মঙ্গলবার, ১২ জুলাই, ২০১৬, ১২:৪৪:০৯

চাপের মুখে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

চাপের মুখে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

শাহনাজ পারভীন: ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলা ও শোলাকিয়ায় ঈদের জামায়াতের কাছে হামলায় বেশ কজন হামলাকারী দেশের নামিদামী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন এমন পরিচয় প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই বেশ চাপের মুখে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি। তাদের ওপর এখন নজরদারির কথাবার্তাও বলছেন অনেকে। মহাখালীতে ব্যস্ত রাস্তার পাশেই ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে রাস্তায় নিয়মিত দেখা মেলে শিক্ষার্থীদের, আশপাশে আড্ডায় ব্যস্ত। গতকাল সোমবারেও সেখানে গিয়ে সেরকমই দেখা গেলো। কিন্তু পরীক্ষা, টার্ম পেপার, আড্ডা, সেলফি তাদের আলাপে এসব ছিলো না। ছিলো গুলশানে জঙ্গি হামলা ও তরুণদের উগ্রপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়ার প্রসঙ্গ।

কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের ছাত্র মোহাম্মদ শাকিলুজ্জামান বলেছেন, হঠাৎ করেই কি যেন এক সন্দেহের তালিকায় পড়ে গেছেন তিনি ও তার সহপাঠীরা। তিনি বলেন, “আমাকে বেশ কয়েকজন বলেছে, এই তোমার চুল বড়, তোমার দাড়ি আছে। তুমি কি কোথাও জয়েন করেছো নাকি। ইয়ার্কি করে হলেও অনেকে এসব বলছে। আর বাসা থেকেও চাপ দেয়া হচ্ছে। কোথায় যাচ্ছি জিজ্ঞেস করছে। আগে এতটা ছিল না।”

তিনি জানান, যারা ক্লাসে কয়েকদিন আসেনি তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা গেলো ঈদের পর সবে ক্লাস শুরু হয়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অনেক কম। সেখানে মূল প্রবেশ পথে নিরাপত্তা রক্ষীদের হাতে ওয়াকি-টকির শব্দ। ব্যস্ত নিরাপত্তা রক্ষীরা আইডি কার্ড ছাড়া কাউকে ঢুকতে দিচ্ছেন না। তল্লাশি করা হচ্ছে সবার ব্যাগ। লম্বা লাইন দিয়ে ঢুকতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। আর সিসিটিভি মনিটরের সামনে ব্যস্ত কর্মীরা।

একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের সাথে যেন ঠিক মেলে না। শিক্ষার্থীরাও অনুভব করছেন বাড়তি চাপ। নাম না প্রকাশের শর্তে একজন শিক্ষার্থী বলেছেন, “স্যাররা আমাদের বলে দিয়েছেন আমরা যেন ফেসবুকে সতর্ক থাকি। অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন দিলে আমরা যেন না ধরি। কোন বিদেশি নম্বর যেন না ধরি।” এই চাপের মূল কারণ গুলশানের রেস্তোরাঁয় বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচাইতে বড় জঙ্গি হামলা। তার এক সপ্তাহের মধ্যে কিশোরগঞ্জে সর্ববৃহৎ ঈদ জামাতের কাছে হামলা।

এই দুটো স্থানেই হামলাকারীদের কয়েকজন দেশের নামী দামী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন এমন পরিচয় প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, স্কলাসটিকা স্কুল এসব নামগুলো অনেকের কাছেই আলাপের বিষয়। মানুষের মুখে মুখে নিবরাস ইসলাম, রোহান ইমতিয়াজ, আবির রহমান, তাহমিদ রহমান এই নামগুলো। সন্দেহের তালিকায় নর্থ সাউথের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিমও। কিন্তু তারা কি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন উগ্রবাদী চিন্তাভাবনায়? এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছেলেমেয়েরা অনেকেই তেমনটা মনে করেন না।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী সামিনা নানজিবা বলেছেন, “দেখা যাচ্ছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে এগুলো ছড়াচ্ছে যা অভিভাবকরা অনেক সময় মনিটর করতে পারেন না যে তাদের ছেলেমেয়েরা কোন ধরনের সাইটে যাচ্ছে। এসব শেখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার দরকার আছে বলে আমার মনে হয় না।” কিন্তু ছেলেমেয়েদের জীবনের নিরাপত্তা,পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি, সহিংসতা, অনিয়ম আর সেশন জট থেকে দূরে রাখতেই ছেলেমেয়েদেরকে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছিলেন উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো।

অনেকে বলেছেন, সেই চাহিদা থেকেই বেসরকারি এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের উৎপত্তি। কিন্তু বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রবাদী চিন্তার নতুন ধারার উৎপত্তিও কি সেখানেই? এই প্রশ্ন করছেন এখন অনেকে। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর আতিকুল ইসলাম বলেছেন, “নিবরাস ইসলাম আমাদের এখানে ২০১২ সাল পর্যন্ত কয়েক সেমিস্টার পড়েছে। শোলাকিয়ার হামলাকারী আবির রহমান মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমাদের এখানে ভর্তি ছিলো। আমরা তা অস্বীকার করতে পারি না। আমরা খুব খারাপ বোধ করি যে কোন কোন সময় তাদের সাথে আমাদের সংশ্লিষ্টতা ছিলো।”

তিনি বলছেন, একজন ছাত্রের উপর পুরো নজরদারি করা তাদের পক্ষে সবসময় সম্ভব হয় না। কারণ তারা খুব কম সময়ই ক্যাম্পাসে কাটান। মি. ইসলাম বলেন, “একজন ছাত্র এখানে কয়েক সেমিস্টারের জন্য সপ্তাহে নয় থেকে বারো ঘণ্টার ক্যাম্পাসে কাটায়। আমরা তখন তাদের প্রফেশনাল হয়ে ওঠার প্রশিক্ষণ দেই। এখানে কাউন্সিলর আছে, কিন্তু আমরা তো কোন অপরাধী হিসেবে সবাইকে সন্দেহ করি না বা সেজন্যে তাদের কাউন্সেলিং করি না। তবে এখন আমরা সেটাও বিবেচনা করছি।”

এই চিন্তা থেকেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন সাবধানতার নানান নোটিস ঝুলছে করিডোরের নোটিশ বোর্ডে। ক্লাস রুমে দেয়া হচ্ছে বিশেষ বার্তা। শিক্ষকদেরও সাবধান করা হয়েছে। ঘটনার ভয়াবহতার বিচারে কোন কিছু তাদের নজর এড়িয়ে গেলো কিনা এখন তার বিচারে বসেছেন দেশের প্রায় সবকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ।-বিবিসি

১২জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে