সোমবার, ১১ জুলাই, ২০১৬, ০১:৪৭:০৭

‘তখন থেকেই ধীরে ধীরে সামাজিক মাধ্যমে নিজেকে গুটিয়ে নেন নিবরাস’

‘তখন থেকেই ধীরে ধীরে সামাজিক মাধ্যমে নিজেকে গুটিয়ে নেন নিবরাস’

নিউজ ডেস্ক : সচরাচর ছাত্ররা যেমন হয়ে থাকে পরিচিতজনদের কাছে তেমনটাই ছিল নিবরাস ইসলাম। আনন্দপ্রেমী। কখনও বা প্রেমে মগ্ন। খেলাধুলায় আগ্রহ, বিশেষ করে ফুটবল। সুদর্শন নিবরাসকে পছন্দ করতো মেয়েরা। ২০১৪’র শেষ পর্যন্ত এভাবেই নিবরাসকে চিনতো পরিচিতজনরা।

মালয়েশিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটির ‘কনফেশন্স’ (স্বীকারোক্তি) ফেসবুক পেজে নিবরাসের রূপমুগ্ধ একজন ওই বছর ১১ই অক্টোবর লিখেছেন, ‘নিবরাস ইসলাম!! তুমি সুন্দর। কিন্তু তোমার দেখা মেলা ভার। কখন তোমাকে দেখতে পাবো, জানিয়ো। তোমার হাসি দেখলে আমার দিনটাই ভালো যায়।’

শুক্রবার রাতে ঢাকার অভিজাত একটি রেস্তোরাঁয় চালানো হামলায় ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নিহত সন্দেহভাজন হামলাকারীর একজন ছিল নিবরাস। ওই হামলায় অন্তত ২০ জন নিহত হয়। বেশির ভাগই বিদেশি। মালয়েশিয়ার পুলিশ জানিয়েছে, কমপক্ষে দু’জন জঙ্গি অস্ট্রেলিয়ার খ্যাতনামা মোনাশ ইউনিভার্সিটির কুয়ালালামপুর ক্যাম্পাসে পড়াশোনা করেছে। তবে তারা নাম জানায়নি।

গুলশান ক্যাফে হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস। যে দেশটি দীর্ঘদিন ধরে ধর্মনিরেপক্ষ আর ইসলামপন্থিদের মধ্যকার রাজনৈতিক উত্তেজনা থেকে সৃষ্ট রাজপথ সহিংসতায় অভ্যস্ত তাদের জন্য এটা উদ্বেগজনক এক ঘটনা। দেশটি এখন অনেক বড় ধরনের একটি হুমকির সম্মুখীন। তদন্তকর্মকর্তরা যখন জঙ্গিদের বিস্তারিত তথ্য জড়ো করছেন তখন বিত্তবান পরিবারের শিক্ষিত একজন তরুণের প্রোফাইল উঠে এসেছে যারা সম্প্রতি উগ্রপন্থি ইসলামের দিকে ঝুঁকে পড়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, একজন ছিল দেশের ক্ষমতাসীন দলের মাঝারি র‌্যাঙ্কের এক নেতার ছেলে। এতে করে দক্ষিণ এশিয়ায় জঙ্গিবাদের ঘাঁটি গড়ে ওঠার পেছনে মূল কারণ হিসেবে দারিদ্র্য আর শিক্ষার অভাব দায়ী বলে যে দীর্ঘদিন লালিত স্বপ্ন রয়েছে তা এখন প্রশ্নের মুখে।

নয়া দিল্লির অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ বিশেষজ্ঞ জয়িতা ভট্টাচার্য বলেন, ‘আগে দেখা যেতো উগ্রপন্থায় দীক্ষিত হওয়া ব্যক্তিরা দরিদ্র আর মাদ্‌রাসা পড়ুয়া। সাম্প্রতিক হামলাকারীরা বিত্তবান আর উদারমনা পরিবার থেকে এসেছে। ঢাকার একজন ডেপুটি পুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমান রয়টার্সকে বলেন, হামলাকারীরা শিক্ষিত ও ধনী ছিল। আর কোনো এক সময়ে তারা ‘মগজধোলাই (ব্রেইনওয়াশ)’-এর শিকার হয়েছে।’

এসব তরুণ কখন উগ্রপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়েছে তা স্পষ্ট নয়। পুলিশ বলছে এদের ৩ জনের বয়স ২২ এর কম। তবে নিবরাস ও অপর সন্দেহভাজন হামলাকারীদের পরিচিতজন ও বন্ধুদের সাক্ষাৎকার এবং তাদের নিজেদের সামাজিক গণমাধ্যম পাতাগুলো পর্যালোচনা করলে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায় কিভাবে তারা পাল্টাতে শুরু করে।

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে নিবরাসকে চিনতো এমন এক ছাত্র পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, জানুয়ারি মাসে নিবরাসের সঙ্গে এক ক্যাফেতে দেখা হয় তার। এ সময় নিবরাস তাকে যেভাবে সালাম (সালামের পুরো অংশ) দিয়েছিল তাতে তিনি আশ্বর্য হন কেননা আগে কখনও এভাবে সালাম দিতো না নিবরাস।

তিনি বলেন, ‘সাধারণত দেখা হলে সে বলতো, সালাম, কি খবর? কিন্তু ওইদিন নিবরাস পূর্ণাঙ্গ সালাম দেয়।  তিনি আরও জানান, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে মাঝে-মধ্যে নামাজ পড়তাম। তবে নামাজের ঘরে নামাজের ওয়াক্তে তাকে কখনও দেখিনি। ’

নর্থ সাউথ থেকে মালয়েশিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন নিবরাস। প্রসঙ্গত, আধুনিক সকল সুবিধাসম্পন্ন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ব্যাচেলর্স কোর্সের বার্ষিক খরচ বাংলাদেশিদের গড় আয়ের তুলনায় প্রায় ৬ গুণ বেশি। প্রায় ৯ হাজার ডলার।

মোনাশে নিবরাসকে চিনতো এমন এক ব্যক্তি পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, ‘ব্যবসা বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রিতে পড়ছিল সে। তার ভাষায়, নিবরাস এমন একজন ছিল যে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে আড্ডা মারতে ভালোবাসতো। ছবি তুলতে পছন্দ করতো সে। বিশেষ করে নিজের। এটা এতোটাই বেশি ছিল যে, বন্ধুরা তাকে এ নিয়ে খ্যাপাতো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ঘেঁটে ধারণা পাওয়া যায় যে, নিবরাস একজন বলিউড অভিনেত্রীর জন্য পাগল ছিল। লিভারপুল ফুটবল দলকে পছন্দ করতো। বন্ধুদের সঙ্গে ক্যাফেতে সেলফি তুলতো। তার একটা গার্লফ্রেন্ডও ছিল। ২০১৪ সালে তার সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যায়।

টুইটারে একসময় নিবরাস ভেঙে যাওয়া এক সম্পর্ক নিয়ে কষ্ট প্রকাশ করে টুইট করে। টুইটে নিবরাস লিখেছিল, ‘তোমার আর আমাকে এখন প্রয়োজন নেই। তার সঙ্গে সুখী হও। সবাই আমার থেকে ভালো। আমাকে খুঁজে পেতে চাইলে তুমি জানো কোথায় পাওয়া যাবে।’

এরপর গতবছরের কোনো এক সময়ে ক্যাম্পাস থেকে বেমালুম গায়েব হয়ে যায় নিবরাস। কেন সে চলে যায় সেটা স্পষ্ট নয়। কিন্তু তাকে জানতো এমন ব্যক্তি বলছেন, তার বন্ধুরা ভেবেছিল মোনাশের অভিজ্ঞতাটা তার হয়তো ভালো লাগেনি। এ কারণে নিজের বাড়ি আর পরিবারের আরও কাছে পড়াশোনা করার সিদ্ধান্ত নেয় সে। ধীরে ধীরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয় নিবরাস।

স্ন্যাপচ্যাট, ফেসবুক ব্যবহার কমিয়ে দেয়। তার ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট এখনও সচল। টুইটারে মাত্র ১০টি অ্যাকাউন্ট ফলো করতো নিবরাস। এর মধ্যে একটি ছিল @শামিউইটনেস। এটা আইএস’র প্রচারণাকারী মেহেদি মাসরুর বিশ্বাসের চালানো একটা টুইটার হ্যান্ডেল। মাসরুর বিশ্বাস গত বছর ভারতের বেঙ্গালুরুতে গ্রেপ্তার হয়।  
বৃটেনের সব থেকে হাই প্রোফাইল ইসলামপন্থি প্রচারক আনজেম চৌধুরীর একটি টুইটে নিবরাসের লাইক দেয়া ছিল।

চার্লি হেবদো রম্য ম্যাগাজিনে হামলার কয়েকদিন পর ২০১৫’র জানুয়ারিতে করা ওই পোস্টে ফ্রান্স ও তার মিত্রদের সমালোচনা করা হয়। এর দু’মাস আগে নিবরাস টুইট করেছিল, ‘চিরদিনের জন্য বিদায়।’ -এমজমিন
১১ জুলাই ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে