রবিবার, ১০ জুলাই, ২০১৬, ০১:১০:৪১

জঙ্গি প্রতিরোধ সেল তৈরির নির্দেশনা পুলিশ সদর দপ্তরের!

জঙ্গি প্রতিরোধ সেল তৈরির নির্দেশনা পুলিশ সদর দপ্তরের!

নিউজ ডেস্ক : পুলিশের সব ইউনিটে জঙ্গি প্রতিরোধ সেল তৈরি করতে পুলিশ সদর দপ্তর নির্দেশনা দিয়েছে বলে জানা গেছে। এসব সেল জঙ্গি সংগঠনগুলোর কার্যক্রম মনিটর করে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করবে।

গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সাম্প্রতিক দুটি ঘটনার সঙ্গে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ-জেএমবি’র একটি অংশ জড়িত। এই অংশটি ভয়াবহ হিংস্র। তারা নিজেদের অবস্থান জানান দেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। এই গ্রুপটিতে শিক্ষিত অনেক তরুণ সম্পৃক্ত হয়েছে। এই গ্রুপের নেতাদের ধরতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে গোয়েন্দারা।

পুলিশের আইজিপি একেএম শহীদুল হকও বলেছেন, ‘গুলশানে যারা হামলা করেছে, তারাই শোলাকিয়ায় হামলা চালিয়েছে, তারা জেএমবি জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্য।’ তিনি বলেন, ‘শোলাকিয়ায় হামলায় যারা আটক হয়েছে, তারা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে যে গুলশানে হামলাকারীদের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে।’

সূত্র জানায়, ধারাবাহিক জঙ্গি হামলা ঠেকাতে সাঁড়াশি অভিযানের পরিবর্তে গোপনীয় তৎপরতা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশের সব ইউনিটে জঙ্গি প্রতিরোধ সেল তৈরি করার নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। এসব সেল জঙ্গি সংগঠনগুলোর কার্যক্রম মনিটর করে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করবে। পুলিশ সদর দপ্তরের এলআইসি শাখার তত্ত্বাবধানে গোয়েন্দা প্রতিবেদনগুলো সমন্বয় করে অভিযান চালানো হবে।

একই সঙ্গে পুলিশের নবগঠিত কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটকে আরো বেশি শক্তিশালী ও প্রযুক্তিবান্ধব করে গড়ে তোলা হচ্ছে। পুলিশের বিশেষ শাখা এসবি ও এলিট ফোর্স র‌্যাবকে জঙ্গি সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করার জন্য বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এর বাইরে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা- এনএসআইয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে জঙ্গি প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জঙ্গিদের জিম্মি আক্রমণ প্রতিরোধ করার কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না।

এছাড়া, বিশেষায়িত ইউনিট ছাড়া সারা দেশে থানা-পুলিশের জঙ্গি প্রতিরোধ সম্পর্কিত কোনো ধারণাও নেই। এ কারণে জঙ্গিদের তৎপরতার তথ্য মাঠ পর্যায় থেকে আসে কম। ক্রমবর্ধমান জঙ্গি হামলার কারণে পুলিশের সকল ইউনিটকে জঙ্গি প্রতিরোধ সম্পর্কিত কর্ম-কৌশল সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করা হচ্ছে।

ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘আমাদের পুলিশ আগে চোর, ডাকাত, ছিনতাইকারী ধরার জন্য কাজ করতো। ওয়ে অফ অ্যাকশন, ট্রেনিং, পারসেপশন এক ধরনের ছিল। এখন ট্রেনিংয়ের প্যাটার্ন, পারসেপশনে চেঞ্জ আনতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের ওয়ে অফ অ্যাকশন, মুড অফ অ্যাকশন পরিবর্তন করে ফেলবো। এখন যেই ধরনের অপরাধ হচ্ছে তা দমনে ভেতরে ভেতরে আমরা কাজ করছি।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে এখন দুই আদর্শের জঙ্গি গ্রুপ তৎপর রয়েছে। এর একটি ইসলামিক স্টেট বা আইএসপন্থি হিসেবে পরিচিত। আর আরেকটি গ্রুপ হলো আল কায়েদাপন্থি। জেএমবি’র ভগ্নাংশ দলটি আইএসকে তাদের আদর্শ মনে করে। তারা অনেক আগে থেকেই আইএসের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করার চেষ্টা করে যাচ্ছিল।

গুলশানের ঘটনার পর বোঝা গেছে যে, তারা ইতিমধ্যে আইএসের সঙ্গে শক্ত যোগাযোগ স্থাপন করে ফেলেছে। সূত্র জানায়, দুটি জঙ্গি গ্রুপই স্লিপার সেল পদ্ধতিতে তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। একারণে জঙ্গি গ্রুপটির টপ লিডার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারছে না গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, জেএমবি এবং আনসার আল ইসলামের যে দুটি গ্রুপ বর্তমানে সক্রিয় রয়েছে তারা খুবই দক্ষ। তারা প্রযুক্তি সম্পর্কে যেমন ভালো জানে তেমনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কৌশল সম্পর্কেও অবগত। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে সক্ষম। একারণে তাদের ধরতে পুলিশের বিকল্প পথ ভাবতে হবে। প্রয়োজনে আন্ডার কাভার বা স্টিং অপারেশন চালাতে হবে।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘জঙ্গি প্রতিরোধে আমাদের কাজ করতে হবে ঠাণ্ডা মাথায়। তারা যেমন ‘কুল’ হয়ে কাজ করে, আমাদের তার চেয়েও বেশি ‘কুল’ হয়ে কাজ করতে হবে। ধূমধাম অভিযান চালিয়ে সফলতা হবে না। তারা যে আদর্শ লালন করে, যাদের অনুসরণ করে তার ভেতরে ঢুকতে হবে। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট সেভাবেই কাজ শুরু করেছে। -এমজমিন
১০ জুলাই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে