শনিবার, ০৯ জুলাই, ২০১৬, ১১:২৬:৫৬

ঢাকার পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে কানাডা: সিবিসি নিউজ

ঢাকার পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে কানাডা: সিবিসি নিউজ

নিউজ ডেস্ক : সন্ত্রাসী হামলার পর পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে কানাডা। অটোয়ায় বৈশ্বিক সম্পর্ক বিষয়ক মিডিয়া রিলেশনস অফিসার রাচনা মিশ্র এ কথা বলেছেন। গত শুক্রবার আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর সেখান থেকে কর্তৃপক্ষ উদ্ধার করেছে ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোর ছাত্র তাহমিদ হাসিব খান (২২)কে। এর পর পরই তাকে আটক করা হয়েছে সন্দেহজনকভাবে।

ওদিকে তার পরিবার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরা তাকে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এমন আহ্বানের প্রেক্ষিতে কানাডার সিবিসি নিউজ যোগাযোগ করে রাসনা মিশ্রের সঙ্গে। জবাবে তিনি বলেন, গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা ও ঢাকায় কানাডিয়ান হাই কমিশনের কনসুলেট কর্মর্কাদের মতে, ঢাকা হামলায় কোন কানাডিয় নাগরিক আক্রান্ত বা আটক হয়েছেন- এমন কোন রিপোর্ট নেই তাদের কাছে। কারো স্থায়ী বসবাসের অনুমতি থাকা মানে কানাডার নাগরিকত্ব নয়।

তিনি বলেন, ঢাকা হামলার শিকার ব্যক্তি, তাদের পরিবার ও বন্ধুদের প্রতি আমাদের প্রার্থনা থাকবে। ঢাকায় সন্ত্রাসী হামলার ফলে বাংলাদেশী মানুষের পাশে আছে কানাডা। তিনি এ সময় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আমরা পরিস্থিতির দিকে অব্যাহতভাবে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করছি।

ওদিকে আটক তাহমিদের ভাই তালহা রহিম খান সংক্ষিপ্ত একটি সাক্ষাতকার দিয়েছেন সিবিসি নিউজকে। তিনি বসবাস করেন টরন্টোতে। বলেছেন, তার ভাই তাহমিদ কানাডার পারমানেন্ট রেসিডেন্ট। পিতামাতার সঙ্গে ২০০৪ সালে তালহা কানাডায় চলে যান। তাহমিদ ২০১২ সালে ভর্তি হয় ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোতে। তালহা বলেন, তার ভাই তাহমিদের মৃগীরোগ আছে।

তার মতে, তাহমিদ সন্ত্রাসী হামলার দিন হলি আর্টিজান রেস্তোরায় গিয়েছিছল তার দু’জন ববন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাত করতে। ঠিক তখনই সন্ত্রাসীরা সেখানে নির্মম হামলা চালায়। সবাইকে জিম্মি করে। হত্যা করে ২০ জন জিম্মি ও ২ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে। এ হামলার দায় স্বীকার করেছে আইসিস (বা আইএস)। তবে সরকার তা মানতে রাজি নয়। তাদের বক্তব্য, দেশের ভিতর বেড়ে ওঠা জঙ্গিরাই এ হামলা করেছে।

তালহা বলেন, সবার যাতে ভাল হয় আমরা সে জন্য প্রার্থনা করছি। আমাদের কাছে বিষয়টি আবেগপূর্ণ। আমরা উদ্বিগ্নও। তবে সুষ্ঠু বিচারের প্রতি আমাদের আস্থা আছে। তিনি বলেন, তাহমিদের যে মৃগীরোগ আছে তা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ অবগত। গত রোববার তাহমিদের সঙ্গে কথা বলেছেন তার পিতামাতা। তবে তাকে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে তাদের কোন ধারণা নেই। এ বিষয়ে তারা ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোকে অবহিত করেছে। ইউনিভার্সিটি নিশ্চিত করেছে তাহমিদ তাদের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র।

তালহা বলেন, পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছে। তালহার কাজিন ও ইউনিভার্সিটি অব মেমফিসে ফিন্যান্স নিয়ে পিএইচডি করছেন রাশিক ইরতিসাম। তিনি বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন।

রাশিক বলেন, তাহমিদকে ছেড়ে দেয়া উচিত। তার বিরুদ্ধে মামলায় পুলিশ যাতে পক্ষপাতিত্ব না করে আমরা তা-ই চাই। আমরা আরও চাই তাকে তার পরিবারের কাছে ফিরে যেতে দেয়া হোক। এ জন্য মঙ্গলবার তিনি ফেসবুকে ‘ফ্রি তাহমিদ’ নামে একটি নতুন পেজ সৃষ্টি করেছেন। এতে তিনি বলেছেন, এখন তাকে নিরাপদে ফিরে যেতে দিলেই তার মায়ের কান্না থামবে। তিনি এখন নিজেকে অভিসম্পাত দিচ্ছেন। বলছেন, ছেলেকে দেশে ফেরত যেতে দেয়ার জন্য তিনি দায়ী।

ফেসবুকের মাধ্যমে সিবিসি নিউজকে একটি সাক্ষাতকার দিয়েছেন ইরতিসাম। তিনি বলেছেন, তাহমিদ খান গ্লোবাল হেলথ নিয়ে পড়াশোনা করছিল ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোতে। কানাডা থেকে তার সরাসরি নেপাল যাওয়ার কথা ছিল ইউনিসেফের অধীনে ইন্টার্ন করার জন্য। কিন্তু সে পরিকল্পনা পাল্টে ফেলে। তার মা তাকে অনুরোধ করেন পরিবারের বাকি সদস্যদের সঙ্গে ঢাকায় ঈদ করার জন্য। তাই সে ১লা জুলাই ঢাকায় আসে। ৯ই জুলাই তার ফিরে যাওয়ার কথা ছিল।

ইরতিসাম বলেছেন, হামলার রাতে তাহমিদ তার পিতাকে রাত ১০টার দিকে আর্টিজান রেস্তোরাঁর ভিতর থেকে ফোন করে বলে, ‘বাবা, আমি বেঁচে আছি’। ইরতিসাম আরও বলেন, ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোতে বাংলাদেশী স্টুডেন্ট এসোসিয়েশনের একজন সক্রিয় সদস্য ছিল তাহমিদ খান। সেখানে সে নিয়মিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পারফর্ম করতো। বেস গিটারিস্ট ছিল সে। বেশ কয়েকটি নাটকেও অভিনয় করেছে সে। তাহমিদ কানাডায় যায় ২০০৬ সালে। সে খুব উচ্চাকাঙ্খী। কর্মশক্তি সম্পন্ন যুবক। পাবলিক হেলতে সে তার ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে চায়। এ ছাড়া সে উন্নয়নমুলক খাতে কাজ করতে চায়।

ওদিকে ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোর ছাত্র ও তাহমিদের বন্ধু অনীল ওয়াসিফ বলেছেন, বন্ধুকে আটকের খবরে তিনি উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, সময় পেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার পরিবার ও আমরা বন্ধুরা উদ্বেগে ভুগছি যে, যে লোকটি জিম্মিদশা থেকে মাত্র মুক্তি পেয়েছে তাকে কেন এত দীর্ঘ সময় আটকে রাখা হবে। আমরা তাকে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানাই।

ঢাকায় তাহমিদ খানের পারিবারিক বন্ধু সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ বলেছেন, তিনি তাহমিদকে তিন বছর বয়স থেকে চেনেন। আমরা সবাই বিস্মিত। আমরা তাই একটি গ্রুপ সৃষ্টি করেছি যাতে পাবলিক প্রেসার দেয়া যায় তাকে ভিকটিম বানানোর পরিবর্তে সুবিচারের জন্য।

তিনি বলেন, এত বড় একটি ভয়াবহ সহিংস ঘটনার শিকার ব্যক্তিকে কেন এতদিন আটকে রাখা হয়েছে সে বিষয়ে সরকারের পরিষ্কার করা উচিত। কিন্তু এখনও কোন পরিস্কার জবাব মিলছে না। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়, বার্তা সংস্থা এপির রিপোর্ট অনুযায়ী জিম্মিদশা থেকে যে ১৩ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে তার মধ্যে ৫ জন এখনও কর্তৃপক্ষের হেফাজতে আছে। -এমজমিন
০৯ জুলাই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে