্ধুরা দাবি করেছে। এদের মধ্যে দুজন মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতো।
৬ জুলাই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম