রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১২:১০:১৭

বাংলাদেশি হাজি বেলালের করুণ কাহিনী

বাংলাদেশি হাজি বেলালের করুণ কাহিনী

ঢাকা : একটানা বিশ বছর সৌদি আরবে অবস্থান করছেন বাংলাদেশি মোহাম্মাদ বেলাল। এবার স্ত্রীকে হজ করতে নিয়েছিলেন তিনি। দুই দশক পর প্রিয়তম স্ত্রীকে কাছে পেয়েছিলেন বেলাল। তবে তা মাত্র কয়েক দিনের জন্য। এরপর তিনি স্ত্রীকে হারিয়ে ফেলেন ভিড়ের মধ্যে।

মিনার আল-জিসর হাসপাতালের সামনে নির্বাক হয়ে বসে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়েছিলেন বাংলাদেশি সেই হাজি মোহাম্মদ বেলাল। যিনি খুঁজে ফিরছিলেন তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে। হাত-পা ছড়িয়ে  তার বসার করুণ ভঙ্গিই আন্তার্জাতিক মিডিয়ার দৃষ্টি কাড়েন সহজেই। তবে বেলাল ফিরে পেয়েছিলেন তার স্ত্রীকে। জীবত নয়। তিনি উপহার পেয়েছেন স্ত্রীর নিথর দেহ।

আরবি পত্রিকা আল হায়াতের বরাত দিয়ে বাংলাদেশি এই হাজিকে নিয়ে প্রতিবেদন করেছে সৌদি গেজেট পত্রিকা। ওই পত্রিকার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বেলাল বলেন, “সে আমার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছে, আর কোনো দিন আমাকে ছেড়ে যাবে না, সব সময় পাশে থাকবে। কিন্তু সে চিরদিনের জন্য চলে গেল।”

বেলাল বলেন, “আমি তার (স্ত্রীর) হজের জন্য ২০ বছর ধরে টাকা জমিয়েছি। দীর্ঘদিন আমি তার কাছ থেকে দূরে রয়েছি। অবশেষে সে এলো, কিন্তু আমি খুব অল্প সময়ের মধ্যে তাকে হারালাম।”

তিনি বলেন, “হজের কার্যক্রম শেষ করার আগেই আমার স্ত্রী মারা গেল। আমার চোখের সামনে সে মারা গেল। সে আর কখনও তার তিন সন্তানকে দেখতে আসবে না।”

বেলাল জানান, তার স্ত্রী হজে আসতে পেরে খুবই খুশি হয়েছিলেন।

ওই দিনের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বেলাল বলেন, সকাল সাড়ে ৭টার (বৃহস্পতিবার) দিকে আমরা স্বামী-স্ত্রী একই সঙ্গে জামারতে পাথর নিক্ষেপ করে ফিরছিলাম। আমরা ২০৪ নম্বর রাস্তায় প্রবেশ করেছি, তখন জনস্রোত জামারাতের দিকে যাচ্ছে। আমরা সেখান থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করি, কিন্তু আমরা দুইজনই নিচে পড়ে যাই। আরও অনেক হাজি আমাদের ওপর পড়ে যায়। কিন্তু আমি উঠতে সক্ষম হই।

তিনি বলেন, আমি চিৎকার করে কাঁদছি আমার স্ত্রীকে বাঁচান। কিন্তু কেউ আমার কথা শুনছে না, প্রত্যেকে নিজেকে বাঁচানো নিয়ে ব্যস্ত। আমি আমার স্ত্রীকে টেনে তোলার চেষ্টা করি, কিন্তু লাশের স্তুপ থেকে তাকে তুলে আনতে পারিনি। আমি দেখেছি, তার বিস্তৃত চোখ দুটো আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে আর তার আঙ্গুল উপরের দিকে উঠানো। আমাকে কিংবা সন্তানকে বিদায় জানানোর আগেই সে মারা গেল।

এখন বেলালের সান্ত্বনা একটাই, তার স্ত্রী বিশ্বের সবচেয়ে পবিত্র স্থানে সমাহিত হবে এবং সে তার সৃষ্টিকর্তার (আল্লাহ) কাছে একজন শহীদ হিসেবে সাক্ষাৎ করবে।

প্রসঙ্গত, ২৫ বছর আগে সৌদি আরব যান বেলাল। সেখানকার ধাহারন আল-জানুব শহরের একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করেন তিনি। তাদের তিন সন্তান রয়েছে।
২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে