ঢাকা : ১ মার্চের পর থেকে আবির রহমানের সঙ্গে তার পরিবারের কোনো যোগাযোগ ছিল না। গণমাধ্যমে ছবি দেখে তার পরিবারের লোকজন জানতে পারেন, শোলাকিয়ায় মারা গেছে সে।
আবিরের বাবা সিরাজুল ইসলাম বলেন, এখন বলতে চাই না ও আমাদের পরিবারের কেউ। যে ঈদের দিনের মতো খুশির দিনে মানুষ হত্যা করে, সে কেমন মুসলমান! তার তো ইসলামী রীতি অনুযায়ী দাফন-কাফনের দরকার নেই। আমরা তার লাশও নেব না।
তিনি বলেন, সে আমাদের কেউ না। তার পরিচয়, সে শুধুই একজন জঙ্গি। আমি কোনো জঙ্গির বাবা হতে চাই না।
কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের দিনে হামলাকারী ও পরে নিহত হয় আবির রহমান। শনিবার বিকেলে একটি গণমাধ্যমের কাছে এভাবেই কথা বলেন আবিরের বাবা সিরাজুল ইসলাম।
আবিরদের বাসা ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়। তার বাবা সিরাজুল ইসলাম পল্লী বিদ্যুতের একজন ঠিকাদার। চার ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট আবির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথে বিবিএ পড়ত।
দেড় বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই বসুন্ধরার বাসায় ওঠেন সিরাজুল ইসলাম। তার বড় ছেলে ব্যাংকে চাকরি করেন। অন্য দুই ছেলে অস্ট্রেলিয়া থাকেন। আবির 'ও' লেভেল ও 'এ' লেভেল করে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল টিউটোরিয়াল থেকে। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ত্রিবিদ্যা গ্রামে।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, ছেলেবেলা থেকেই আবির চুপচাপ ও বিনয়ী স্বভাবের ছিল। ছোটবেলা থেকেই সে নামাজ পড়ত। হঠাৎ গত ১ মার্চ সে বলে, পড়াশোনা করতে মালয়েশিয়ায় যাব।
আমি বলি, তোমার দুই ভাই অস্ট্রেলিয়ায় থাকে, পড়াশোনা শেষ করে অস্ট্রেলিয়ায় যাও। কিন্তু সে মানতে চায়নি। এ নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয়।
ওইদিন সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। আমরা ধরে নিয়েছিলাম সে হয়তো মালয়েশিয়ায় চলে গেছে। একদিন সে ঠিকই বাড়ি ফিরবে। কিন্তু সে জঙ্গি হয়ে হলো লাশ।
ছেলের লাশ আনার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা তার লাশ নেব না। একজন প্রকৃত মুসলমানের পক্ষে এমন হত্যাযজ্ঞ চালানো সম্ভব নয়।
গুলশানের ঘটনার উদাহরণ দিয়ে আবিরের বাবা বলেন, কত মায়ের বুক খালি করল ওরা। ওরা মানুষ নামের অমানুষ। ওদের জন্য কোনো দরদ থাকার দরকার নেই।
তিনি বলেন, আর কোনো বাবার যেন এমন পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়। সব বাবা-মায়ের কাছে আহ্বান, সন্তানদের খোঁজ নিন। আপনার সন্তান কোথায় যায়, কী করে খোঁজ নিন।
ছেলের এমন করুণ পরিণতিতে তিনি এতটাই ভেঙে পড়েন যে, বেশিক্ষণ কথা বলতে পারেননি। তিনি বলেন, যে ছেলে তাকে নিয়ে নামাজ পড়তে যেত, বাসায় থাকলে বাবাকে না নিয়ে খেতে বসত না- তার যে এমনটা হবে ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করতে পারেননি তিনি।
ঘটনার পর থেকে আবিরের মা শয্যাশায়ী। কিছুক্ষণ পর পর ছেলের নাম ধরে ডুকরে কাঁদছেন। ছেলেকে এনে দেয়ার আকুতি জানাচ্ছেন বারবার।
ছেলে এতদিন নিখোঁজ থাকলেও ঘটনার আগেরদিন ভাটারা থানায় জিডি করেছিলেন সিরাজুল ইসলাম। তিনি আঁচ করতে পেরেছিলেন তার ছেলে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যেতে পারে। কারণ কিছু ইসলামী বই পাওয়া যায় আবিরের ঘরে।
১০ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম