নিউজ ডেস্ক : জঙ্গিবাদী সন্ত্রাসীদের একাধিকবার টার্গেটে মিস হলেও এবার আবারো দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় নতুন করে টার্গেট করা হয়েছে বলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ধারণা করছে। নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরিরের ফাইজুল্লাহ ফাহিম গত ১৮ জুন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ার আগে পুলিশকে জানিয়েছিলেন তাদের পরবর্তী টার্গেট বরিশাল।
ফাহিম মাদারীপুরের শিক্ষক হত্যার পরিকল্পনা করেছিল বরিশালের এক আইনজীবীর চেম্বারে বসে। অদ্যাবধি সেই আইনজীবীকে চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। বরং উল্টো জঙ্গিরা ভোলা ও বরগুনায় সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের উপাসনালয়গুলোতে হামলার হুমকি দিয়েছে। ভোলা, বরগুনাসহ এ বিভাগের যে কোনো স্থানে জঙ্গি হামলা মোকাবেলায় সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এমন দাবি করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
ভোলা সদরের বাপ্তা ইউনিয়নের মহাপ্রভুর মন্দিরে চিঠি পাঠিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করেছেন মন্দির কমিটির সদস্য নীহার কুমার মজুমদার। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মন্দিরের প্রণামী বাক্স খোলার পর একটি হাতে লেখা চিঠি পাওয়া যায়। এতে লেখা আছে, সাবধান থেকে লাভ নেই। আপনাদের জবাই করে হত্যা করা হবে। এ মন্দিরে পূজা-অর্চনার কাজ করেন পুরোহিত জগদানন্দ ব্রহ্মচারী। এই ঘটনার পর তিনি চরম নিরাপত্তাহীনতার মাঝে আতঙ্কে রয়েছেন।
ভোলা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর খায়রুল কবির জানান- মন্দিরে পুলিশ পাঠিয়ে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভোলার আরো বেশ কিছু মন্দিরে হাতে লেখা চিঠি পাঠিয়ে প্রায় একই ধরনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এমন একটি চিঠিতে লেখা রয়েছে, ‘৭৮৬, আল্লাহু আকবার। সাবধান থেকে কি করবি? প্রাণে বাঁচতে পারবি না তোরাও। তোরাও মরবি। জবাই করবো জবাই। থাকবো মোরা ইসলাম।’এতে আরো লেখা আছে, ‘স্ট্রাইক দ্য আয়রন হোয়াইল ইট ইজ হট (strike the irone while it is hot), মৃত্যু অনিবার্য, আলহামদুলিল্লাহ’। এমন চিঠি পাওয়ার পর অনেক মন্দিরের কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখা হয়েছে বলেও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবর এসেছে।
শনিবার দুপুরে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ভোলার পুলিশ সুপার মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। পাঁচ দিন আগে একটি মন্দিরে চিঠি এসেছিলো, ওই চিঠিতে সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়নি। ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা বন্ধেরও কোনো কথা বলা হয়নি।’
এদিকে বরগুনা পৌর শহরের কড়ইতলা কালিবাড়ি এলাকায় রাধা গোবিন্দ মন্দিরে চিঠি দিয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছে ‘পুরোহিত হত্যা সংগঠন’ নামের এক সংগঠন।
শনিবার সকালে মন্দিরের ভিতরে চিঠিটি পরে থাকতে দেখেন পুরোহিত রাম প্রসাদ চক্রবর্তী (সঞ্জয়)। চিঠির বিষয়টি কাউকে জানালে পুরোহিতকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যার আল্টিমেটাম লিখে দেওয়া হয়েছে। এ চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘পুরোহিত তোর মৃত্যু আমাদের হাতে। তোর মাথা নিয়ে ফালাবো এই আমাদের ইচ্ছা। আমরা এখন কিলিং মিশনে আছি বরগুনা জেলায়। কাউকে কিছু বললে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তোর মৃত্যু হবে।’
চিঠি পাওয়ার পর প্রথমে হুমকিদাতাদের ভয়ে বিষয়টি চেপে যেতে চান পুরোহিত। পরবর্তীতে স্থানীয়দের পরামর্শে তিনি এ ঘটনা বরগুনা সদর থানা ও পুলিশ সুপার বিজয় বসাককে অবহিত করেন। পরে একটি সাধারণ ডায়েরিও করা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াজ হোসেন।
পুরোহিত রাম প্রসাদ চক্রবর্তী সাংবাদিকদের বলেন, ‘চিঠি পাওয়ার পর থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন তিনি। দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে মন্দিরের পাশেই থাকেন রাম প্রসাদ। হুমকির খবর পেয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু মন্দির পরিদর্শন করেন। তিনি স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়কে নির্ভয়ে থাকতে বলেছেন।
বরগুনার পুলিশ সুপার বিজয় বসাক বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমি পুরোহিত ও মন্দির এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছি। বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।’ পুলিশ বিজয় বসাক বলেন, ‘এমন খবর আমি শুনেছি। তবে অনেক মন্দিরে নয়। কালি বাড়ি মন্দিরসহ দু’টি মন্দিরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সব জায়গাতেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
এদিকে বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি হুমায়ন কবির (পিপিএম) জানান- জঙ্গি হামলা মোকাবেলায় সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশ সুপারদের।
বিএমপি (বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ) মুখপাত্র এসি ফরহাদ সরদার জানান- নগরীর সকল প্রবেশদ্বারে চেকপোস্ট বসানোর পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে যাত্রীদের দেহ তল্লাশি করা হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় পোশাকে এবং সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। -ইত্তেফাক
১০ জুলাই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম